বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

ডাকচর দুর্গ অধিকার

ইসলাম খান এবার ডাকচর দুর্গ অধিকারের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। কিন্তু এ কাজটি ছিল খুবই দুরূহ। এ দুর্গের তিন দিকে ছিল নিচু জলাভূমি, একদিকে নদী। এ প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার কারণে সরাসরি দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছাও সম্ভব ছিল না। রণতরী নিয়ে দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে মুঘল সেনারা রাতে সঙ্গোপনে একটি শুষ্ক মরা খাল পুনঃখনন করে এ খালপথে তাদের নৌবহর নিয়ে ইছামতী নদীতে পৌঁছে। কিন্তু এই করেও দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছার সব চেষ্টাই তাদের ব্যর্থ হয় এবং এতে বহু সেনা হতাহত হয়। দুর্গের বুরুজ থেকে অনবরত কামানের গোলাবর্ষণ চলতে থাকে, আর ওদিকে পদ্মায় মুসা খানের নৌবহর থেকে গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবর্ষণও সমভাবে অব্যাহত থাকে। এই প্রবল প্রতিরোধের মুখে দুর্গ অভিমুখে শত্রু বাহিনীর অগ্রগতি অসম্ভব হয়ে পড়ে। মুঘলরা এবার রাতে গোপনে দুর্গের কাছে পৌঁছার উদ্যোগ নেয়। তারা দুর্গের পরিখার অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষিত অংশটি বেছে নেয় যেখানে কাদামাটির আস্তর ছিল কম প্রশস্ত। পদাতিক সেনারা তখন দুর্গ থেকে এবং মুসা খানের রণতরী থেকে অবিরাম গোলাবর্ষণের মধ্যে নিজেদের ঢালের আড়ালে অন্ধকারে অগ্রসর হতে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রচেষ্টায় বহুসংখ্যক মুঘল সেনা নিহত হয়। এ পরিস্থিতিতে মুঘল সেনারা তাদের রণতরী থেকে কিছুসংখ্যক গার্দুনহা (চাকাবিশিষ্ট ওয়াগন) অকুস্থলে নিয়ে আসে। এগুলো সাধারণত রণতরীতে পর পর সাজিয়ে চলমান সেতু তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো। এরপর তারা এ গার্দুনহাগুলো পর পর সাজিয়ে এর পাশে খড় ও কাদামাটির স্তূপ দিয়ে তৈরি করে কৃত্রিম প্রতিরোধ বেষ্টনী। আর এ বেষ্টনীর আড়ালে রাতের অন্ধকারে তারা পৌঁছে যায় দুর্গপ্রাচীরের কাছাকাছি। এরপর মুঘল সেনারা ভোরের আগেই দুর্গপ্রাকার ভেঙে ডাকচর দুর্গে ঢুকে পড়ে (১৫ জুলাই, ১৬১০)। এক মাসের অধিককাল অবরোধের পর ডাকচর দুর্গ মুঘল করতলগত হয়।

►জাফর খান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর