বুধবার, ২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সুলতানি শাসন

বখতিয়ার খলজির সামরিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে বাংলায় মুসলিম আধিপত্য বিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বখতিয়ার খলজি ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে বিহার জয়ের পর ভারতে মুহাম্মদ ঘুরির প্রতিনিধি কুতুবুদ্দিন আইবকের সঙ্গে বদাউনে গিয়ে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনী আরও শক্তিশালী করে ১২০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে আকস্মিক বাংলা আক্রমণ করে রাজা লক্ষ্মণ সেনের সামরিক রাজধানী নদীয়া অধিকার করেন। এখানে অগাধ ধনসম্পদ, অগণিত পরিচারক-পরিচারিকা ও বহুসংখ্যক হাতি বখতিয়ারের হস্তগত হয়। এরপর তিনি বাংলার ঐতিহ্যবাহী রাজধানী গৌড় দখল করে সেখানে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন এবং প্রায় দুই বছরকাল বিজিত রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো বিন্যাস ও ব্যবস্থাপনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। বখতিয়ার তাঁর রাজ্যে এক ধরনের গোত্রীয় সামন্ততন্ত্রের প্রবর্তন করেন। অধিকৃত এলাকাকে তিনি কয়েকটি প্রশাসনিক ইউনিটে বিভক্ত করে সেগুলোর ভার তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতিদের ওপর অর্পণ করেন। এই প্রশাসনিক ইউনিট ‘ইকতা’ নামে পরিচিত ছিল এবং এ ইকতার শাসনকর্তাকে মুকতা বলা হতো। প্রশাসনিক বিন্যাস ছাড়াও বখতিয়ার বাংলায় মুসলিম সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি নামাজের জন্য মসজিদ, মুসলিম ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের জন্য মাদরাসা এবং ধর্ম প্রচারের সুবিধার্থে সুফিদের জন্য খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর বখতিয়ার তিব্বত অভিযানে বের হন। তিব্বত রওনার আগে বিজিত অঞ্চলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে তাঁর অনুপস্থিতিকালের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ওড়িশা (জাজনগর) থেকে সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তিনি মুহাম্মদ শিরান খলজিকে সীমান্ত এলাকা প্রহরার জন্য একদল সৈন্যসহ বীরভূম জেলার লখনৌতির অভিমুখে প্রেরণ করেন। ত্রিহুত ও অযোধ্যার দিক থেকে আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তিনি ইওজ খলজিকে পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্ব দেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রংপুরের উপকণ্ঠে তিনি আলী মর্দান খলজিকে মোতায়েন করেন। অবশ্য তিব্বত অভিযানে বখতিয়ারের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। ব্যর্থ অভিযান শেষে চরম হতাশাগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থায় দেবকোটে ফিরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন অথবা আলী মর্দান খলজি কর্তৃক নিহত হন।

 

                জাফর খান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর