শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

পরকালের সঞ্চয় জাকাত

মো. আমিনুল ইসলাম

পরকালের সঞ্চয় জাকাত

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম ‘জাকাত’। জাকাত শব্দটি আল কোরআনে এসেছে ৩২ বার আর সালাতের সঙ্গে এসেছে ২৫ বার। সালাত বা নামাজের মাধ্যমে একজন মোমিন যেমন নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তেমনি জাকাতও তার ধনসম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। জাকাত অসহায়, দরিদ্র, অভাবী, অক্ষম, মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম উপকরণ। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, সালাত কায়েম করেছে, জাকাত আদায় করেছে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৭।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘পুব বা পশ্চিমে মুখ ফেরানোই সৎকর্ম নয়, বরং সৎকর্ম হলো কোন ব্যক্তি আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ ও নবীগণের প্রতি ইমান আনবে। আর সম্পদ দান করবে আল্লাহতায়লার ভালোবাসার খাতিরে, নিজ আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত দেবে, ওয়াদা করলে পূর্ণ করবে এবং দরিদ্রতা, অভাব, কষ্টে ধৈর্য ধারণ করবে। তারাই সত্যাশ্রয়ী ও মুত্তাকি।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৭৭।

এ আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মাণ হয় ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে পরিপূর্ণভাবে পালন করে আমাদের আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার জন্য সালাত ও জাকাত আদায় করতে হবে।

‘আট প্রকার লোককে জাকাত দেওয়া যাবে।  ১. ফকির ২. মিসকিন ৩. যারা জাকাত সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ৪. অমুসলিমদের অন্তরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ৫. দাসমুক্ত করার কাজে ৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ শোধ করতে ৭. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীকে ৮. মুসাফিরকে।’ সুরা তওবাহ, আয়াত ৬০। সুরা বাকারার ২৭৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘দান-সদকা তো এমন কিছু গরিব লোকের জন্য যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের নিয়োজিত রাখে এবং নিজেদের রিজিকের জন্য জমিনের বুকে চেষ্টা সাধন করতে পারে না, আত্মসম্মানের জন্য এরা মানুষের কাছে কিছু চায় না বলে মূর্খ লোকেরা এদের মনে করে এরা বুঝি আসলেই সচ্ছল। কিন্তু এদের বাহ্যিক চেহারা দেখেই তুমি এদের সঠিক অবস্থা বুঝে নিতে পার। এরা মানুষের কাছ থেকে আকুতি-মিনতি করে ভিক্ষা করতে পারে না। তোমরা যা কিছুই ব্যয় করবে আল্লাহ তার যথার্থ বিনিময় দেবেন, অবশ্যই তিনি সবকিছু জানেন।’

মোট কথা, যার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই তাকে জাকাত দেওয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে।

সুরা মুজ্জাম্মিলের ২০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম কর, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে দাও উত্তম ঋণ।’ মনে রাখতে হবে যারা তার প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের জন্য জাকাত দেয় পরকালে যেদিন কোনো ছায়া থাকবে না সেই ভয়াবহ কিয়ামতের দিন আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর আরশের ছায়ার নিচে তাদের ছায়া দেবেন। সুবহানাল্লাহ।

সুতরাং আমাদের উচিত পরকালে জান্নাতলাভের আশায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ঠিকমতো জাকাত আদায় করা। আমরা যারা সম্পদশালী তারা যেন এতে কোনো ওজর-আপত্তি না করি। সুতরাং আসুন পরকালের কঠিন দিনে আল্লাহর নৈকট্যলাভের আশায় আমরা সঠিকভাবে জাকাত আদায় করি এবং মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাকাত আদায়ের তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর