শিরোনাম
সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

আগামী দিনের বাংলাদেশ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

আগামী দিনের বাংলাদেশ

অতীত আর বর্তমানকে নিয়ে ভবিষ্যতের পথরেখা তৈরি হয়। অতীতকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যতের লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। সুতরাং ভবিষ্যৎ বুঝতে চাইলে অতীত ও বর্তমান দুটোকেই বুঝতে এবং নির্মোহ দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। সত্য এবং চলমান বাস্তবতাকে গ্রহণ করার নৈতিক সাহস থাকতে হবে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র ও বাঙালি জাতির জন্য সর্বোত্তম সত্য শুধু উচ্চারণ নয়, সংবিধানে অত্যন্ত শক্তভাবে সন্নিবেশিত করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সত্যের মূল প্রতিপাদ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি। সেই মুক্তির দুটি স্তর বা জায়গাকে তিনি স্পষ্ট করে দেন। প্রথমত মনোজগতের মুক্তি, আর দ্বিতীয়টি অর্থনৈতিক মুক্তি। একটি অপরটির পরিপূরক হলেও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে এবং সেটিকে সুসংহত করার জন্য মনোজগতের মুক্তি অপরিহার্য। স্বাধীনতার পর সবকিছু গুছিয়ে বঙ্গবন্ধু অভীষ্ট লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু যাত্রার শুরুতেই ঘটে গেল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই মহা ট্র্যাজেডি। আমরা জাতির পিতাকে হারালাম। মুক্তির যাত্রা আঁতুড় ঘরেই মারা গেল। ১৯৭৫ সালের পর পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসা দুই সামরিক শাসক রাষ্ট্র ও রাজনীতির মহা সর্বনাশ ঘটালেন। জাতীয় মুক্তি অর্জনের সব পথ ও পন্থাকে সমূলে উচ্ছেদ করলেন। সেই সর্বনাশের বোঝা এখনো জাতির মাথার ওপর আরোপিত হয়ে আছে। এই বোঝা সম্পূর্ণভাবে সরাতে না পারলে সামগ্রিকভাবে মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মনোজাগতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। আজকের লেখায় এই জায়গার কথাগুলো আমি তুলে ধরব।

তবে তার আগে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চিত্রটির দিকে একবার নজর বুলিয়ে নেওয়া দরকার। গত ১২ বছরে সামগ্রিকভাবে গড়পড়তায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, এই ধারা নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে পৃথিবীর ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। এসব ফোরকাস্ট থেকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটা চিত্র দেখা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে তার প্রধান কারণ, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিডারশিপ। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের মনোজাগতিক যে চরিত্র এবং তা থেকে উদ্ভূত পাহাড়সম যেসব বাধা-বিপত্তিকে ঠেলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যেখানে এনেছেন তা এক কথায় বিস্ময়কর। ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যখন হবে তখন শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনীতির হিসাব-কিতাবে অন্যতম ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হবে বাংলাদেশ। সুতরাং সঙ্গত কারণেই বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি কার জন্য সেটি কতটুকু স্বস্তিদায়ক হবে সেটা তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন। সুতরাং এই বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্য থেকে কেউ কেউ ঘোঁট পাকাতে পারে। তার কিছু কিছু আলামত কিন্তু এখনই দেখা যাচ্ছে। সেটা আগামীতে হলে তার সঙ্গে যুক্ত হবে একাত্তরের পরাজিত জামায়াত-মুসলিম লীগের বর্তমান প্রজন্ম, এদের মিত্র রাজনৈতিক বড় পক্ষ এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী। এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না যদি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সত্যিকার অর্থে অন্ধ বিশ্বাস নয়, তরুণ প্রজন্মকে যুক্তিনির্ভর মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ ও সুসংগঠিত করতে পারে। এর জন্য সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক আন্দোলন ও গণজাগরণ আজ একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষের মনোজাগতিক চরিত্রের অতীত ও বর্তমানের কিছু প্রতীকী চিত্র তুলে ধরি। যুদ্ধাপরাধী, একাত্তরের গণহত্যাকারী মতিউর রহমান নিজামী ভোটে জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। সাকা চৌধুরীর মতো যুদ্ধাপরাধী ও বিকৃত রুচির মানুষ কয়েকবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করেছেন। এই দুজন এখন দুনিয়ায় নেই, কিন্তু যারা তাদের ভোট দিয়েছেন আমি তাদের মানসিকতার কথা বলছি। শুধু দুজন ব্যক্তি বা দুই জায়গার মানুষের মধ্যে এরকম মানসিকতা দেখা গেছে তা নয়, এরকম আরও উদাহরণ আছে। দেশব্যাপী এবার সাম্প্রতিক সময়ের একটা ঘটনা উল্লেখপূর্বক আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। মাস দুয়েক আগে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচিত একজন বেসরকারি কলেজের শিক্ষক, আওয়ামী লীগের একজন দ্বিধাহীন সমর্থক আমাকে জানালেন, তিনি তার নিজ গ্রামে সম্প্রতি একটা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি বললাম, সমাজসেবা ভালো কাজ, তবে টাকা পেলেন কোথায়। জানলাম, তিনিসহ আরও অনেকেই আগ্রহভরে টাকা দিয়েছেন এবং তা দিয়ে দুটো টিনের ঘর আপাতত করেছেন। একটা ঘরে পাঠদান অন্যটি ছাত্রদের আবাসন। থাকা-খাওয়া পড়াশোনা সব ফ্রি। একজন টাইটেল পাস শিক্ষক রেখেছেন এবং ২০-২৫ জন ছাত্র ইতিমধ্যে ভর্তি হয়েছে। তাতে প্রতি মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। আমি একটু কৌতূহলী প্রশ্ন করায় এক নিঃশ্বাসে কলেজের অধ্যাপক মহোদয় বললেন, ভাই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ, আখেরাতে কাজ দেবে। এই দুনিয়াদারি কিছুই না, ক্ষণিকের মায়া মাত্র, আখেরাতই আসল। আমি বললাম, আপনি যে লেখাপড়া শিখেছেন, এখন ছাত্রদের যা শিখাচ্ছেন তা কি অধর্মীয়, তাতে কি কোনো সওয়াব হবে না? মাদরাসা শিক্ষার পক্ষে বিপক্ষে আমি কিছু বলছি না। বাংলাদেশের শহরে-গঞ্জে অলি-গলিতে যেভাবে হাজার হাজার মাদরাসা তৈরি হয়েছে, হচ্ছে এবং তার পেছনে যে ধর্মীয় কারণ দেখানো হচ্ছে সেটি কতখানি যৌক্তিক। মুসলমান মাত্রই একটা বহুল পরিচিত হাদিসের সঙ্গে পরিচিত। রসুল (সা.) একবার সাহাবিদের বলেছিলেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য তোমরা সুদূর চীন দেশে যাও। সে সময় ইউরোপ অন্ধকার যুগে ঢুকে গেছে, আমেরিকা তখনো আবিষ্কৃত হয়নি, চীনই ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ। আধুনিক কম্পাস, গান পাউডার, কাগজ, চীন তখনই আবিষ্কার করে ফেলেছিল। চীনে তখন ট্যাঙ ডাইনেস্টির শাসন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রাধান্য। আধুনিক বিজ্ঞান প্রসূত শিক্ষা যদি সওয়াবের কাজ না হবে, আখেরাতে কোনো কাজে না লাগবে, তাহলে রসুল (সা.) কি সেই শিক্ষা অর্জনের জন্য সাহাবিদের বিধর্মীর দেশ চীনে যেতে বলতেন। যে বিজ্ঞানীরা করোনার টিকা আবিষ্কার করার মাধ্যমে কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করছেন, সেটা কি সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হবে না? আসলে মাদরাসার শিক্ষা বা মূলস্রোতের শিক্ষা, যেটাই বলি না কেন, সেগুলো যদি অন্ধ বিশ্বাস নয়, যৌক্তিক কারণে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি মানুষের জীবনকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুন্দর করে তাহলে সেটি নিয়ে কোনো কথা বলা উচিত নয়। বাংলাদেশের ধনী, টাকাওয়ালা মানুষেরা মাদরাসার জন্য যত টাকা ঢালেন তার এক দশমাংশও মূলস্রোতের সাধারণ শিক্ষার জন্য দেন না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তারা যা করছেন সেটা কি শিক্ষার আলো সমাজ-রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ুক এই উদ্দেশ্যে করছেন, নাকি অন্ধ বিশ্বাসকৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে এই আশায় করছেন।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে যত সংখ্যক মাদরাসা ছিল তার থেকে বর্তমানে সেই সংখ্যা অন্তত ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একটা বিশাল নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হয়েছে। এটাকেই রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে জামায়াত, হেফাজতসহ একাত্তরের সব পরাজিত গোষ্ঠী। সত্তর দশকে মানুষের কথাবার্তা, পোশাকে আশাকে, চলাফেরায় ও কর্মকান্ডে যতখানি গোঁড়ামি মুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় পেয়েছি সেটি এখন আর নেই। মানুষ কি প্রকৃতই ধর্মের দিকে ঝুঁকছে, নাকি জামায়াত-হেফাজতের ধর্মীয় অপব্যাখ্যার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে সেটাই দেখার বিষয়। সমাজ থেকে ধর্মের মহানুভবতা তো ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। অন্ধ বিশ্বাসের ধারা থামাতে না পারলে আগামীর বাংলাদেশের জন্য সেটা বড় বিপদ হবে। কারণ, ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক পক্ষ ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে যখন রাষ্ট্রের মধ্যে সংকট সৃষ্টি করে তখন বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অন্ধ বিশ্বাসের দোদুল্যমানতায় হয় নীরব থাকে, অথবা ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর পাতা ফাঁদে পা দেয়। যার প্রত্যক্ষ উদাহরণ ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধবিহারের ওপর আক্রমণের সময় দেখা যায়। সেদিন জামায়াত ও সমমনাদের পাতা ফাঁদে সবাই পা দিয়েছিল। বিপজ্জনক মনোজাগতিক ঐকমত্য, যা আগামীর বাংলাদেশের জন্য বড় দুঃসংবাদ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার শতকরা হার ছিল ২০ ভাগ বা তারও কম। আজকে সেটা শতকরা ৭২ ভাগে উঠেছে। তাতে কি আমরা বলতে পারছি সামগ্রিকভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র অধিকতর উদার ও যৌক্তিক হয়েছে, মনোজগতের উন্নতি ঘটেছে এবং আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত হয়েছে? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত ১৩ জুন এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত গার্ড অব অনার ও ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদানে নারী কর্মকর্তারা অংশ নিতে পারবে না। পত্রিকার খবর মতে কারণ হিসেবে কমিটি বলেছে, যেহেতু নারীরা জানাজায় অংশ নিতে পারে না, তাই এক্ষেত্রেও নারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ সঠিক নয়। রাষ্ট্রের এত বড় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে এরকম অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে সব প্রগতিশীল মানুষ চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ যদি যুক্তি নয়, অন্ধ বিশ্বাস ও চরম ওয়াহাবিবাদী উগ্রতন্ত্রের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষের বেলায় কী হতে পারে তা সহজে অনুমান করা যায়। জামায়াত ও চরমপন্থি ইসলামিস্টদের প্রকাশ্য রাজনীতি আজ অনেকটাই কোণঠাসা। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে তারা মিসরের ব্রাদারহুডের মতো দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়েছে। বড় বড় ব্যাংক, শিল্প কারখানা, ছোটবড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদ তো রয়েছেই, তার সঙ্গে বহু নামের ধর্মীয় সংগঠনের মাধ্যমে বিশাল নেটওয়ার্ক তারা দেশব্যাপী তৈরি করেছে। ওয়াজ, নসিহত, চটি বই, বড় বই, মিডিয়া হাউস ইত্যাদির মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য গোপন রেখে ধর্মীয় সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে তারা এমনভাবে তুলে ধরছে, তাতে উচ্চশিক্ষিত এবং আপাত দৃষ্টিতে প্রগতিশীল চিন্তার মানুষও প্রভাবিত হয়ে পড়ছে। বিপদটা এখানেই। তিউনেশিয়া, আলজেরিয়া, মিসর ও তুরস্কের ইতিহাস শিক্ষা দেয় এক সময়ের পরিপূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কেন এবং কীভাবে কী কারণে চরম উগ্রবাদী মধ্যযুগীয় কট্টর ওয়াহাবি পন্থার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। গবেষকগণ এর মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এসব দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে কখনই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো ধর্মীয় চরমপন্থাকে শুধু রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চেয়েছে। পর্যায়ক্রমে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মের মন-মানসিকতা, অর্থাৎ মানসতন্ত্র গঠনের দিকে নজর দিয়েছে খুবই কম। দীর্ঘ-মেয়াদে রাষ্ট্রের এই কৌশল কাজে লাগেনি। ওইসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অনেক সুবিধার জায়গা আছে। ওইসব দেশের মতো বাংলাদেশ মনোলিথিক রাষ্ট্র নয়, এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের একটা মিশ্রণ রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত বিবেচনায় আঞ্চলিক ভূরাজনীতির জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান ওসব দেশের থেকে ভিন্ন। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস অযৌক্তিক ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বড় এক রক্ষাকবচ। কিন্তু এই সুবিধাগুলোকে কাজে লাগাবার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, অর্থাৎ উদারপন্থি ধর্মনিরপেক্ষ যৌক্তিক মতাদর্শ ভার্সেস ধর্মাশ্রয়ী অযৌক্তিক পশ্চাৎপদ অন্ধত্ববাদের মতাদর্শের লড়াইয়ে দীর্ঘমেয়াদে কারা জয়লাভ করবে তার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

 

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর