মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা পরিস্থিতিতে উত্তম কাজ ক্ষমা চাওয়া ও করা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

করোনা পরিস্থিতিতে উত্তম কাজ ক্ষমা চাওয়া ও করা

করোনা মহামারী এখন আর দূরের খবর নয়। প্রতিদিন নিজেদের কাছের মানুষ, পরিচিত লোক ও আপনজন আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে আত্মীয়স্বজন ও সাথী বন্ধুবান্ধব। সারা দেশে প্রতিদিন প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাস ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। সীমান্ত জেলাগুলোয় করোনার সংক্রমণ অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে লাফিয়ে মৃত্যুর হার। প্রতিদিন দেশে দেড় শ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। কোন দিন কে সংক্রমণ ও মৃত্যুর কবলে উপনীত হবে এর কোনো পরিসংখ্যান জানা নেই। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘যখন তাদের সময় এসে যাবে তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে আর না এগিয়ে আসতে পারবে।’ সুরা আল আরাফ, আয়াত ৩৪। বস্তুত করোনায় সংক্রমিত হোক আর না-ই হোক মরণ থেকে পালানোর কোনো সাধ্য বা উপায় কারও নেই। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।’ বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পৃথিবীটা যেন সংকুচিত হয়ে আসছে। সবার পরিধি যেন সীমিত হয়ে গেছে। বিষয়টা উপলব্ধির জন্য কোনো চিন্তাভাবনা করতে হয় না। ইতিমধ্যে অনেক আত্মীয়স্বজনের জানাজায় উপস্থিত হয়েছি। এ লকডাউন এবং শাটডাউনের পর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পুনরায় দেখা হবে, আনন্দ পরিস্থিতি আবার ফিরে পাব সে আশা একবারেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে পৃথিবীর অনেক মানুষ মারা যাবে এটাই বাস্তব। এ অবস্থায় বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং ছাত্রদের কথা খুবই স্মরণ হয়। আপন কেউ ফোন করলে হাতের কলম, বই-খাতা অথবা পানি পান করার গ্লাসটা রেখে ধীরে ধীরে শান্তভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলি। জানি না কোন দিন এ কথাই শেষ কথায় পরিণত হবে। খবরে আসবে তিনি আর নেই। তখন ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ থাকবে না। আমাদের অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি। চলাফেরার ফাঁকে বহুজনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। বন্ধুবান্ধব এবং সঙ্গীদের সঙ্গে চলাফেরা, রকমারি আচার-আচরণ, লেনদেন বহু কিছু হয়েছে। অনেকের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সৎ পরামর্শ পেয়েছি, শিক্ষা গ্রহণ করেছি তাদের কাছে আমরা ঋণী। সবার কাছে এ মুহুর্তে ক্ষমা চাই। সুন্দর দৃষ্টিতে, আন্তরিকতার সঙ্গে ক্ষমা করি। আসলে ক্ষমা করা অনেক মহৎ কাজ। এর বিনিময় অনেক বড়। প্রতিশোধের মনমানসিকতা পরিহার করি। সামান্য দুনিয়ায় প্রতিশোধের মনমানসিকতা রেখে কোনো লাভ নেই।

নবী (সা.) সাহাবি সমাবেশে মসজিদে দাঁড়িয়ে একদিন ফরমান, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষ থেকে যদি কেউ কখনো কোনো কষ্ট পেয়ে থাকে, যদি কখনো কোনো অতিরঞ্জিত কিছু প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে আমি আজ নিজেকে তার সামনে পেশ করছি। সে যদি প্রতিশোধ নিতে চায় আমি প্রতিশোধ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। যদি কেউ কখনো কোনো পারিশ্রমিক বা পাওনা পায় তা-ও আমি দিতে প্রস্তুত। আর যদি কেউ ক্ষমা করতে সম্মত হয় তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’

এ ঘোষণা কে করেছিলেন? যে মহামানবের শানে কোরআনের কারিম অবতীর্ণ হয়েছে। হয়েছে সামনে পেছনে সবকিছু ক্ষমার আগাম ঘোষণা। যিনি ছিলেন উদার চরিত্রবান। ক্ষমা করতেন যিনি তার ঘাতককেও। যার পক্ষ থেকে অত্যাচার-নির্যাতনের কল্পনাই করা যেতে পারে না। এতে কি আমাদের শিক্ষা-দীক্ষার কিছু রয়েছে? রয়েছে কি কিছু গ্রহণ করার মতো উপদেশ? অবশ্যই আছে। আছে বুদ্ধিমানের জন্য মুক্তির পাথেয়। উদারতার অতুল্য নজির। চলার পথে, কাজের ফাঁকে, কত কত মানুষের সঙ্গে কী কী আচরণ হয়ে যায়? এগুলো কে হিসাব রাখে। আমরা কখনো বাসে, রেলে বা বিমানে ভ্রমণ করি। জনসমাগমে অংশ নিই। একসঙ্গে বাস করি। কোথাও একত্রে জব করি। তখন আল্লাহ জানেন আমরা কত মানুষকে কষ্ট দিই। বিরক্ত করি। সিগারেটের ধোঁয়ায় যে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, ঘামের গন্ধে পাশের লোক বসতে পারছে না, মুখের গন্ধে কেউ কথা বলতে চায় না। এসব কে লক্ষ্য করে? এভাবে আরও কতজনকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছি তাদের পরিচয় আমাদের জানা নেই। লেখাজোখা নেই তাদের নাম-ঠিকানা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষমা নেওয়ার কোনো পন্থা নেই। রসুল (সা.) এমন লোকদের থেকে ক্ষমা পাওয়ার ব্যবস্থাও বলে দিয়েছেন। তা হলো, তাদের জন্য আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া করব। এতে আল্লাহ আমাদের নিজেদের ক্ষমার ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ মানুষ এবং তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করার তৌফিক দিন। অন্যায়মুক্তভাবে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য প্রদান করুন!

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর