সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের হুমকি

চোখ-কান খোলা রাখতে হবে

আফগানিস্তানমুখী হচ্ছে বাংলাদেশি জঙ্গিরা এবং ইতিমধ্যে এ অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জঙ্গিদের আফগানমুখী হওয়ার প্রবণতা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। ঐতিহ্যগতভাবে আফগানরা স্বাধীনচেতা জাতি। বিদেশি আধিপত্যের ঘোরতর বিরোধী। আশির দশকে বাদশাহ জহির শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসে কমিউনিস্টরা। ক্ষমতার এ পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারেনি সে দেশের সিংহভাগ মানুষ। সেই সুযোগ নেয় কমিউনিস্টবিরোধী পশ্চিমা শক্তি। তারা আফগান মোল্লাদের উসকে দেয় সোভিয়েতপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে মুজাহিদীন নামের জঙ্গি গ্রুপগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাদের দমনে আফগান সরকারের সমর্থনে পাঠানো হয় সোভিয়েত সৈন্য। যা সাধারণ আফগানদের স্বাধীনচেতা মনোভাব ও জাতীয়তাবোধে আঘাত হানে। ওই সময় মাদরাসা ছাত্র বা তালেবানদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ। আফগানদের সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যক কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক যুক্ত হয়। যার একটি বড় অংশ দেশে ফিরে আসে উগ্রপন্থি ধারার বীজ সঙ্গে নিয়ে আসে। সেই আফগানফেরত যোদ্ধাদের উদ্যোগেই ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) কার্যত আত্মপ্রকাশ করে। আফগানফেরতরা বেশির ভাগই ওই দলের সঙ্গে যুক্ত হন। আফগান যুদ্ধের সময় তারা গেরিলা যুদ্ধ ও ভারী অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। হুজিকে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৫ সালের অক্টোবরে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হুজি পুনরায় নাম পাল্টে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর আবারও সে দেশে তালেবানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে জঙ্গিবাদের বিকাশ রুদ্ধ হলেও আফগানিস্তানের তালেবান উত্থানে তারা বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জঙ্গিদের আফগানমুখী হওয়ার প্রবণতা শুধু রোধ করা নয়, কোনোভাবে তারা যাতে ছোবল হানতে না পারে সে ব্যাপারে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর