শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

পাপমুক্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

পাপমুক্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞানের। সঠিক জ্ঞান ছাড়া পাপমুক্ত জীবনের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়। কেননা অন্তর হচ্ছে ভালোমন্দ অনুধাবনের কেন্দ্রস্থল; সে পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষমতা রাখে। আর দেহ হচ্ছে বাস্তবায়নের মাধ্যম; বিবেচনা বা অনুধাবনের ক্ষমতা সে রাখে না। পরিকল্পনা গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মেধা, তাই মেধা যদি শুধু বস্তুজ্ঞানে ভরপুর হয় তাহলে তা মানুষকে অবস্তু ও অদৃশ্য বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে না। আর যদি মেধা ওহিগত জ্ঞানে আলোকিত হয় তাহলে যেমন এই মেধা পার্থিব বিষয়ে সীমা লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকবে, তেমনি অদৃশ্যের বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। মূলত ভালোমন্দের কার্যকারণ মেধাগত বিষয়। যদি কারও মেধা দীনি জ্ঞানে পরিপূর্ণ হয় তবেই সে জ্ঞানী। অন্যথায় সে মূর্খ। এজন্যই আল কোরআন ইহুদিদের জ্ঞানী বলে পুনরায় মূর্খ আখ্যায়িত করেছে। তারা বস্তুজ্ঞানী ছিল, আর অদৃশ্যের ব্যাপারে ছিল একেবারে অন্ধ। এজন্য শুধু বস্তুজ্ঞান মূর্খতা। আর যারা দীনি জ্ঞানী, তাদের কোরআন ও হাদিসে শুধু উত্তম নয়; বরং সর্বোত্তম বলে প্রশংসা করা হয়েছে।

জ্ঞান লাভের উপায় : এ জ্ঞান অর্জনের তরিকা দুটি- একটি সাধারণ যেমন বই-পুস্তক অধ্যয়ন করে, ওয়াজ-নসিহত শুনে কিংবা আলেমদের কাছে জিজ্ঞেস করে জ্ঞান অর্জন করা। আর একটি বিশেষ তরিকা যেমন জ্ঞান অর্জনের জন্য সময় বের করে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া এবং প্রচলিত পাঠ্যসূচি অনুপাতে শিক্ষা কোর্স সমাপ্ত করে কঠিন সাধনা ও মেহনতের মাধ্যমে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হওয়া। কিন্তু এ পথ অতি সুগম নয় এবং সবার জন্য তা সম্ভবও নয়। এজন্য প্রথম পথ অবলম্বন করা সর্বসাধারণের জন্য সহজসাধ্য।

ইখলাস ও সুন্নত : তবে কেবল ইমান, ইলম ও আমলই যথেষ্ট নয়; বরং এর মধ্যে ইখলাস ও সুন্নতের রং দিতে হবে। এটা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। এর জন্য কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়, মুজাহাদা করতে হয়। অনেক সময় কামিয়াব হওয়া যায়, আবার অনেক সময় মাহরুম হতে হয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক-সুন্দর এবং সহজ পথ হচ্ছে আহলুল্লাহদের সুহবত ও সংশ্রব লাভ। কোরআন ও হাদিসে এজন্যই সুহবত ও সংশ্রব লাভের প্রতি তাগিদ করা হয়েছে। পূর্বসূরিরা তাদের অভিজ্ঞতার দৃষ্টি থেকেও অনুরূপ মত পোষণ করেছেন।। বাস্তবতাও এরূপই। সাহাবিরা রসুলের সুহবতের মাধ্যমেই আত্মশুদ্ধি ও জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছেন। তাঁরা আমাদের মতো লেখাপড়ার পথ অনুসরণ করেননি, করার প্রয়োজনও হয়নি। অথচ তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ মকামলাভে ধন্য হয়েছেন এ সুহবতের মাধ্যমেই। এ কারণেই হাদিসে সুহবতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে-

‘পুণ্যবানদের সুহবত নির্জনতা অপেক্ষা উত্তম।’

সুহবতের বরকত : সুহবতের দ্বারা জাহেরি বাতেনি উভয় ধরনের বরকত একসঙ্গে লাভ হয়, একটা অন্যটা থেকে অভিন্ন। আতর যেমন দেহ ও দেমাগকে সুগন্ধিময় করে তোলে তেমনি অন্তর ও ভিতর-জগৎকেও মোহিত করে তোলে। এমনিভাবে সুহবত একদিকে দেহ-দেমাগকে গুনাহমুক্ত করে পবিত্র করতে সক্ষম হয়, অন্যদিকে অন্তরকে কলুষমুক্ত করে নুরান্বিত ও মারিফাতের ভান্ডারে পরিণত করে তোলে।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর