বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

হায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার!

আলম রায়হান

হায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার!

‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ শীর্ষক চমৎকার উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ভূমিহীন পরিবারকে সরকার ঘর দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের নিরন্তর প্রয়াস অধিকতর গতিশীল হয়েছে মুজিব শতবর্ষে এসে, যখন বাংলাদেশ পেরিয়ে এসেছে অর্ধশত বছর। নানান প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এগোচ্ছে দেশ। এর মধ্যে মহাবিপর্যয় হিসেবে এসেছে করোনা মহামারী। এর পরও পরাভব মানেনি বাংলাদেশ। দেশের অগ্রগতি অব্যাহত। বিশেষ করে পদ্মা সেতুসহ বিগত এক যুগের অগ্রগতির ধারা আরও হৃদয়গ্রাহী হয়েছে গৃহহীনদের গৃহ দেওয়ার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। কিন্তু শুরুতেই ঘটল অঘটন। যদিও এখনো শেষ দেখাটা বাকি। প্রবচন- ‘সব ভালো যার শেষ ভালো তার’। কিন্তু সব ক্ষেত্রে শেষটা দেখার ধৈর্য সাধারণত থাকে না। বিশেষ করে যে বিষয়ে আবেগমিশ্রিত প্রত্যাশা থাকে সুউচ্চ।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রকল্প জনমনে বিশাল প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু উপহারের ঘরগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার আগে-পরে ধরা পড়েছে নানান অসংগতি। বেশ কয়েকটি উপজেলায় উপহারের অনেক ঘরে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক ঘরের ভাঙনদশা এমন পর্যায়ে রয়েছে যা আর মেরামতযোগ্য নয়। আবার কোনো কোনো আবাসন এলাকা পানিতে থইথই। মনোহর ঘরগুলো যেন জলে ভাসা পদ্ম! এ বিষয়ে ছবি এবং খবর প্রকাশিত হয়েছে বহু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

অথচ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো দেশে নতুন একটি দিগন্তের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু ঘর নিয়ে অনাসৃষ্টি সচেতন মহলে হতাশা সৃষ্টি করেছে। কথায়ই তো আছে- ‘সর্বনাশের জন্য এক মণ দুধে এক ফোঁটা চোনাই যথেষ্ট!’

এমনই খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২ জুলাই। এ খবরের শিরোনাম ‘আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর’। প্রথম আলোয় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, ‘বগুড়ায় পাঁচ মাস পর ধসে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর’। এ রকম একাধিক খবর যখন ঘন ঘন আসছিল তখন সোচ্চার হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। চলমান নিয়মিত ব্রিফিংয়ের ধারায় ৮ জুলাই তিনি বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি নিয়ে অনিয়মকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।’ ঠিক একই দিন খবর প্রকাশিত হয়েছে, ‘নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করায় বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১১টি ঘর ভেঙে পড়েছে।’ এর দুই দিন পর ১০ জুলাই প্রকাশিত খবরের শিরোনাম হচ্ছে- ‘ওবায়দুল কাদেরের এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল, সামনে থইথই পানি’।

চিরকাল জানা কথা- ঝড়ে ঘর পড়ে। আবার একটি প্রবচন আছে- ‘ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে’। কিন্তু কেউ কখনো দেখেনি বা প্রবচন শোনেনি- আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঘর পড়ে! তা-ও আবার খড়ের বা বাঁশ-গোলপাতার ঘর নয়, ইট-সিমেন্টের টিনশেড পাকা ঘর। বেশ দৃষ্টিনন্দন ঘর নির্মাণ করা হয়েছে গৃহহীনদের জন্য। কিন্তু এ কেবল ‘ওপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট’। এ প্রবচন প্রমাণিত হয়েছে উপহারের ঘর নিয়ে একাধিক খবরে।

এসব খবরের পরিপ্রেক্ষিতে অথবা অন্য সূত্রে প্রাপ্ত খবরের আলোকে ক্ষমতাসীন দলের বেশ ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল কাদের ৮ জুলাই যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেশবাসী নিশ্চয়ই আশ্বস্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ বক্তব্য দেওয়ার সময় পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন লেখক ও মন্ত্রী এবং সাবেক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের। তাঁর প্রদত্ত তথ্য হচ্ছে, ‘প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বাড়ির মধ্যে ২৪টি স্থানের নির্মাণকাজের ত্রুটি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, যা বাস্তবায়িত প্রকল্পের ০.২৫ ভাগ। ত্রুটিপূর্ণ যে ০.২৫ ভাগ স্থাপনা চিহ্নিত হয়েছে তা সরকারি খরচে মেরামত এবং প্রয়োজনে পুনর্নির্মাণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এসব গৃহ সরকারি খাসজমিতে নির্মিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে খাস ভূমিসহ তুলনামূলক নিচু স্থানে হওয়ায় স্থাপনাসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার পরও বিশাল কর্মযজ্ঞের হিসাবের খাতায় ক্ষুদ্র অংশে ত্রুটি দেখা দিলেও যারা এ ত্রুটির জন্য দায়ী এবং দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

ওবায়দুল কাদের যথার্থই বলেছেন, ‘এ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মহৎ উদ্যোগ এবং গভীর আবেগ ও ভালোবাসার কর্মসূচি।’ সবাই মনে করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর এ আবেগ ও ভালোবাসা পুরোটাই জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত আবেগ ও ভালোবাসার পরও উল্লিখিত ঘরগুলোর এ বেহাল দশা হলো কেন? এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা ছিলেন বা আছেন তারা সবাই সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর এ আবেগ-ভালোবাসা এবং জন-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করতে পারেননি। অথবা সরকারবিরোধী ‘দুষ্ট চক্র’ এ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে খেলেছে। আর এ চক্রের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা অপশক্তি। তবে নেপথ্য কারণ যা-ই হোক, গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও আবেগ এবং জন-আকাক্সক্ষার সমান্তরালে হাঁটতে পারেননি অথবা কেউ কেউ হাঁটলেও অনেকেই হাঁটেননি। তার প্রমাণ আড়াই ঘণ্টা বৃষ্টিতে নজিরবিহীন অনাসৃষ্টি!

তবে প্রধানমন্ত্রীর আবেগ ধারণ করেছেন, নিদেনপক্ষে চেষ্টা করেছেন নিশ্চয়ই এমন কর্মকর্তাও আছেন। এমন একজন ইউএনও সিমেন্ট সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। এখানে কোনো আপস হবে না, ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ নেই। অতএব অন্যান্য সামগ্রীর মতো সিমেন্টও হতে হবে উচ্চমানের, ব্র্যান্ডেড।’ ঘটনচক্রে এ আলাপের সময় আমি এবং এক সহকর্মী কাজী হাফিজ সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু সবাই যে এ প্রবণতায় চলেননি তার একাধিক প্রমাণ তো এরই মধ্যে বেশ স্পষ্ট হয়েছে। এবং কতিপয় সরকারি কর্মকর্তার অপকর্ম উন্মোচিত হতে শুরু করেছে গণমাধ্যমের রিপোর্টে। এবং বিলম্বে হলেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি দেশবাসীকে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এজন্য তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু এ সময় ওবায়দুল কাদের আরও কিছু কথা বলেছেন যা বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া কঠিন, ধন্যবাদ দেওয়া তো অনেক পরের বিষয়।

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বাড়ির মধ্যে ২৪টি স্থানের নির্মাণকাজের ত্রুটি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, যা বাস্তবায়িত প্রকল্পের ০.২৫ ভাগ।’

সেতুমন্ত্রী যেদিন মোট ২৪ স্থানে ত্রুটির কথা উল্লেখ করে একটি পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছেন সেদিনই অঘটনের আরও ১১টি ঘটনার যোগ হয়েছে। যা ছিল তার পরিসংখানের বাইরে। এরপর আরও যে যোগ হয়েছে তাতে রয়েছে খোদ সেতুমন্ত্রীর এলাকার ঘরও। সব মিলিয়ে উপহারের ঘর নিয়ে বেদনাদায়ক যে ঘটনা ঘটেছে তা ‘হাঁসের পালকে পানির ছিটা’ হিসেবে উপেক্ষা করা যায় না। এ সুযোগও নেই। এদিকে এ পর্যন্ত অঘটনেরর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮। কিন্তু এ সংখ্যাকেই সর্বশেষ ধরে নেওয়া সম্ভবত সংগত হবে না। কারণ, ‘না মিটিতে সাধ ভাঙিল মেলা’ গানের ধাঁচে ‘হস্তান্তরের আগেই ভাঙিল ঘর’। কাজেই ঘর নিয়ে অঘটন ‘এখানেই সমাপ্ত হলো’ মনে করার ক্ষেত্রে খুব কি বেশি ভরসা করা ঠিক হবে? মনে হয় উত্তর নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

আরও আশঙ্কার একটি বিষয় আছে। তা হচ্ছে, ইট-সিমেন্টের ঘরগুলো যেভাবে ভেঙেছে তাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটতে পারত। ভাগ্যক্রমে ঘটেনি। কিন্তু সব সময় যে ভাগ্য অতীব সুপ্রসন্ন থাকবে তা কি জোর দিয়ে বলা যায়? নিশ্চয়ই নয়। এদিকে মন্ত্রীর আর একটি কথা মেনে নেওয়া কঠিন। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এসব গৃহ সরকারি খাসজমিতে নির্মিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে খাস ভূমিসহ তুলনামূলক নিচু স্থানে হওয়ায় স্থাপনাসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ সাধু! সাধু!! মন্ত্রীর বচন অমৃতসম। তবু অতীব বিনয়ের সঙ্গ প্রশ্ন হচ্ছে, নিচু জমিতে ঘর নির্মাণ করা হলো কেন? এ তো দৈব আদেশ ছিল না! আবার এ রকম কোনো বিষয় চাঁদে দেখা গেছে বলে তো কেউ গুজবও রটায়নি। তাহলে নিচু জমিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করা হলো কেন? কোনো একসময় মাননীয় মন্ত্রী কি এর জবার দেবেন? অথবা যে কর্মকর্তারা স্থান নির্ধারণ করেছেন তাদের এ বিষয়ে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে কি না নিশ্চিত হওয়া কঠিন।

তবে নিশ্চিত খবর, সেতুমন্ত্রীর আশ্বাস কেবল নয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ৯ জুলাই সকালে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পরিদর্শন শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তে গঠিত পাঁচটি টিম। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কি না যাচাই করে প্রতিবেদন দেবে উল্লিখিত পরিদর্শন টিমগুলো। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, একটি টিমের নেতৃত্বে আছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মাহবুব হোসেন! এটিকে গোড়ায় গলদ হিসেবে বিবেচনা করা খুব অন্যায় হবে বলে মনে হচ্ছে না। বিরাজমান বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে গঠিত তদন্ত খুব কঠোরভারে মনিটরিং না করা হলে তদন্ত রিপোর্টে কী হতে পারে সে বিষয়ে কল্পনার পথে না হেঁটে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় ১১টি ঘর নিয়ে ৮ জুলাই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন মাসুদ জানিয়েছেন, ঘর ভেঙে পড়ার পেছনে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসকে দায়ী করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি। ইউএনও বলেন, ঘর ভেঙে পড়ার পরে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ‘নির্মাণ ত্রুটিতে নয়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ঘর ভেঙে পড়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য ইউএনওর তথ্যানুসারে স্থানীয় প্রশাসনের তদন্তে যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কথা বলা হয়েছে তাতে কিন্তু ওই এলাকার অন্য কোনো ঘর বা স্থাপনার ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তাহলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস কি কেবল প্রধানমন্ত্রীর উপহারকে আঘাত করার জন্যই এসেছিল? তা হওয়ার তো সুযোগ নেই।

এ ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই তদন্ত কমিটি বালখিল্য কথাবার্তাসংবলিত রিপোর্ট দেয় এবং এসব রিপোর্টের আলোকেই পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন ও সংবেদনশীল। পাশাপাশি দেশবাসীর প্রত্যাশ্যা, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের মনিটরিংয়ের আওতায় যে তদন্ত টিম গঠিত হয়েছে তার কার্যক্রম কোনো ভ্রান্তি বা গোঁজামিলের পথে হাঁটবে না। বরং প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে এমনই প্রত্যাশা সবার। তবে এটি বিবেচনায় রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভাঙার ফলে জনমনে যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে তা সহসা জোড়া লাগার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি অনুসারে ঘরগুলো নির্মাণের নিচু স্থান এবং ত্রুটির যে ধরন দৃশ্যমান তাতে এগুলো মেরামত করে বসবাসের যোগ্য করা কতটা সম্ভব হবে তা-ও কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। এ রকম নানান প্রশ্ন আছে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, গৃহহীনদের গৃহ দেওয়ার রাষ্ট্রের এত বড় একটি উদ্যোগ কার্যকরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা অবহেলা অথবা পুকুরচুরির ধৃষ্টতা দেখালেন কোন সাহসে! এরা কি প্রাচীনকালে অজানা সমুদ্র পাড়ি দেওয়া নাবিকদের মতো দুঃসাহসী, নাকি মূর্খ, নাকি ঘরের শত্রু বিভীষণ?

এটি আশা করা সংগত হবে, নির্মিত ঘরগুলোর বিষয়ে তদন্তের পাশাপাশি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদেরও কঠিন মনিটরিং ও শাস্তির আওতায় আনা হবে। আর এর দায় কেবল প্রকল্প কর্মকর্তা ও ইউএনও পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। নিদেনপক্ষে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসিদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে যেতে হবে প্রশাসনের আরও ওপরে। কেননা, প্রশাসন এখন কতটা ক্ষমতাধর এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বেপরোয়া, সে বিষয়টি মহান জাতীয় সংসদে তোফায়েল আহমেদসহ সিনিয়র নেতারা তুলে ধরেছেন। যে বাস্তবতা দেশবাসী বেশ টের পাচ্ছেন! সরকারের নীতিনির্ধারকরা কি এ বিষয়টি অনুভব করছেন? করলে ভালো, না হলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভাঙার মতো অনেক কিছু ভাঙার অঘটন ঠেকানো কঠিন হতে পারে।

লেখক :জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

সর্বশেষ খবর