শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

মানব পাচার

প্রতিরোধ করতে হবে

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গলের একটি পানামা-কলম্বিয়া সীমান্তের ‘ড্যারিয়েন গ্যাপ’। দুর্গম পথে বিষাক্ত সাপ আর হিংস্র বন্যপ্রাণী তো আছেই, সেই সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী আর গেরিলাদের অভয়ারণ্য এ জঙ্গলে আছে জিম্মি হওয়ার ভয়। সড়কপথে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার তরুণ যুবক দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া হয়ে পানামায় পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য তারা পাড়ি দেয় ড্যারিয়েন গ্যাপ। এ দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে জিম্মি, প্রতারণা ও প্রাণহানির শিকার হয় অনেকে। পানামার একটি এনজিওর হিসাবে মানব পাচারকারীদের শিকারে পরিণত হয়ে যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ড্যারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দেন তার মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান তৃতীয়। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর ড্যারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় অন্তত ১০ হাজার মানুষের। তার পরও নিত্যনতুন ভয়ংকর এ কঠিন রুট বেছে নেয় প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার অভিবাসী। যার বড় একটি অংশ বাংলাদেশি। বছরে কত মানুষ ভিকটিম হয়ে পাচারের শিকার হয় তার কোনো পরিসংখ্যান কখনই পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু সংঘবদ্ধ চক্র মানব পাচার করছে। চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থান না থাকায় মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে। করোনাকালে মানব পাচারের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর সেই পাচারের মাত্রা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উৎকোচের বিনিময়ে পাচারকারীদের সহায়তা করেন। অন্যদিকে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুবই কম। অনেকে ধরা পড়েন না, যারা ধরা পড়েন তারাও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন। মানব পাচার প্রতিরোধে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। উন্নয়নের সড়কে দ্রুত ধাবমান বাংলাদেশকে কোনোভাবেই মানব পাচারের উৎসভূমি হতে দেওয়া যায় না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর