রবিবার, ২৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কোরবানির শিক্ষা লেগে থাকুক জীবনভর

মাহমুদুল হক জালীস

কোরবানির শিক্ষা লেগে থাকুক জীবনভর

কোরবানি  ওয়াজিব (আবশ্যকীয়) আমল সামর্থ্যবানের জন্য। এর মাধ্যমে কোরবানিদাতার মনের গহিনে থাকা আল্লাহর প্রতি অসীম প্রেম-ভালোবাসার নজরানা পেশ করা হয়। তবে মনে রাখতে হবে পশু কোরবানি করাই কিন্তু আল্লাহর কাছে মুখ্য বিষয় নয়; বরং আল্লাহভীতিই এখানে মুখ্য বিষয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এর গোশত ও রক্ত, পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ সুরা হজ, আয়াত ৩৭। তাই তো যে কোরবানির সঙ্গে তাকওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আবেগ জড়িত নেই আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই কোরবানির কোনো মূল্য নেই। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ আরও বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।’ সুরা মায়েদা, আয়াত ২৭। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে যেসব পশু কোরবানি করেছি সেগুলো আল্লাহ গ্রহণ করেছেন কি না তা তিনিই ভালো জানেন। তবে এ কথা মোটামুটি স্পষ্ট প্রত্যেক মুসলমানই আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোরবানি করেন। প্রায় কোরবানিদাতার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি। এজন্য আমাদের প্রতীকী পশু কোরবানির পাশাপাশি এর শিক্ষণীয় দিকগুলো জীবনের সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বাবস্থায় কোরবানির দীক্ষা জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তবেই কোরবানির বাস্তবিক উদ্দেশ্য সফলভাবে মানব জীবনে বাস্তবায়ন হবে। কোরবানির মাধ্যমে হজরত ইবরাহিম (আ.) শিক্ষা দিয়েছেন যদি মুসলমানরা দুনিয়ায় আল্লাহর রহমত ও পরকালে তাঁর দিদার লাভ করে চিরস্থায়ী সুখের স্থান জান্নাতে যেতে চায় তাহলে আল্লাহর কাছে নিঃসংকোচে আত্মসমর্পণ করতে হবে। পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন।’ সুরা তালাক, আয়াত ৩।

আমাদের কোরবানির মূল শিক্ষা তাকওয়া অর্জন ও আত্মার সংশোধন। যদিও বাহ্যিকভাবে কোরবানিদাতার মনের এ অবস্থা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কারণ এটি যার যার অন্তরের ব্যাপার। আর অন্তরের অবস্থা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কোনো মানুষের অন্তর যদি বিশুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে গোটা দেহই শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহ অন্তর দেখে বান্দার বিচার করবেন। আর কার অন্তর কতটা স্বচ্ছ ও সুন্দর আল্লাহর কাছে তার পরীক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত সময় কোরবানি। অথচ এ কোরবানি আমাদের মধ্যে আসে আবার চলে যায়; কিন্তু আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এর ফল তেমন দেখা যায় না। কোরবানি থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করেছি তার প্রয়োগ আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হয় না তেমন। অথচ কোরবানি ছাড়া মুসলমানের জীবন মূল্যহীন। কেউ কোরবানি ছাড়া পরিপূর্ণ মোমিন হতে পারবে না। কোরবানি ঈদের আরেকটি শিক্ষা হলো একা একা ঈদ উপভোগ না করা। ঈদ মানে আনন্দ। নিজের আনন্দে গরিবদেরও শরিক করা। সাধ্যমতো তাদের মুখে একটু সুখের নির্মল হাসি ফোটাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করা। কিন্তু আজ সমাজের চিত্র অনেকাংশে এমন হয়ে গেছে যে, বিত্তশালীরা গরিবের দিকে ফিরেও তাকায় না। ঈদ আসে-যায়। দুঃখের বিষয়, গরিবরা ঈদ উপভোগ করতে পারে না। অথচ কোরবানির গোশত আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শি ও গরিবের মধ্যে বিতরণ করা সুন্নত ও অতি উত্তম আমল। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সে প্রকৃত মোমিন নয় যে নিজে পেট পুরে খায় কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। তিরমিজি।

লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর