শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের মাহাত্ম্য

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের মাহাত্ম্য

মুসলিম ইতিহাসে একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ বায়তুল মুকাদ্দাস। এর আরেক নাম মাসজিদুল আকসা। মাসজিদুল আকসা অর্থ দূরবর্তী মসজিদ এবং বায়তুল মুকাদ্দাস অর্থ পবিত্র ঘর। এ মসজিদটি মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান। প্রথম পবিত্র স্থান মাসজিদুল হারাম বা পবিত্র কাবাঘর এবং দ্বিতীয়টি হলো মাসজিদুন নববী। মহানবী (স.) মিরাজ গমনকালে প্রথমে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসায় পৌঁছেন। ওই মসজিদে বহু নবী-রসুল তাঁর পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তিনি তাঁদের ইমামতি করে সাইয়্যেদুল মুরসালিনের উজ্জ্বল ইতিহাস স্থাপন করেন। এ পবিত্র মসজিদ থেকেই রসুলুল্লাহ (সা.) ঊর্ধাকাশে তথা মিরাজ গমন করেছিলেন। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ১। এ বিশ্বে প্রথম নির্মিত মসজিদ বায়তুল্লাহ মক্কা নগরীতে। আর দ্বিতীয় মসজিদটি হলো বায়তুল মুকাদ্দাস জেরুজালেমে। কাবা শরিফ প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পর স্থাপিত হয় মাসজিদুল আকসা। বুখারি। নির্ভরযোগ্য বর্ণনামতে, দুটি পবিত্র ঘরই হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। কাবাঘর হজরত ইবরাহিম (আ.) ও মাসজিদুল আকসা হজরত সুলাইমান (আ.)-এর মাধ্যমে বিশেষভাবে সংস্কার করা হয়। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের সূচনালগ্নে ১৬ বা ১৭ মাস ওই মাসজিদুল আকসার দিকে নামাজ আদায় করেছেন। পরে মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের কিবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়। সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৪। এটি মুসলমানদের প্রথম কিবলা। মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। এক হাদিসের আলোকে ‘এ মসজিদে নামাজ আদায় করলে সাধারণ মসজিদের তুলনায় ৫০০ গুণ অধিক বিনিময় লাভ হবে।’ বাজ্জার, বায়হাকি। উল্লেখ্য, কাবাঘরে নামাজ আদায়ে ১ লাখ গুণ ও মাসজিদুন নববীতে ৫০ হাজার গুণ বেশি বিনিময় লাভ হয়।

এ মসজিদ তিনটি ইসলামের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন। রসুলে করিম (সা.) মক্কার মাসজিদুল হারাম, মদিনার মাসজিদুন নববী ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি। বুখারি, মুসলিম।

বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ ও তার আশপাশ এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। তাঁদের সমাধিস্থল। এ পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সঙ্গে জড়িত নয়। বরং এ নাম সব মুসলমানের ইমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ঐতিহাসিকভাবেই এটি মুসলমানদের পবিত্র স্থান। ১৯৪৮ সালে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয়। ফলে যুগ যুগ ধরে ইসরায়েলি ইহুদি ও ফিলিস্তিনি মুসলমানদের মধ্যে সংঘাত চলেই আসছে। জেরুজালেমে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপন এবং বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে মুসল্লিদের ওপর অমানবিক বর্বর হামলাকে কেন্দ্র করে ১০০ বছরের পুরনো সংকট নতুনভাবে ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নিয়েছে। দুই পক্ষের হামলার দায় কার, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি অবৈধ দখলদারির কারণেই এ সংঘাত চলে আসছে। ইসরায়েল যেহেতু ফিলিস্তিনে দখলদারি ভূমিকায় রয়েছে সেহেতু তাদেরই সমঝোতায় আসতে হবে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা মেনে নিয়ে প্রকৃত শান্তির পথ খুলে দিতে হবে। মুসলমানরা মসজিদটি দ্রুত ফিরে পাক, শান্তিপ্রিয় বিশ্বমানবের এটা একান্ত প্রত্যাশা।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর