রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

রূপগঞ্জের অগ্নিকান্ড

বিপুল প্রাণহানির দায় নির্ধারিত হোক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫২ শ্রমিক। এখনো নিখোঁজ অনেক শ্রমিক। আগুন লাগার সময় কারখানার গেট তালাবদ্ধ থাকায় হতভাগ্য শ্রমিকরা নিজেদের বাঁচানোর কোনো চেষ্টাই করতে পারেননি। এ যেন ২০১২ সালের আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকান্ডের পুনরাবৃত্তি। সে সময়ও গার্মেন্টটির গেট বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা অসহায়ভাবে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজে তৈরি হতো পাকিস্তানের সেজান ব্র্যান্ডের আমের জুস-জাতীয় পানীয়। শ্রমিকদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। আগুন লাগে বৃহস্পতিবার বিকালে, ২০ ঘণ্টা পর শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ভিতর থেকে ফায়ার সার্ভিস একে একে কয়লা হয়ে যাওয়া ৪৯টি দেহ বের করে নিয়ে আসে। কে কার সন্তান চেনার উপায় নেই। এর আগে দগ্ধাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন মারা যান। আগুন নেভাতে দেরি হওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শ্রমিকদের স্বজন ও স্থানীয়রা। পুলিশের সঙ্গে তারা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হন। এ সময় কিছু সমাজবিরোধী হাশেম ফুডসের আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করে অস্ত্রাগার থেকে তিনটি শটগান লুটে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দগ্ধদের স্বজনদের ভিড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মর্গের সারি সারি লাশ থেকে স্বজনরা খুঁজছেন প্রিয়জনদের লাশ। কিন্তু চিনতেই পারছেন না প্রিয় মুখগুলো। স্বজনদের গগনবিদারী আর্তনাদে বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকান্ডে  বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের অসহায় মৃত্যু এ ধরনের কারখানার শ্রমিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে শ্রমিকদের তালাবদ্ধ রেখে কাজ করানোর পদ্ধতি কোনো সভ্য সমাজে কল্পনা করাও কঠিন। অগ্নিকান্ডের দায় নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনাসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর যথাযথ ক্ষতিপূরণে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর