শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ইসলাম প্রচারে নীতি ও আদর্শের মূল্যায়ন

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

ইসলাম প্রচারে নীতি ও আদর্শের মূল্যায়ন

ইসলামের পথে আহ্বান করা ইসলামী আদর্শ ও বিধানেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামী দাওয়াত ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলামের সংরক্ষণ, প্রচার-প্রসার এবং ইসলামী সমাজের রূপায়ণ ও অগ্রগতির পদ্ধতি। কোরআন দীনের দাওয়াতকে মুসলমানদের ওপর ফরজ করে দিয়েছে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন তোমরা ন্যায় ও সৎকাজের নির্দেশ কর এবং মন্দকাজ থেকে নিষেধ কর।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০। মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামী সমাজ ও ব্যক্তি তৈরি করাই হবে দাওয়াত ও তাবলিগের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ-প্রেরিত সব নবী-রসুলের কাজও তা-ই ছিল। রসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ সুরা কলম, আয়াত ৪। ইসলামের পথে আহ্বানকারী প্রতিটি লোককে নবী-রসুলের উত্তম আদর্শের ধারক-বাহক হতে হবে। তাদের কথা, কাজ ও কর্মসূচি নবীদের আদর্শের প্রতিচ্ছবি হতে হবে। ইসলামী আদর্শ পরিপন্থী কোনো কাজ তাদের মাধ্যমে কল্পনাও করা যায় না। সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো পদক্ষেপ এবং কোরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত কোনো চরমপন্থা অবলম্বন করা ইসলামের দাবি বা শিক্ষা নয়। আল্লাহ কোরআনে কারিমে বলেন, ‘তোমাদের বানিয়েছি এক মধ্যপন্থি জাতি, যেন তোমরা বিশ্বমানবের পথপ্রদর্শক হতে পার।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৩।

চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ইসলামী দাওয়াত ও মিশনের প্রচার-প্রসার ও অগ্রগতির জন্য ইসলামী আদর্শ এবং নবী-রসুলদের নৈতিক আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই। বিরাজমান পরিস্থিতিতে এ পদ্ধতিই সর্বাপেক্ষা কার্যকর হওয়া সম্ভব। ইসলামী আদর্শ, বিধান, মূল্যবোধ, শ্রেষ্ঠত্ব, বৈশিষ্ট্য ও ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করার উদ্যোগ নেওয়াই ইসলামী দাওয়াতি কার্যক্রমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মহান প্রভু মুসলিম জাতিকে মধ্যপন্থি উম্মত হিসেবে প্রেরণ করেছেন বলে মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন। এ বাক্যটি অত্যন্ত মর্যাদা ও তাৎপর্যের অধিকারী। এর দাবি হলো এ জাতি এমন এক উৎকৃষ্ট এবং উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন আদর্শবান দল হবে, যারা নিজেরা ইনসাফ, ন্যায়নিষ্ঠা ও ভারসাম্য নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আগত সব জাতির মধ্যে যারা কেন্দ্রীয় আসন লাভের যোগ্যতা রাখে, সত্য ও সততার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে যাদের সম্পর্ক হবে সমান এবং কারও সঙ্গেই যাদের কোনো অবৈধ ও অন্যায় আচরণ হবে না। এসব নৈতিক আদর্শের কারণেই উম্মতে মুহাম্মদী অন্যান্য উম্মতের দীনি কার্যক্রমে সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা পাবে। তাই মুসলমান তার প্রতিটি কথা ও কাজ আল্লাহর আদালতে প্রমাণ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। কোনো কাজে বাড়াবাড়ি ও সীমা লঙ্ঘনে উপনীত হবে না।

বিশ্ববরেণ্য আলেম আল্লামা তাকি উসমানি এক আলোচনায় বলেন, ইসলাম প্রচার এবং ভালো কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করার শ্রেষ্ঠ আদর্শ নবী মুসা (আ.)-এর ঘটনা থেকে গ্রহণ করতে পারি। মহান প্রভু হজরত মুসা ও হারুন (আ.)-কে খোদাদ্রোহী ফেরাউনের প্রতি প্রেরণ করেন। তখন তাদের নির্দেশ করেন, ‘তোমরা ফিরাউনের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলিও।’ সুরা তোহা, আয়াত ৪৪। মুফতি শফি (রহ.) এ মর্মে বলেন, আমরা হজরত মুসা (আ.) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সংশোধনকারী নই এবং আমাদের প্রতিপক্ষ ফেরাউন অপেক্ষা বিদ্রোহী নয়। অতএব ইসলাম প্রচার এবং অন্যায় প্রতিরোধে আমাদের ভাষা ও আচরণ কেমন হবে আমরা এ আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর