শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

জিলহজের গুরুত্ব ও ফজিলত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জিলহজের প্রথম দশকের চেয়ে উত্তম দিন নেই যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহর পথে জিহাদও নয় হে আল্লাহর রসুল? জবাবে তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সেই মুজাহিদ ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে স্বীয় জানমাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে পড়ে এরপর এর কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না তার আমলের চেয়ে উত্তম।’ বুখারি, নাসাঈ, আবু দাউদ। জিলহজের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে বিধায় আল্লাহ এ দিনগুলোর কসম করেছেন। করণীয় ইবাদতের বিষয়গুলো হচ্ছে- ১. যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হজ করার সামর্থ্য আছে (ওজর ছাড়া) তার/তাদের যথাশিগগিরই ফরজ হজ সম্পাদন করা। ২. হাজীসহ যারা হজ করবেন না তাদের মধ্যে যারা কোরবানি করার সামর্থ্যবান ব্যক্তি/ ব্যক্তিবর্গ তারা জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত তাদের স্ব স্ব নখ, চুল, গোঁফ বা কোনো লোম কাটতে পারবেন না। ৩. আমরা যারা হজে যাচ্ছি না তারা ১ থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত নয়টি নফল রোজা রাখব। সম্ভব না হলে কমপক্ষে আরাফার (৯ জিলহজ) দিনের অর্থাৎ হাজিরা যেদিন আরাফায় অবস্থান করেন ওই দিনের রোজা রাখব। কেউ ৮ ও ৯ জিলহজ রোজা পালন করলেও করতে পারেন কারণ নফল রোজা তো রাখা যাবে। তবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদিসে বলেন, ‘আরাফার দিনে রোজা পালন করলে আমি আশা করি আল্লাহতায়ালা রোজা পালনকারীর বিগত এক বছরের এবং আগামী এক বছরের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।’ এ ছাড়া আরাফার দিনের আরেকটি অন্যতম নিয়ামত আমরা পেয়েছি যা হচ্ছে আল্লাহ বিদায় হজের এ দিনে (অর্থাৎ দশম হিজরি সনের ৯ জিলহজ) আমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করার আয়াত নাজিল করে আমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পন্নকরত ইসলামকে দীন মনোনীত করেছেন। সুরা মায়িদা, আয়াত ৩। এসব কারণে ৯ জিলহজ হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। তাই আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য করে তাঁকে অনুসরণ করে ইবাদত করতে হবে। এর বাইরে যত ইবাদত করা হবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ৪. ১ জিলহজ ভোর থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত বেশি বেশি তাকবির বলতে হবে। সুবহানাল্লাহি ওয়াল আলহামদুলিল্লাহি ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা কালাহু লাহুল মুলক ওয়ালাহুল হামদ ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির বেশি বেশি পাঠকরত আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে। ৫. ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় ও জিকির আজকার করে নেকি অর্জন। ৬. সাধ্যমতো দান-সদকা করে পুণ্যের পাল্লা ভারী করার চেষ্টা। ৭. বেশি বেশি তওবা-ইসতিগফার করে অতীতের পাপ মার্জনা এবং ভবিষ্যতে সৎ পথে চলার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। ৮. ১০ জিলহজ ঈদের নামাজ আদায় করে কোরবানি করা। তবে যিনি বা যারা নামাজ আদায় করেন না তাদের কোরবানি কবুল হবে না কারণ নামাজ পরিত্যাগকারীর ইমান প্রশ্নবিদ্ধ। তারা মুত্তাকি নয়। আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন। সুরা মায়িদা, আয়াত ২৭। নামাজ পরিত্যাগকারীদের কোরবানি করতে হলে তাদের তওবা করে নামাজ আদায় করে কোরবানি করতে হবে তা হলেই তাদের কোরবানি কবুল হবে। সুরা ফুরকান, আয়াত-৭১, সুরা তাহরিম, আয়াত ৮)। ৯. ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর নামাজ পর্যন্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর ওয়াজিব তাকবির পাঠ করতে হবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে জিলহজের নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর