মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই

সিইসি বলেছেন, নির্বাচন করোনার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের একটি স্তম্ভ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তার বোধশক্তি এই। যে করোনার আক্রমণে সারা পৃথিবী তছনছ হয়ে গেছে, লাখ লাখ মানুষের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে, দুনিয়ার অর্থনীতি ভেঙে খানখান, কর্মহীন শত কোটি মানুষ নাভিশ্বাস ফেলছে, রাষ্ট্রনায়করা চোখে অন্ধকার দেখছেন, খেটে খাওয়া মানুষের সে যে কি দুর্ভোগ, কষ্ট তা সবাই উপলব্ধি করতে পারে না। সে সময় একটি সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এমন লাগামহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন, অসার মন্তব্য করলে সাধারণ মানুষ কি মনে করতে পারে? এমনিতেই নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই, শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নেই। নির্বাচন কমিশনকে শতকরা ৯০ জন সম্মানের চোখে দেখে না। কমিশন কোনোভাবেই মানুষের আস্থা কুড়াতে পারেনি। সেই কমিশনের প্রধান এমন একটি জটিল সময়ে অমন লাগামহীন কথাবার্তা বললে তাঁর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন জাগে। নির্বাচন এত গুরুত্বপূর্ণ! আজ প্রায় দেড় বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ, ছাত্র-যুবক-শিশুরা অবাধে খেলাধুলা পর্যন্ত করতে পারছে না। তাহলে করোনা কি কিছুই না? প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হঠাৎ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে ভীষণ মর্মাহত আমরা। দেশবাসীও যে মর্মাহত তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন দায়িত্বহীন ব্যক্তির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার অনুরোধ জানাতে পারি কি না বুঝতে পারছি না।

যাক, সপ্তাহজুড়ে যা নিয়ে ভাবছিলাম তাই এবার বলি। ইতিমধ্যে পাঠকরা জেনেছেন, মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর একজন দক্ষ যোগ্য প্রবীণ কমান্ডার আলী হোসেন খান লালটু ১৯ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছে। প্রথমে একে স্বাভাবিক মৃত্যুই মনে হয়েছিল বা মনে করেছিলাম। জানাজায় হাজির হতে না পারায় একটা আফসোস ছিল। কদিন পর শুনলাম, কমান্ডার লালটু মারা যাওয়ার আগে অপমানিত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিত হয়েছিল। প্রথম প্রথম কথাটি খুব আমলে নিইনি। পরে যখন অনেকেই বলছিল তখন আমার খুব খারাপ লেগেছে। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭২ টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুলমাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কাদেরিয়া বাহিনীর হাত থেকে অস্ত্র নেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘কোথাও কোনো অন্যায় হলে, জুলুম হলে তোমরা আমাকে জানাবে। আমি কোনো সরকারি কর্মচারীর কথা শুনব না, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনব। তোমাদের কথা বিশ্বাস করব। তোমাদের জীবন, তোমাদের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব সরকারের।’ ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু নিহত হন। ঘাতকের হাতে নেতা নিহত হওয়ার পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধে ঝাঁপিয়ে পড়ায় কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা তখন দেশের প্রধান শত্রু। তারা পালিয়ে বেড়ালেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। প্রায় ৬-৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়, জেলে পোড়া হয়। খুনি মোশতাক, বীরউত্তম জিয়াউর রহমান, তারপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এসব পরিবর্তনের পর কিছুটা স্থিতি অবস্থা বিরাজ করে। দীর্ঘ নির্বাসনের পর ’৯০-এ দেশে ফিরলে মুক্তিযোদ্ধারা নতুনভাবে বুকভরে শ্বাস নেয়। চলতে থাকে সংগ্রাম, আন্দোলন। ’৯১-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে প্রায় সবাই আশা করেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে। আমি তখন যশোর জেলে বন্দী। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেল তেমন হয়নি। ৮৮টি সিট পেয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়। যেখানে বিএনপি সবকটি আসনে মনোনয়ন দিতে পারেনি, বিএনপি প্রথম। তারা সরকার গঠন করে। আবার চলে আন্দোলন। আন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১২-১৩ বছর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায়। ঠিক সে সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতিত হয়ে, অপমানিত হয়ে মারা গেলে দুঃখ রাখার জায়গা থাকে না। তাই লালটুর কবর জিয়ারত এবং বাড়িতে গিয়েছিলাম তার মৃত্যুর এক মাস পর। কবর জিয়ারতের সময় বারবার মনে হচ্ছিল যাদের আমার কবরে ফাতিহা পাঠ করার কথা তাদের কতজনের কবরে আমি ফাতিহা পাঠ করছি। গিয়েছিলাম লালটুর বাড়ি। যেখানে লালটুর ওপর আঘাত করা হয়েছিল সেখানেও গিয়েছিলাম।

লালটুর কোনো সন্তান ছিল না। বড় ভাইয়ের মেয়ে আফরোজাকে লালনপালন করেছে। তারই চিৎকারে জেলা প্রশাসক আতাউল গনি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে যথাযথ তদন্তের নির্দেশ দেন। থানাকেও বলা হয়। পুলিশ কথাবার্তা শুরু করে। একজন এএসপি ঝনঝনিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লালটুর বাড়ি যায়, একেওকে জিজ্ঞেস করে। লোকজন বলছে, পুলিশের লোকজনকে অভিযুক্ত হুমায়ুন মোটামুটি ম্যানেজ করতে পেরেছিল বা করেছিল। ওই জিজ্ঞেসাবাদ পর্যন্তই সার। আমি লালটুর বাড়ি গেলে বাসাইল থানার ওসি সেখানে গিয়েছিলেন। আমি যখন লোকজনদের সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন তিনি আমার বাঁ পাশে বসে ছিলেন। একসময় লালটুর স্ত্রী বুকফাটা চিৎকার করে বলছিল, ‘স্যার গো, লালটুর ডান পায়ে হাঁটুর নিচে তিনটা রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন ছিল। ডান হাতে কালো দাগ পড়ে গিয়েছিল।’ ওসি তখন বলছিলেন, এগুলো আগে জানালে আমাদের সুবিধা হতো। লালটু হুমায়ুনের ঘরে গিয়েছিল দুই-আড়াইটায়, তাকে মারপিট করলে সে হুমায়ুনের ঘরের বারান্দাতেই অনেকক্ষণ বসে ছিল এবং চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল- ‘হুমায়ুন আমাকে মারল! ওকে না মেরে এখান থেকে যাব না। ছোট ভাই আমার গায়ে হাত দিয়েছে এ মুখ আমি কী করে দেখাব!’ তার স্ত্রী এবং অন্যরা অনেক বলেকয়ে ঘণ্টাখানেক পর তার ঘরের বারান্দা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছিল। সেখানেই বসে ছিল ঘণ্টাখানেক। আর কান্নাকাটি করছিল- ‘এ বয়সে আমার গায়ে হাত দিল, আমি আর বাঁচতে চাই না। এ মুখ আমি কী করে দেখাব!’ এভাবে ঘণ্টাখানেক পর বারান্দা থেকে নেমে ৮-১০ পা যাওয়ার পরই পড়ে যায়। সেখান থেকে তুলে আনতে আনতেই মুক্তিযুদ্ধের এক প্রবাদপুরুষ অসীম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লালটু পরলোকগমন করে। এরপর তাড়াহুড়ো করে শেষ গোসল করিয়ে খুব সকালে টাঙ্গাইলের বিশ্বাসবেতকা নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সে ৩০ বছর বসবাস করত। সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে সকাল ৯টা-সাড়ে ৯টার দিকে ঝনঝনিয়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পুলিশ রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়েছে, গার্ড অব অনার দিয়েছে কিন্তু লালটুর স্ত্রী এবং মেয়ের অভিযোগ শোনেনি। গত সপ্তাহে লালটুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর এফআইআর হয়েছে।

থানায় এফআইআরের সঙ্গে সঙ্গে ছোটাছুটি বেড়ে গেছে হাজার গুণ। ছেলেমেয়ে ও ভাতিজা নিয়ে অভিযুক্ত হুমায়ুন আমার সামনে হাজির। আমাদের অন্য আরও লোকজনদের কাছে সে ছোটাছুটি করেছে। তার কথা, ‘ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথাকাটাকাটি হয়েছে। ভাই আমাকে ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরেছিল। আমি বাঁচবার জন্য হাতের কাছে যে লাঠি পেয়েছিলাম তাই দিয়ে তাকে বাড়ি মারি। ৩-৪টা তার পায়ে, ২-৩টা হাতে লাগে। পা সরালে আমি ছুটে পালিয়ে যাই। তার পরে তিনি মারা যান। আমি গ্রাম ছেড়ে পালাই।’ আমি কী বলব, এমন হলে রক্তের রক্ত আপন ছোট ভাই হিসেবে লাশ ধোয়াতে পারত, জানাজা পড়ে কবর দিতে পারত, মৃত ভাইয়ের কাছে বলতে পারত- আমার ভুল হয়েছে তুমি আমায় মাফ কর। তা কিন্তু হয়নি। জীবিতকালে যেমন রেষারেষি ছিল, মৃত্যুর পর সে রেষারেষি বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং আরও বেড়েছে। লালটুর ছেলেমেয়ে নেই, অভিযুক্তের ছেলেমেয়ে আছে। তার ক্ষমতাই আলাদা। আমার সেসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার যতটা ব্যথা তা হলো, কবর দেওয়ার আগে লালটুর স্ত্রী-পালক কন্যা, তারা যে লালটুর ওপর অত্যাচারের কথা বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেছিল তা কেন কেউ শোনেনি। বড় দুর্ভাগ্যের! বঙ্গবন্ধু তো চলেই গেছেন, আমি বেঁচে থাকতেও যদি মুক্তিযোদ্ধাদের মান-মর্যাদা, তাদের জীবন রক্ষায় কোনো কাজে লাগতে না পারি তাহলে বেঁচে থেকে লাভ কী? লালটুর ওপর নির্যাতনের কারণে ছোট ভাই হুমায়ুনের ফাঁসি হোক, যাবজ্জীবন হোক এমন আমি চাই না। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার গায়ে হাত তোলা, ছোট হয়ে বড়র গায়ে হাত দেওয়া সামাজিক এ অবক্ষয়ের বিচার হোক তা আমি চাই। ইচ্ছে হলেই, গায়ে শক্তি থাকলেই কাউকে যে আঘাত করা যায় না আমার শুধু এটুকুই কাম্য। রাষ্ট্রের কাছে, সমাজের কাছে, সরকারের কাছে এর চাইতে বেশি আমি চাই না। তাই এ করোনার মধ্যেও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে গিয়েছিলাম। বড় ভালো মানুষ। আমাকে ভীষণ সম্মান করেন। বড় ভাইয়ের মতো মান্য করেন। আমি যে তাকে বিশ্বাস ও স্নেহ করি তা তিনি অকপটে স্বীকার করেন। এসব কারণে আমিও তার কল্যাণ কামনা করি। এই তো কদিন আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যাগ চাওয়ার জায়গায় প্রবীণ সাংবাদিক রোজিনাকে গ্রেফতার করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। আমার মোটেই ভালো লাগেনি। তাই লিখেছিলাম, সরল সোজা সাদামাটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি কেন? দাবি হলে সেটা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হবে। সাংবাদিক রোজিনার ওপর মিথ্যে অভিযোগ এনে তাকে তারা জেলে পুরেছেন। বহুদিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাড়ি যেতে যেতেই তার ঘরে বসা প্রায় ১০-১২ জনকে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি নাকি আগেই বলে রেখেছিলেন, ভাই এলে তাকে সময় দিতে হবে। তাই আমি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই উঠে পড়েছিলেন। আমি বসেছিলাম মন্ত্রীর ডান পাশে। বাঁ পাশের সোফায় ছিলেন তিনজন। তারাও উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। মাননীয় মন্ত্রী বলছিলেন, ‘ভাই, এদের চেনেন?’ আসলে কোনো দিন হয়তো দেখিনি, তাই চিনি না। মন্ত্রী বললেন, ‘মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনি ভিসি এবং এরা দুজন তার সঙ্গের। একজন বোধহয় রেজিস্ট্রার, আরেকজন অন্য কিছু।’ বলেছিলাম, হ্যাঁ, আমি একবার মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অফিসে গিয়েছিলাম একটি ছেলের চাকরির জন্য। বয়সসীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই গিয়েছিলাম। ছেলেটি এমএ করেছে, ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে তার পরও চাকরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অথবা ১৫ আগস্ট ’৭৫ অমন নির্মমভাবে নিহত না হলে অবশ্যই হতো। বলেছিলাম, গতকাল না পরশু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটা নিয়ে টাঙ্গাইলে এক প্রতিবাদ সভা হলো, ভিসির বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ হলো। জিজ্ঞেস করেছিলাম, অমন সুন্দর সুন্দর গাছ কাটছেন কেন? ‘গাছ না কাটলে ঘর-দুয়ার বানাব কী করে? রাস্তা বানাব কী করে?’ ভিসির কথায় বড় মর্মপীড়া অনুভব করেছিলাম। বলেছিলাম, ওখানে অনেক গাছ হুজুর মওলানা ভাসানী নিজের হাতে লাগিয়েছেন। আমার কথা শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, ‘হুজুর মওলানা ভাসানীর লাগানো গাছ কাটা কোনোমতেই উচিত হয়নি। তাঁর স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করে রাস্তাঘাট, ঘর-দুয়ার বানানো উচিত ছিল।’ কথাটা শুনে আমার বড় ভালো লেগেছে। ভদ্রলোকেরা বেরিয়ে গেলে বলেছিলাম, এ ধরনের লোকেরাই আপনাদের, সরকারের ক্ষতি করছে। যা হোক তারপর আরও অনেক কথা হয়। বিশেষ করে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লা কোম্পানীগঞ্জের রাখাল চন্দ্র নাহার এক মিথ্যা মামলায় ২০০৩ সালে ফাঁসি হয়। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার আমলে মইন উ আহমেদ, ফখরুদ্দীন আহমদ, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে দেনদরবার করে ফাঁসি বদলে যাবজ্জীবন করা হয়েছিল। সেও প্রায় ১২ বছর। আগে যাবজ্জীবন ছিল ২০ বছর। জেলে থাকতে হতো ১২-১৩ বছর। দয়াবান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তাকে ৩০ বছর করে গিয়েছেন। তাতে ১৮-১৯ বছর এখন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের জেল খাটতে হয়। সেখানেও বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার সময় পার হয়ে গেছে। তা-ও মুক্তি পাচ্ছে না। ভদ্রলোক এখন কুমিল্লা জেলে মৃত্যুশয্যায়। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বলতে গিয়েছিলাম এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যত্ন নিয়ে মুক্তি দিলে আপনার ঘরে বসে হজের সওয়াব হবে। সাধারণ ক্ষমার আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহাকে সরকার যে কোনো সময় মুক্তি দিতে পারে। আর তার ক্ষেত্রে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তিনি বললেন, ‘আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফাইল তৈরি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ এ সম্পর্কে আমার সামনেই তিনি সংশ্লিষ্ট অফিসারকে ফাইল তৈরি করতে বললেন। শুনলাম এ ধরনের আরও নাকি অনেক ফাইল আছে। তাই বলে এসেছি, অনেক ফাইলের মধ্যে রাখাল চন্দ্র নাহার ফাইল না করে তার জন্য মেহেরবানি করে আলাদা ফাইল করুন। দেখা যাক কী হয়। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জেলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে সরকার হজের সওয়াব অর্জন করে কি না?

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর