শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

কর্ণফুলীর দুঃখ

দখল-দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন

দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে লুসাইদুহিতা কর্ণফুলী। দেশের অন্যসব নদ-নদীর মতো কর্ণফুলীও বেপরোয়াভাবে গ্রাস করছে দখলবাজরা। প্রাণবন্ত এ নদীতে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে টনে টন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। কর্ণফুলী থেকে চট্টগ্রাম মহানগরে প্রবাহিত হয়েছে চাক্তাই খাল, তার মাত্র ১ কিলোমিটার অংশ থেকে ১৫ দিনে ৯০ ট্রাক বর্জ্য তুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। বলাই বাহুল্য, শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই খাল খননসহ একের পর এক প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা সচল হচ্ছে না ওইসব খাল এবং ড্রেনে যথেচ্ছভাবে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য ফেলায়। এসব পণ্য বিভিন্ন খাল ও নর্দমা বেয়ে বেপরোয়াভাবে কর্ণফুলীতে পড়ছে এবং কর্ণফুলী পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের সমীক্ষা অনুযায়ী দূষণের কারণে কর্ণফুলীর ৩৫ প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। এ নদীতে ৬৬ প্রজাতির মিঠা পানির, ৫৯ প্রজাতির মিশ্র পানির এবং ১৫ প্রজাতির সামুদ্রিক পরিযায়ী মাছ পাওয়া যেত। এখন মিঠা পানির ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির এবং মিশ্র পানির ১০ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে চুয়েট, জাইকার পরিবেশবিষয়ক সাবেক গবেষক ও কর্ণফুলী নদী গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত টিম কর্ণফুলী নদীর শাহ্ আমানত ব্রিজ থেকে মনোহরখালী পর্যন্ত প্রস্থ নিয়ে একটি জরিপ চালায়। এতে বলা হয়, শাহ্ আমানত সেতু নির্মাণের সময় এডিবি মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস সিট অনুযায়ী ভাটার সময় নদীর প্রস্থ ছিল ৮৮৬ দশমিক ১৬ মিটার। এখন সেতুর নিচে ভাটার সময় প্রস্থ ৪১০ মিটার। তবে জোয়ারের সময় জেগে ওঠা চর অতিক্রম করে ৫১০ মিটার পর্যন্ত প্লাবিত হলেও ভরাট হওয়ার কারণে সেখানে নৌযান চলে না। কর্ণফুলীর অবৈধ দখলদারি উচ্ছেদে একের পর এক অভিযান চালানো হলেও তদারকির অভাবে দখলদাররা আবারও থাবা বিস্তার করছে। কর্ণফুলীর দুঃখ তথা দখল-দূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদফতর ও সিটি করপোরেশন শুধু নয়, নাগরিক সমাজকেও সোচ্চার হতে হবে। নদী রক্ষার সেটিই হবে প্রকৃষ্ট পথ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর