সোমবার, ১৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার গুরুত্ব

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার গুরুত্ব

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের এ মহামারীতে এ বছর মাহে রমজানের ৩০টি রোজা আমরা আদায় করতে পেরেছি, সে জন্য মহান আল্লাহতায়ালার লাখো কোটি শুকরিয়া। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত নম্বর ৫৬)। আল্লাহতায়ালার একান্ত ইচ্ছা তাঁর প্রত্যেক বান্দা তাঁরই ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। ইবাদত মূলত দুই প্রকার। ফরজ ইবাদত; যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। নফল ইবাদত; যেমন- নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ, দান-খয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি। মানবজাতি মূলত তখনই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র আল্লাহতায়ালারই উদ্দেশ্যে। সুখে-দুঃখে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁকেই ভালোবাসবে। তাঁরই নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সব সময় ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদত সুসম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতে অধিক মনোযোগী হবে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ রোজা এমন একটি ইবাদত যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজেই দিয়ে থাকেন বলে হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। রমজান চলে যাওয়ার পরও বান্দা যেন সিয়াম সাধনা অব্যাহত রাখেন সে জন্য প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান দিয়েছেন প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)।

ফরজ নামাজের কমতিগুলো পূরণ করতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে, তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে রমজানের পূর্ণতা প্রদান করতে। রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি পাপাচার-কামাচার প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে তাহলে তার রোজার সাওয়াব কমে যায়। আর কমতির সওয়াব পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজাসহ বছরজুড়েই রয়েছে নানা উপলক্ষে নফল রোজা। এ শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করেন তখন তাকে অন্য নেক আমলের তৌফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার লক্ষণও বটে। রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এই রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। জলিলুল কদর সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৮২২)।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন, বেতার, টিভির ইসলামী উপস্থাপক। খতিব, মনিপুর বাইতুল আশরাফ জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর