বাংলাদেশকে কর ফাঁকিবাজদের অভয়ারণ্য অভিহিত করা হয়। এ দেশের নাগরিকের মধ্যে যারা করদাতা হওয়ার যোগ্য তার অন্তত ৭০ শতাংশই করের আওতার বাইরে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই কর ফাঁকিতে সিদ্ধহস্ত। এমনকি পিছিয়ে নেই বাংলাদেশে ব্যবসারত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমগুলো তাই বাংলাদেশে কর ফাঁকির মচ্ছবে মেতে উঠেছে। ইন্টারনেটভিত্তিক ইউটিউব, ফেসবুক, গুগল, ইয়াহুসহ আরও একাধিক ভার্চুয়াল-মাধ্যম বিজ্ঞাপন প্রচার করে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করছে বাংলাদেশ থেকে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, এ আয়ের পুরো টাকাই চলে যাচ্ছে বিদেশে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এসব ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য ও কনটেন্ট প্রচার করছে। বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চাইলেও তারা দিচ্ছে না। এমনকি বাংলাদেশ সরকারবিরোধী প্রচারণাও অপসারণ করছে না। অনলাইন বিজ্ঞাপনের নামে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার বেশি নিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দেশে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও বিলের ওপর ৪ শতাংশ কর কাটা হয়। কিন্তু বিদেশি সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের স্বীকৃত কোনো অফিস কিংবা লেনদেনের বৈধ মাধ্যম না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কর আদায় কিংবা হুন্ডি প্রতিরোধ কঠিন হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তি-শৃঙ্খলা হুমকির সম্মুখীন এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে। আজকের যুগ নিঃসন্দেহে তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। এই সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি পরিহার করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা নীতিগতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমের বিরোধী নই। তবে তারা যে কর ফাঁকি দিচ্ছে এবং স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এ বিষয়ে লাগাম পরানো সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।