শিরোনাম
সোমবার, ১৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

এনামুল হক শামীম

অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

আজ ১৭ মে। বাংলাদেশের মানুষের আশার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরার চার দশক আজ। অর্থাৎ আজ থেকে ৪০ বছর আগে বঙ্গবন্ধুবিহীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় আলোর মশাল হাতে কান্ডারি হয়ে এসেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্বেও চার দশক। সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম মেয়াদের পাঁচ বছর এবং টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রায় সাড়ে ১২ বছর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশের এক অনন্য পরিচিতি লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার যোগ্য নেতৃত্ব, দক্ষতা, সততায় আজকের এ অবস্থান।

হেনরি কিসিঞ্জারের সেই ‘বটমলেস বাসকেট’-এর দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলই শুধু নয়, মানবতার অনন্য উদাহরণ। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর একাধিক গণতান্ত্রিক সরকার ও স্বৈরশাসক দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এলেও বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করেনি। নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১) এবং ২০০৮ থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় বিজয়ের ৫০ বছরে অর্থ ও বাণিজ্যের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক মুক্তি, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে উন্নত দেশগুলোকেও টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মাসেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধির অর্থ হলো অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। ১৯৭১ সালে ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ে শুরু করা বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের আগে যেখানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত ৮০ শতাংশ মানুষ, আজ সেই সংখ্যা ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রথম অর্থবছর (১৯৭২-৭৩) দেশের বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫০ বছরের মাথায় এসে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গ্রামাঞ্চলে এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। বার্ষিক মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বশেষ পরিমাণ ২৪ হাজার মেগাওয়াট। খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৪৫১ লাখ টন। স্বাধীনতার আগে এর পরিমাণ ছিল অনেক নিচে। অন্যদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী ৩৪৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় বেড়ে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৮৬ কোটি ডলার। শিক্ষা, গড় আয়ু, আমদানি, রপ্তানি, রিজার্ভ, ডলারের মান, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয়ের মতো প্রতিটি সূচকে এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় অনেক এগিয়ে। অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন ভারত থেকে এগিয়ে। বিস্ময়কর উত্থানের কারণ খুঁজছে ভারতও। তিনি আজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই করোনার মহামারীতেও দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা সচল আছে। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কও রীতিমতো ক্লান্ত। তারা যখন প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছেন তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসীম সাহসিকতা আর মানবিকতা দিয়েই জয় করছেন সবকিছু। করোনাযুদ্ধে একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়কই নন, ইতিহাসে নাম লেখাচ্ছেন যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথা গৌরবে। গত বছর করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে প্রশংসনীয় সফল ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। মানুষের জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের অনেক ধনী দেশগুলোও যখন টিকা পায়নি তখন দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অতি সম্প্রতি ভারত করোনা টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশে সংকট তৈরি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী কয়েক দিন আগে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘যত টাকা লাগুক, টিকা আনবই’। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ নামের ঐতিহ্যবাহী দলটিকে ব্যালট বিপ্লবে ক্ষমতায় এনে প্রচলিত আইনে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছেন। গোটা বিশ্ব তার এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে অভিভূত হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদকে সব কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু করতে তিনি প্রাইম মিনিস্টার আওয়ার্স চালু করে প্রতি সপ্তাহে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনিতে কোনো ভয় -ডর তাকে দমাতে পারে না। তা তিনি ফের প্রমাণ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম তার সাহসী প্রতিবাদী চরিত্র উন্মোচন করে গণতন্ত্র ও ব্যালটের পথে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন। সব বাধা অতিক্রম করে দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ করেছেন এই দেশ ও মানুষের জন্য জীবন দিতেও তিনি কার্পণ্য করবেন না। তিনি সব সময় বলেন, দেশের জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনে তার জীবন উৎসর্গ করবেন। সংগ্রামমুখর জীবনের পরতে পরতে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। আমরা যারা তার কর্মী তাদের জীবনকে তিনি মহিমান্বিত করেছেন। মাইনাস ফর্মুলার ষড়যন্ত্র, কারা নির্যাতন তাকে দমাতে পারেনি। শুধু জনগণের ওপর ভর করা এই সাহসী নেত্রী ফের বিজয়ী হয়ে জনরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এই মানবিক হৃদয়ের অসীম সাহসী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে কাছে থেকে দেখতে দেখতে অভিভূত হতে হয়। মানুষ ও কর্মীর জন্য তার দরদ, গরিবের জন্য ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়, বোঝানো যায় না। তাহাজ্জুদের নামাজ দিয়ে রাত শেষ হয়, ফজরের নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও সংবাদপত্র পড়ে তার দিন শুরু হয়। খাওয়া-দাওয়ায় একেবারেই সাদামাটা। তিনি নিজে রান্না করতে যেমন পছন্দ করেন, তার চেয়ে বেশি আতিথেয়তার সঙ্গে খাওয়াতে পছন্দ করেন। বিশ্বে এমন কজন রাষ্ট্রনায়ক আছেন, যারা নিজ হাতে রান্না করে কর্মী ও সন্তানদের খাওয়ান? সাধারণের মতোই জীবনযাপনে অভ্যস্ত আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গৌরব।

লেখক : উপমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর