বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

যাত্রাপুর দুর্গে অভিযান

মুসা খানের বিরুদ্ধে ইসলাম খানের অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল যাত্রাপুরে মুসা খানের দুর্ভেদ্য দুর্গ অধিকার করা। ইসলাম খান জাফরগঞ্জ থেকে তাঁর স্থলবাহিনী নিয়ে যাত্রাপুর অভিমুখে অগ্রসর হন। এ বাহিনী সারা পথে ছোট ছোট দুর্গ তৈরি করে অগ্রসর হতে থাকে আর এসব দুর্গের ছত্রচ্ছায়ায় এবং স্থলবাহিনীর প্রহরায় ইছামতী নদীপথে অগ্রসর হতে থাকে তাদের নৌবহর। যাত্রাপুরে পৌঁছেই মুঘল স্থলবাহিনী ও নৌবাহিনী একযোগে যাত্রাপুর দুর্গের ওপর আক্রমণ চালায়। মুসা খান এর আগেই তাঁর সুযোগ্য অধিনায়ক মির্জা মুমিন, দরিয়া খান ও মাধব রায়কে যাত্রাপুর দুর্গের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করেন। আর তিনি নিজে তাঁর সহযোগী জমিদারদের নিয়ে ৭০০ রণতরীসহ দ্রুত ইছামতী নদীপথে অগ্রসর হন এবং পদ্মার তীরে শত্রুর পরিখার ওপর আক্রমণ চালান। দিনের যুদ্ধ শেষে মুসা খান তাঁর প্রতিরোধব্যবস্থা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে যাত্রাপুর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ইছামতীর তীরবর্তী ডাকচরে একটি নতুন দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এক রাতের মধ্যে তৈরি হয় সুউচ্চ এক দুর্গ। দুর্গের চারপাশ ঘিরে খনন করা হয় গভীর পরিখা আর পরিখার প্রান্তে চারপাশে বাঁশের খুটি পুঁতে তৈরি করা হয় দুর্ভেদ্য বেষ্টনী। পরদিন এ নতুন দুর্গ থেকে মুসা খান শত্রুবাহিনীর ওপর আক্রমণ শুরু করেন। শুরুতেই দুর্গ থেকে নিক্ষিপ্ত কামানের গোলা শত্রুবাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ইসলাম খান তখন তাঁর শিবিরে খানা খাচ্ছিলেন। কামানের প্রথম গোলায় সুবাদারের খাবার কক্ষের সব তৈজসপত্র ও বাসন-কোসন চুরমার হয়ে যায় এবং তাঁর খাবার টেবিলের জন তিরিশেক খানসামা নিহত হয়। আর কামানের দ্বিতীয় গোলা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয় হাতির পিঠে আরোহী তাঁর পতাকাবাহককে। অচিরেই মুঘল বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। গোলন্দাজ বাহিনী নদীর উঁচু তীর থেকে মুসা খানের নৌবহরের ওপর অবিরাম গোলাবর্ষণ করতে থাকে। তাতে মাধব রায়ের এক ছেলে ও বিনোদ রায়ের এক ভাইসহ বহু নৌসেনা নিহত হয়, বহুসংখ্যক আহত হয়। মুসা খানের কয়েকটি রণতরী কামানের গোলার আঘাতে নদীতে ডুবে যায়। 

জাফর খান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর