মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ঈদুল আজহা ও কোরবানি

এম এ মান্নান

ঈদুল আজহা ও কোরবানি

ঈদুল আজহা আগামীকাল। সবাইকে ঈদ মুবারক। ঈদুল আজহার সঙ্গে রয়েছে কোরবানির সম্পর্ক।  যে কারণে আমাদের দেশে ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোরবানি হচ্ছে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি আরজ করলাম ইয়া রসুলুল্লাহ! এ কোরবানি কী? তিনি ইরশাদ করলেন তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।’ আবু দাউদ। আল কোরআনে কোরবানিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.)-এর ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এরপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহিম বলল, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে তোমাকে আমি জবাই করছি, এখন তোমার অভিমত কী বল? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা করুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে কাত করে শোয়াল তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে! এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করি।’ সুরা সাফফাত, ১০২-১০৫। হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে আল্লাহর নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে নিজ পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ইসমাইলকে নিয়ে মিনার একটি নির্জন স্থানে যান এবং তাঁর চোখ বেঁধে মাটিতে শুইয়ে দেন। এরপর কোরবানির জন্য পুত্রের গলায় ছুরি চালান। কিন্তু আল্লাহ তাঁর নির্দেশ পালনের প্রতি পিতা এবং পুত্রের অপরিসীম ত্যাগ স্বীকারে খুশি হন এবং হজরত ইসমাইলকে (আ.) রক্ষা করেন। আর আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত একটি মেষ বা দুম্বাকে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে কোরবানি করা হয়।

হাদিসে এসেছে, ‘রসুল (সা.) হজরত ফাতিমা (রা.)-কে তাঁর কোরবানির সময় উপস্থিত থাকতে বলেন এবং ইরশাদ করেন, এ কোরবানির প্রথম রক্তবিন্দু প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতায়ালা তোমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! এটা শুধু আহলে বাইতের জন্য নাকি সব মুসলিমের জন্য? উত্তরে তিনি ইরশাদ করেন, এ ফজিলত সব মুসলিমের জন্য।’ মুসনাদে বাজজার, আত্তারগিব ওয়াত্তারহিব।

যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এ ইবাদতটি পালন করে না তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তির কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ মুস্তাদরাকে হাকেম, আত্তারহিব।

কোরবানির প্রয়োজনীয় কিছু মাসালা : ক. ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্ক নর-নারীর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার কোরবানি করা ওয়াজিব।

খ. কোরবানির নিসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কোরবানির দিনগুলোয় থাকলেই তা ওয়াজিব হবে। সূত্র : বাদায়েউস সানায়ে, রদ্দুল মুহতার। নাবালেগ সন্তানাদি নিসাবের মালিক হলেও ওদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। বাদায়েউস সানায়ে, রদ্দুল মুহতার। গরিব ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়; তবে সে যদি কোরবানির নিয়তে কোনো পশু কেনে তাহলে তা কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। বাদায়েউস সানায়ে।

গ. মোট তিন দিন কোরবানি করা যায়। জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে জিলহজের ১০ তারিখেই কোরবানি করা উত্তম। মুয়াত্তা মালিক, বাদায়েউস সানায়ে, আলমগিরি।

ঘ. কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোয় ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে তাহলে পরে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ভাগের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। বাদায়েউস সানায়ে, কাজিখান। উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্য গরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। কাজিখান, বাদায়েউস সানায়ে।

কোরবানির উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এক বছরের কিছু কমও হয় কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট যে তা দেখতে এক বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি জায়েজ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয় মাস বয়সের হতে হবে। কাজিখান, বাদায়েউস সানায়ে। একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কোরবানি দিতে পারবেন। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবেন। মুসলিম।

ঙ. সাতজন মিলে কোরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যে কোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। মুসলিম, বাদায়েউস সানায়ে। যদি কেউ আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে বা লোক দেখানোর নিয়তে কোরবানি করে তাহলে কারও কোরবানি হবে না। বাদায়েউস সানায়ে, কাজিখান।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর