সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

মর্কটদের থামান, ওরা যেন মাথায় ওঠে না বসে

মনজুরুল আহসান বুলবুল

মর্কটদের থামান, ওরা যেন মাথায় ওঠে না বসে

১. শিরোনামটি নিয়ে কিছুটা ধন্ধে আছি, ঠিক হলো কি না। বান্দর বা আরেকটু শোভন ভাষায় ‘বানর’ও বলতে পারতাম। কিন্তু ‘মর্কট’ই মাথায় ঘুরছে।

শব্দটি মাথায় গেঁথে রয়েছে ভিন্ন কারণে। দৈনিক ‘সংবাদ’ সম্পাদক আহমদুল কবির একই সঙ্গে প্রথিতযশা রাজনীতিকও ছিলেন। এক সময় তিনি ন্যাপ করতেন, ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ছিলেন তাঁর সমবয়সী। তুই-তুমি সম্পর্ক তাদের। ন্যাপ ভাঙলেও তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি। তাদের আড্ডায় আমরা কখনো যাইনি। তবে দুজনের সঙ্গেই নিবিড় সখ্য ছিল। আহমদুল কবিরই কথাচ্ছলে বলছিলেন : তিনি বন্ধুমহলে অধ্যাপক মোজাফফরকে ‘মর্কট’ ডাকতেন। ওই প্রথম শব্দটি শুনলাম। আহমদুল কবির বলছিলেন : আমি মোজাফফরকে ‘বানর’ই ডাকতাম, কিন্তু ওর আপত্তির কারণে শব্দটি বদলাতে হয়। কারণ অধ্যাপক মোজাফফর নাকি বলতেন, তুই সবার সামনে আমাকে বানর ডাকস, আর আমি কি অত বড়? কেমন শোনা যায়। আহমদুল কবির হেসে বলতেন : সেই থেকে আমি আর ওকে বানর ডাকি নাই, ডাকতাম ‘মর্কট’। অনেকেই বুঝত না, আর খুব কমসংখ্যক যারা বুঝত তারা মুখ টিপে হাসত। মানী লোকের মান রক্ষা আর কী? আজকের লেখাও ক্ষুদ্রদের বড় অপকর্ম নিয়ে।

‘মর্কট’-এর মানে হচ্ছে ক্ষুদ্রাকৃতির বানর। বানরই তবে ছোট আকারের।

২. গত কয়েক দিনের সংবাদপত্রের পাতায় সচিত্র খবর ও মর্কটদের কান্ডকারখানা কিছুটা ক্ষোভ নিয়েই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, উপহার : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর; উপলক্ষ : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। এ রকম একটি প্রকল্পে দুর্নীতির জন্য শুধু কয়েকজন ইউএনও মাত্র নয়, এর সঙ্গে ঠিকাদার নির্বাচন, কাজের মান না দেখে বাড়ি বুঝে নেওয়া, অর্থ ছাড়, ঠিকাদারসহ কাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাই দায়ী। প্রকল্পের ওপর-নিচের সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা দরকার, দ্রুত। জানা গেল, এ কাজের সঙ্গে রাজনীতিক/জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত ছিলেন না। সবাই জনপ্রশাসনের।

এরপর যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল তার কিছু শেয়ার করছি:

জামিলুর রহমান হেলাল : দারিদ্র্যকে সম্মান জানাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু চাটার দল এখানেও ভাগ বসাল। নষ্ট করে দিল এই মহান উদ্যোগটাকে। জনসম্মুখে এদের বিচার হওয়া উচিত।

ফরাজী আজমল হোসেন : এরা সব ক্ষুদে আমলা, নিজেদের সিএসপি অফিসার মনে করে! উপজেলা পর্যায়ে ক্ষুদে আমলারা সরকারি অফিস-বাসায় এসি লাগিয়েছে! আগে জেলা পর্যায়েও দেখিনি।

ওমর ফারুক : কঠোর শাস্তি চাই। এত বড় একটি কল্যাণমূলক সাফল্যকে যারা ম্লান করেছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না।

মোস্তফা ফিরোজ : লোম বাছতে গেলে কম্বলের অস্তিত্ব পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

শংকর লাল দাস : এ কাজে ঠিকাদার থাকার কথা নয়। এটি ইউএনওর নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাদের।

শাহীন বাবু : সরকার পারবে কি কঠোর হতে? মনে হয় না। গত ১২ বছরে কোনো লুটপাটকারী চোর ডাকাত আমলা কামলা বা জনপ্রতিনিধির দৃষ্টান্তমূলক সাজা হতে দেখা যায়নি। ক্ষমতায় থাকতে গেলে সমঝোতা করতেই হবে। কিছু কিছু জিনিস মেনেও নিতে হবে। প্রকল্প পরিচালক দায় না নিয়ে যা বলছেন, সেটা বড় বিনোদন, হাস্যকর। ...ওরা এত বেশি মাথায় ওঠে গেছে নামানো বেশ কঠিন।

রফিকুল ইসলাম রানা : যে টাকা বরাদ্দের বিপরীতে এ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, তার অবস্থা এই-ই হওয়ার কথা। বরাদ্দ ও প্ল্যান/ডিজাইন বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, এই বাড়ি বরাদ্দকৃত টাকায় কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। সমতল ভূমি, চর, নিচু ভূমি, বিল ভূমি সর্বত্র একই বরাদ্দ! যারা প্ল্যান করেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।

রেজাউল করিম : এর সঙ্গে কোনো জনপ্রতিনিধি জড়িত থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এত সময়ে তাদের বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করে দিত।

এ বি এম সালাউদ্দিন : আমলাদের কিছুই হবে না। কারণ ওদের হাত অনেক লম্বা। আজ পর্যন্ত ওদের কোনো বিচার হয়নি।

মোস্তফা ফিরোজ : রাজনীতির যে হাল তাতে তারা যুক্ত থাকলে ইট বালি সিমেন্ট সবই বিক্রি করে সাবাড় করত।

তোফায়েল আহমেদ : রাজনীতিকরা তবুও কিছুটা জনগণের কথা ভাবে, আমলারা কেয়ার করে না।

মইনুল ইসলাম মইন : যে যা-ই বলুক, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও নেতৃত্বের বিকল্প নেই।

শিরিন সুলতানা : গবেষণার বিষয়। তাদের হাতের রিমোট কেমনে শক্তিশালী হইলো!!

জাকির হোসেন ইমন : টাকাও গেছে, গালিও শুনছে।

নজরুল হায়াত : এটা লুটপাটের দেশ। যেগুলো এখনো ভাঙেনি দুই-এক বছরের মধ্যে সেগুলো ভাঙবে। আর যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত তারা নতুন বাড়ি গড়ে তুলবেন। আমাদের সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সারা জীবনের আয় ও সম্পদের হিসাব নিলে শুভঙ্করের ফাঁকি বেরিয়ে যাবে।

নিজামুল হক ভূঁইয়া : যার কাজ তারই সাজে; সাইট নির্বাচন থেকে শুরু করে ঘর নির্মাণ-সবই কারিগরি বিষয়। ...ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে গৃহহীন দরিদ্র মানুষের জন্য। এরা ঘর প্রাপ্তির পর সহসাই মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের আর্থিক সক্ষমতা রাখেন না। সংগত কারণেই এদের জন্য নির্মিত ঘর অধিকতর মজবুত ও টেকসই হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। অন্য কোনো সংস্থা এর দায়িত্বে থাকলে এতদিনে তোলপাড় শুরু হয়ে যেত; সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাসপেন্ড, অ্যারেস্ট, মামলা মোকদ্দমা, তদন্ত কমিটির ছড়াছড়ি দেখা যেত। কিন্তু অদ্ভুত কান্ড, এ প্রকল্পের বিষয়ে ন্যূনতম কোনো কিছু এখনো দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ নিয়মে প্রকল্প পরিচালকরা প্রকল্পের কাজের গুণগত মান ও আর্থিক বিষয়ে দায়বদ্ধ। জনগণের টাকার অপব্যবহার ও যথেচ্ছাচার কারও কাম্য নয়। অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।

মিজানুর রহমান : বরগুনার তালতলী উপজেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দেওয়া ঘর গত মার্চ মাসেই নির্মাণাধীন সরকারি ঘর ভেঙে পড়েছে।

সাদী হোসেন : অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। এ কাজগুলো কোনো ঠিকাদার নয়, সরাসরি ইউএনও নিজের তত্ত্বাবধানে জমি নির্বাচন, নির্মাণ কাজ এবং তা ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ইউএনওর ড্রাইভার, বাসার কাজের লোক এবং সচ্ছল ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভোলাতে নির্মাণ ও বরাদ্দকৃত ৯০ ভাগ ঘরই খালি পড়ে আছে, যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের এর চেয়ে উন্নত জায়গায় বাড়ি আছে। অনেক জায়গায় কাজ শেষ না করেও বিল উঠিয়ে নিয়েছেন ইউএনও সাহেবরা। এ প্রকল্পের ঠিকাদার ইউএনও, তদারকি কমিটির সভাপতি ইউএনও, বিল প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সেও ইউএনও এবং সবশেষে ভূমিহীনদের তালিকা প্রস্তুতকারী ইউএনও। তাই যা হওয়ার তাই হয়েছে। ভোলার সেই ইউএনও এখন আর ভোলায় নেই। বদলি হয়েছেন বরগুনা জেলার একটি উপজেলায়।

আজিজুর রহমান : যারা এরকম ঘৃণ্য জঘন্য কাজে লিপ্ত তাদের সাধারণ জনগণ দিয়ে গণধোলাইয়ের ব্যবস্থা করা হলে ওদের লোভ-লালসা নিয়ন্ত্রিত থাকত। অতি গোপনে নির্ভরযোগ্য কোনো সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের মাধ্যমে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি আমলা যেই হোক তার শাস্তি আমরা চাই।

উত্তম ভৌমিক : ঠিকাদার নিয়োগ করেনি। ওরা নিজেরাই কাজ করিয়েছে। যদি টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ করাত তাহলে এমন হতো না। এলজিইডির ঠিকাদাররা চার তলা স্কুল করছে।

জেবু আফরোজ : স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত না করার ফল হচ্ছে এই। যদি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি এরকম কাজ করত তাহলে তো তাঁদের বিরুদ্ধে এতদিনে দুদক তল্লাশি করে জেল জরিমানাও করে ফেলত। কবি নীরব।

রোটারিয়ান আমিনুল ইসলাম হিরণ : ঠিকাদার, পিআইও, ইঞ্জিনিয়ার, ইউএনও দায়ী। এদের সবার বিরুদ্ধে অ্যাকশন দরকার।

সাগর চৌধুরী : ভোলার দৌলতখানে প্রথম পর্যায়ে ৪২টি পরিবারের মাঝে দুই শতক খাস-জমিসহ সেমিপাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়। ...এ উপজেলায় এক গৃহবধূ তার জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ঘর পেয়েছেন। পরবর্তীতে ওই গৃহবধূর স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা ঘরটি এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেন। সহকারী শিক্ষা অফিসারের বাবার নামেও এ উপজেলায় ঘর বরাদ্দ আছে। ... কাগজ-কলমে হস্তান্তর দেখানো হলেও ছয় মাস ধরে এখনো নির্মাণ অসম্পূর্ণ আছে। ঘর নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিল উত্তোলন করেছেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তার গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকার নামেও দুটি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসের নাজিরের দুজন গৃহপরিচারিকার নামেও দুটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, ঘর নির্মাণের ব্যাপারে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার কাজ হচ্ছে ডিজাইন অনুযায়ী শ্রমিকদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া। ঘর বরাদ্দেরও কোনো কাগজপত্র আমার কাছে নেই। সাবেক ইউএনও কাজগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।

খবর ও জনপ্রতিক্রিয়ার আরও ব্যাখ্যা করার দরকার আছে বলে মনে করি না। যারা পত্রিকায় কলাম লিখতে পারেন না বা টিভি টকশোতে যেতে পারেন না তাদের ভাবনা ও তথ্যগুলোই কেবল তুলে ধরা হলো। কারণ তারাই সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি।

৩. সবশেষ খবর : ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে ২২ জেলার ৩৬ উপজেলায় ঘর নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তদন্তে আপাতত ৩৬টি উপজেলার অনিয়মের তথ্য ওঠে এসেছে। তারই ভিত্তিতে ইউএনও ও এসি ল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী পাঁচ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। প্রকল্প তদন্তে শতাধিক কর্মকর্তার নাম এসেছে। পর্যায়ক্রমে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠপর্যায়ে কাজটির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নেতৃত্বাধীন একটি কমিটিকে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন উপজেলা প্রকৌশলী, এসি ল্যান্ড, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের সাবেক ইউএনও বর্তমানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত উপসচিব শফিকুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ সদরের সাবেক ইউএনও বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবায়েত হাসান শিপলু, বগুড়ার শেরপুরের সাবেক ইউএন ও বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিয়াকত আলী সেখ, বরগুনার আমতলীর ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান ও মুন্সীগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিনকে ওএসডি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে উপসচিব শফিকুল ইসলামের নামে বিভাগীয় মামলা হয়েছে, কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে আমতলীর ইউএনওকে। এখন শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি। এক কর্মকর্তা বলেন, কমিটিতে শুধু ইউএনওরা ছিলেন না, বাকিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আরেক কর্মকর্তা বলেন, ঘর নির্মাণ একটি টেকনিক্যাল কাজ, এ কাজটি কেন ইউএনওদের মাধ্যমে করাতে হলো? টেকনিক্যাল কাজ তো প্রকৌশল বিভাগের। তাদের কেন মূল দায়িত্ব দেওয়া হলো না?

কে দেবে জবাব।

৪. সরকার তো উন্নয়ন কাজ করবেই। কিন্তু এর মধ্যেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের সৃজনশীল নানা উদ্যোগ তাদের অমর করে রাখে। যেমন উপকূল এলাকায় এখনো শুনতে পাওয়া যায় ‘মুজিব কেল্লা’র কথা। প্রধানমন্ত্রীর সৃজনশীল নানা উদ্যোগের দৃষ্টান্ত হাত বাড়ালেই মিলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে-আমার বাড়ি আমার খামার, আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম, নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রমসমূহ, সবার জন্য বিদ্যুৎ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ, বিনিয়োগ বিকাশ ও পরিবেশ সুরক্ষা। এর মধ্যেই রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প যা নিয়ে এত আলোচনা। দৃশ্যত সারা বিশ্বেই সম্ভবত এমন প্রকল্প নেই যেখানে লাখ লাখ মানুষকে জমির মালিকানাসহ আবাসন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছু মর্কটের কারণে এ প্রকল্পটি কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে পড়ল। তবে আশার কথা, এ প্রকল্পের সঙ্গে এখনো ক্ষমতাসীন দলের কারও জড়িত থাকার কথা আসেনি। বরং সরকারি দল থেকেই জোর তদন্তের দাবি জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে, তদন্ত করছেন প্রশাসনের সিনিয়ররাই।

৫. মর্কট বা বানর বা বান্দর দিয়েই শুরু করেছিলাম, তাদের দিয়েই শেষ করি।

রাজ দরবারে এক রাজা সিংহাসনে আসীন। তার পাশের এক নিচু আসনে অবনত মস্তকে বসে আছে এক বানর, রাজার পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একটু পর পর রাজা একটা কলা ছিঁড়ে বানরটিকে কাছে ডাকেন, তাকে কলাটি খেতে দেন। কলা খাওয়ার পর রাজা বানরটির মাথায় দুটি চড় কষে দিলেন। বানরটি আবার নিজের জায়গায় স্থান নিল। এক প্রাণীপ্রেমিক দর্শনার্থী বেশ কয়েকবার দেখে রাজাকে বললেন : বানরটির সঙ্গে এই আচরণ কেন করা হচ্ছে। তাকে খাবারও দেওয়া হচ্ছে আবার মারাও হচ্ছে, কেন? রাজা হেসে বললেন : বানরটি আমার পাশের আসনেই বসত। তাকে প্রথম কয়েক দিন কলা দেওয়ার পর সে লাফ দিয়ে কোলে এসে বসা শুরু করল, আরও কিছুদিন পর বানরটি কলা হাতে নিয়েই ওঠে যেত কাঁধে-ঘাড়ে, আরও কিছুদিন পর বানর কলা হাতে নিয়েই ওঠে গেল মাথায় এবং আমার (রাজার) মাথাটিকেই মনে করত খেলার মাঠ। অতিষ্ঠ রাজা বানরটিকে মাথা থেকে নামালেন, পাশের আসনটি নিচু করলেন, পায়ে হাত বুলানোর কাজ দিলেন এবং প্রতিবার কলা দেওয়ার পর দুটি চড় কষে দিলেন যাতে বানরটি বুঝতে পারে তার আসল স্থান কোথায়। সে যাতে রাজার মাথায় ওঠার সাহস না দেখায় এ জন্যই এই ব্যবস্থা।

প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন প্রকল্প, যার সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন স্মারক জড়িয়ে, সেই প্রকল্প নিয়ে নয়ছয় করার সাহস যারা দেখাল, তারা যে মাথায় ওঠার চেষ্টা করছে সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। এ মর্কট দল তাঁদের পেশাগত জীবনের শুরুতেই যে সাহস দেখিয়েছে সে জন্য তাদের চড়-থাপ্পড় দিয়ে নিচে না নামালে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে, আরও বড় পদে প্রমোশন পেলে তারা যে রাষ্ট্রের মাথায় চেপে বসবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

তাদের সম্পর্কে জনগণ কী ভাবে ও কী চায় তা উল্লেখ করা হয়েছে শুরুতেই। এ মর্কটরা সরকারি কলায় ভোজন শেষে স্থানীয় পর্যায়ে নিজেদের সব দন্ড মুন্ডের কর্তা ভাবেন। এ মর্কটদের এখনই থামাতে হবে, তাদের শাস্তি দিয়ে অন্যদের কঠোর বার্তা দিতে হবে। মর্কটদের মাথায় ওঠার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না, এটাই জন দাবি।

আশা করি তদন্তকারীরা এটি বুঝতে পারবেন। তদন্ত যদি যথাযথ না হয়, মর্কটদের অপকর্মের দৃশ্যমান বিচার যদি না হয়, তাহলে ক্ষমতাসীন সরকার ও দলকেই মূল্য দিতে হবে- গরিবের এ কথাটি মনে রাখবেন।

               

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।

সর্বশেষ খবর