বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

ইসলাম খানের অভিযান

মুসা খানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসলাম খান তাঁর বাহিনী নিয়ে শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরে অবস্থান নেন। তিনি খিজিরপুরকে আরও দুর্ভেদ্য ও সুরক্ষিত করে তোলেন এবং সেখানে তাঁর নৌবহর ও গোলন্দাজ বাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করেন। মির্জা নাথান কাত্রাবো নগরীর ওপর রাতে অতর্কিত আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধের সূচনা করেন (১২ মার্চ, ১৬১১)। গভীর রাতে ১৪০ অশ্বারোহী ও ৩০০ সেনা ঘোড়ার পিঠে এবং মির্জা নাথান তাঁর বাহিনী নিয়ে হাতিতে চড়ে গোপনে সাঁতরে শীতলক্ষ্যা পার হন এবং দাউদ খানের ঘাঁটি আক্রমণ করেন। দুই পক্ষে তুমুল মুখোমুখি যুদ্ধের পর দাউদ খান দুর্গ পরিত্যাগ করে তাঁর বাহিনী নিয়ে মুসা খানের সঙ্গে যোগ দেন। মুঘল নৌঅধ্যক্ষ ইহতিমাম খান তাঁর গোটা নৌবহর নিয়ে দুলাই নদী থেকে শীতলক্ষ্যায় এসে কদমরসুল ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালান। মির্জা নাথান তাঁর নৌবহর এবং বিপুলসংখ্যক পদাতিক, অশ্বারোহী, বন্দুকধারী, তীরন্দাজ সেনাসহ দ্রুত ইহতিমাম খানের সাহায্যে অগ্রসর হন। আকস্মিক এ আক্রমণ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে আবদুল্লাহ খান কদমরসুল দুর্গ ছেড়ে পশ্চাদপসরণ করেন। মির্জা নাথান এ সময় বন্দর খালের মোহনার কাছে মুসা খানের দুটি দুর্গের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালান। আকস্মিক এ আক্রমণ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে মুসা খান দুর্গ পরিত্যাগ করেন। মির্জা মুমিন তাঁর কিছুসংখ্যক অশ্বারোহী সেনাসহ বন্দর খাল অতিক্রম করে মুসা খানের সঙ্গে মিলিত হন। মির্জা নাথান তখন সহজেই খাল অতিক্রম করে আলাউল খানের অধীন অন্য দুর্গটিও অধিকার করেন।

একের পর এক পরাজয়ে মুসা খান এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েন যে তিনি রাজধানীতে অবস্থান করাও তখন নিরাপদ মনে করেননি। তিনি সোনারগাঁ পরিত্যাগ করে ইবরাহিমপুর চরাঞ্চলে পশ্চাদপসরণ করেন। সোনারগাঁর দায়িত্বে নিয়োজিত হাজি শামসুদ্দিন বাগদাদি পরে ইসলাম খানের কাছে আত্মসমর্পণ ও আনুষ্ঠানিকভাবে নগরের দায়িত্ব প্রত্যর্পণ করেন (মধ্য এপ্রিল, ১৬১১)।

স্বীয় রাজধানী শহরের পতন মুসা খানের প্রতিরোধ-ক্ষমতার গোটা ভিত্তিই বানচাল করে দেয়। রাজধানীর পতন ছিল বস্তুত তাঁর ব্যর্থতার স্মারক। অবশ্য তিনি তাঁর হৃত অবস্থান পুনরুদ্ধারে বেপরোয়া হয়ে কয়েকবারই মুঘলদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। কিন্তু এসব অভিযানে পুনঃপুনঃ ব্যর্থতা পরিণামে তাঁর আত্মসমর্পণকেই ত্বরান্বিত করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর