শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

নিম গাছের গুণাগুণ

নিম আমাদের দেশি গাছ, আবহাওয়া উপযোগী এবং যে কোনো ধরনের মাটিতে জন্মে। নিম গাছ দ্রুতবর্ধনশীল, পানির স্তর ধরে রাখে, মাটির ক্ষয় ও মরুময়তা রোধ করে। নিমের তেল মানুষ, গরু ও পশুপাখির উকুননাশক এবং চর্মরোগ নিরোধক। নিমের তেল, খৈল ও পাতা প্রাকৃতিক কীটনিবারক ও সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিমের কাঠ অধিক মূল্যবান, উন্নতমানের, স্বাস্ব্যকর ও পরিবেশসম্মত এবং এ কাঠ দিয়ে ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র তৈরি করা যায় যা উঁই, ঘুণ বা অন্য পোকায় নষ্ট করে না। নিম গাছ অন্যান্য গাছের চেয়ে বেশি অর্থকরী এবং পরিচর্যায় তেমন খরচ নেই। নিম বাড়ির আঙিনা, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতসহ সর্বত্র লাগানো যায়। নিম গাছের গন্ধে আশপাশের ফসলেও কীটপতঙ্গ আসে না তাই ফসলের মাঠেও নিম গাছ লাগানো উপকারী। তুলনামূলকভাবে নিমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অন্যান্য কাঠ, ফল ও ওষুধি গাছ থেকে অনেক বেশি। নিমের পাতা হাম, বসন্ত, ঘা, খুজলি, পাঁচড়া ও চুলকানিতে ব্যবহার হয়। নিম গাছে রোগব্যাধি হয় না এবং এ গাছ গরু-ছাগলে খায় না। এ গাছ জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে, পাখিরা এ গাছের ফল খায়। নিম জন্মনিয়ন্ত্রণ, মশক নিধন, কৃমিনাশক, অজীর্ণ ও ডায়াবেটিসে ব্যবহার হয়। নিমের শুকনো পাতা মূল্যবান কাপড়-চোপড়, বীজ ও ফসল সংরক্ষণে এবং পোকা দমনে ব্যবহার করা হয়। নিমের কসমেটিকস স্বাস্থ্য উপযোগী এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। নিমের শিকড়, ছাল, ডাল-পালা, পাতা, ফুল, ফল, বীজসহ সবই ব্যবহার-উপযোগী এমনকি নিমের ছাইও। দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখার জন্য, দাঁতের মাজন ও পেস্ট তৈরিতে নিম ব্যবহার হয়। নিমের তেল মাথা ঠান্ডা রাখে, টাকমাথায় চুল গজায়, চুল পড়া বন্ধ করে। নিম সার ও কীটনাশক, মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং উপকারী কীটপতঙ্গের জন্য ক্ষতিকর নয়। নিম কুষ্ঠ ও অজীর্ণ রোগে উপকারী, এটা অ্যান্টিসেপটিক এবং যৌনরোগ নিরামক। নিম একটি ধন্বন্তরি মহৌষধ এবং সর্বোপরি যে বাড়িতে নিম গাছ থাকে সে বাড়ি সব ধরনের রোগব্যাধিমুক্ত থাকে। নিম গাছকে বিজ্ঞানীরা আগামী শতকের মহামূল্যবান বৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং নিম গাছের তৈরি ওষুধ রাসায়নিক ওষুধের চেয়ে বেশি উপকারে আসবে বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে নিম অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আফতাব চৌধুরী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর