সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালিত ক্যাডেট কলেজসমূহে একটি গুরুত্ব ও তাৎপর্যময় মাস হলো জুন। এক বুক আশা, চাপা উত্তেজনা অল্প বয়সে মা-বাবা, ভাই-বোন ছেড়ে হোস্টেলের শৃঙ্খলিত জীবন মেনে নেওয়ার এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে জুন মাসে প্রায় ৫০০ ছাত্র এবং ২০০ ছাত্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নয়টি ছেলেদের এবং তিনটি মেয়েদের ক্যাডেট কলেজে যোগ দেয়। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির মধ্য দিয়ে ক্যাডেট কলেজ জীবনের ছয় বছরের পথচলা শুরু হয়। যে বয়সে এ পথচলা শুরু হয় তা কেবল কাদামাটির সঙ্গে তুলনা করা চলে, যা দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর যোগ্য অফিসার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সুযোগ্য নাগরিক তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। গেল বছর জুন মাস থেকে ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেটরা ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাস করছে। সপ্তম শ্রেণির ক্যাডেটরা ক্যাডেট কলেজ এবং ক্যাডেটদের স্বপ্নের জগৎতুল্য হোস্টেল বা হাউসের দেখা না পেয়েই অষ্টম শ্রেণিতে উঠে গেছে। কদিন পরেই তারা নবম শ্রেণিতে ওঠে বিজ্ঞান কিংবা মানবিক বিভাগের গাদা গাদা বই আর নোটের জগতে ডুবে যাবে এসএসসি পরীক্ষায় নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য। কিন্তু অলক্ষ্যেই তাদের জীবন থেকে প্রথম দেড় বছরে বড় ভাই বা আপুদের সঙ্গে স্নেহ ও খুনসুটির অম্ল মধুর চিরস্থায়ী বন্ধনের আনন্দ, বিশাল খেলার মাঠে তীব্রগতিতে  ছোটাছুটি, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষকের অধীনে সামরিক কুচকাওয়াজ, শরীরচর্চা, বাধা অতিক্রম বা অ্যাসল্ট কোর্স, সাঁতার প্রভৃতির আনন্দ হারিয়ে যাবে। সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাশাপাশি শুয়ে-বসে জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বের যে ভিত রচিত হয়, আমৃত্যু তা টিকে থাকে। অথচ সেই ভিত গড়া শুরুই করতে পারল না ১২ ক্যাডেট কলেজের ২০২০ সালের জুন মাসের ব্যাচ। ২০২১ সালের জুন মাসের ব্যাচের কী হবে তাও অজানা। ফোনে কথা বলেছিলাম আমার প্রাণপ্রিয় রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে। জানলাম অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে ক্যাডেট কলেজগুলো। মানসপটে ভেসে ওঠল পদ্মা পাড়ে ক্যাডেট কলেজের দিনগুলো। স্পষ্টত মনে পড়ে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতেই দেয়াল পত্রিকায় আমার লেখালেখির শুরু। ওই বয়সেই তো মঞ্চনাটক করেছি, গলা ফাটিয়ে গান করেছি, বিতর্ক করতে করতে টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠেছি, বাগান করেছি, খেলতে গিয়ে হাত ভেঙেছি, যা দেয় তাই খেতে শিখেছি, বড় ভাইদের ফুট-ফরমাশ খেটেছি, প্রভাতফেরি করেছি। এমনকি ফসলের মাঠের ধানও কেটেছি। আজও পুনর্মিলনী উপলক্ষে ক্যাডেট কলেজে গেলে নিজ হাতে লাগানো গাছ দেখাই নিজ বংশধরদের। বন্ধু ও বড় ভাইদের পরিবারের সামনেই ফাঁস করে দেই সেই সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির দুষ্টমি আর খুনসুটির গোপন কথাগুলো। খারাপ লাগল সেই অনুজদের কথা ভেবে, যারা বঞ্চিত হলো এ বাল্যসুখ থেকে। হয়তো তারা অচিরেই নবম শ্রেণিতে ক্যাডেট কলেজে যোগ দেবে। কিন্তু সপ্তমের সেই কাদামাটিতে আর থাকবে না তারা। কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া শুরুর প্রথমদিকের ভুলগুলো সপ্তম শ্রেণির ক্যাডেটদের মানায়; কিন্তু নবম শ্রেণিতে কেমন যেন বেখাপ্পা লাগবে নিশ্চয়। সবচেযে বড় কথা ক্যাডেট কলেজের ছয় বছর পরবর্তীতে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সত্যিকারের নেতা হওয়ার দীক্ষা দেয়। এ দীক্ষা নেওয়ার ছয় ভাগের এক অংশ বা প্রায় ১৭ শতাংশ সময় ইতিমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছে ২০২০ সালের জুনের ক্যাডেটরা। প্রতিদিনই বাড়ছে তাদের এ হারানো অঙ্ক।

আমার নিজের ঘরেই এক বছর প্রায় বন্দীজীবন কাটাচ্ছে মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী। কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বর্ষ শেষে প্রফেশনাল পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে তৃতীয় বর্ষে উঠেছে এ করোনার মধ্যেই। প্রথম দুই বছরে পড়ার বেশ চাপ থাকে মেডিকেল কলেজে। তৃতীয় বর্ষে সে তুলনায় চাপ একটু কম হওয়ার কথা ছিল। কারণ তৃতীয় বর্ষেই পড়ানো হয় দুটি আকর্ষণীয় এবং ব্যতিক্রমী বিষয়। এর একটি হলো ‘কমিউনিটি মেডিসিন’। করোনাসহ যেসব রোগ সামাজিক কারণে দ্রুত ছড়ায়, সে সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভের জন্য তৃতীয় বর্ষে গ্রামগঞ্জে ক্যাম্প করার কথা ছিল। আরও কথা ছিল ‘ফরেনসিক’ পড়ানোর জন্য অপমৃত্যুর শিকার মৃতদেহ নিয়ে তারা বাস্তব জ্ঞান লাভ করবে, স্বচক্ষে দেখবে অপঘাতে মৃতদের পোস্টমর্টেম, যা কেবল তৃতীয় বর্ষেই পড়ানোর কথা। কিন্তু হায়! আমার সন্তান এসব পড়ছে মুঠোফোনের পর্দায়। পৃথিবীতে কোনো মহামারীই চিরস্থায়ী হয়নি, হবেও না। একটু আগে কিংবা পরে করোনাও বিদায় নেবে নিশ্চয়ই। কিন্তু আগামী বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দায়িত্ব নেবেন যে চিকিৎসকরা, তারা কী শিখলেন গত প্রায় দেড় বছর?

অনেক দিন পর হঠাৎ দেখা হলো আমার মফস্বল শহর কুমিল্লার এক ছোট বোনের সঙ্গে। সঙ্গে ছিল তাঁর স্বামী ও উঠতি বয়সের কন্যা। কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম- কন্যাটি কী পড়ছে। তাঁর মার উত্তর- এই তো গত বছর অটোপ্রমোশনে এইচএসসি পাস করল। লাজুক কন্যা লাজলজ্জার বাঁধ ভেঙে রীতিমতো প্রতিবাদের সুরেই মায়ের মুখের কথা কেড়ে নিল। কন্যার বক্তব্য, তাঁর মা এমনভাবে কথা বলেছে যেন মেয়েটি নিতান্ত মেধাশূন্য। অটো প্রমোশন হয়েছে বলেই পাস করেছে। নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম অটো প্রমোশন দিয়ে একটি উদীয়মান তরুণ-যুবক সমাজকে আমরা কী অবমূল্যায়ন করলাম? লজ্জা দিলাম? হাসির পাত্র বানালাম? ভবিষ্যতে কি তাঁরা অটো প্রমোশনের খোটা শুনতে শুনতেই বড় হবে? না, কোনো উত্তর পাইনি প্রশ্নগুলোর। বরং সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে। কেন? জানি না!

টেলিফোনে কথা হলো আমার ক্যাডেট কলেজেজীবনের এক বন্ধুর সঙ্গে। বহু আশা নিয়ে সামরিকজীবন থেকে অবসরের পর গ্রামে গড়ে তুলেছে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জীবনের সর্বস্ব বিশেষত পেনশনের টাকার সবটুকু ঢেলে সাজিয়ে ছিল স্কুলটি। প্রথম দিকে লাভ নয়, কেবল টিকে থাকা এবং পরবর্তীতে লাভ নয়, কেবল বিনিয়োগ ফেরত পেলেই খুশি। এমনই পরিকল্পনা ছিল তাঁর। উচ্চ বেতনে সুযোগ্য শিক্ষক, প্রদর্শক ও অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিল। দ্বিতীয় বছরে পা দিতেই করোনার ছোবল। কেজি শিশু বা প্রথম শ্রেণিতে এ বছর আশানুরূপ কেউই ভর্তি হয়নি। বিধি-নিষেধ তুলে দিলেও কয়েক মাসের জন্য অভিভাবকরা হয়তো এ নিচের ক্লাসে বাচ্চাদের ভর্তি না করে পরবর্তী বছরে নতুন ক্লাসে ভর্তির অপেক্ষায় থাকবে। অথচ স্কুল চালানোর উদ্দেশ্যে এসব ক্লাসের জন্য শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন দিতে হচ্ছে প্রায় দেড় বছর ধরে। নিচের ক্লাসে  পড়ালেখার চেয়ে স্কুলে সময়মতো নির্দিষ্ট পোশাক পরে যাওয়া-আসার চর্চা,  একটু-আধটু ইংরেজি বলা, ছড়া বা রাইমস শোনানো, এসবেই নজর থাকে অভিভাবকদের। সেই প্রাপ্তিই যখন প্রায় শূন্য, তখন পয়সা খরচ করে স্কুলের সঙ্গে একটা ভার্চুয়াল সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। পাড়া-মহল্লার বহু স্কুল কেবল ছোটদের ক্লাসের ওপরই টিকে থাকে। কারণ এত ছোট বাচ্চাদের অনেকেই দূরের স্কুলে দিতে চায় না। প্রতিদিন দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়ার ধকল সইতে পারে না অনেক ছোট বাচ্চা। তাদের জন্য পাড়া-মহল্লার স্কুলই ছিল উপযুক্ত ঠিকানা। এমন বহু স্কুলই বন্ধ হয়ে গেছে বা অচিরেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এসব স্কুলসহ বহু স্কুলের শিক্ষক বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। হয়তো তারা আর ফিরবে না সেই মহান পেশায়। তাহলে দেশের শিক্ষাজগৎ কি একদল অভিজ্ঞ শিক্ষককে হারিয়ে ফেলল। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের বহু পরিবারেই শিশুরা পারিবারিক বা আবাসস্থলের পারিপার্শ্বিক নির্যাতন ও অব্যবস্থাপনার শিকার। অনেকের পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা শিশু বা শিক্ষাবান্ধব নয়। তাদের জন্য একটি স্কুল ছিল একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার স্থান। তাদের কাছে একজন মমতাময়ী শিক্ষক ছিলেন দেবদূত তুল্য। গত এক বছরের বেশি সময় এসব শিশু ধুঁকে ধুঁকে কাঁদছে সেই অমানবিক পরিবেশেই। অটিস্টিক বাচ্চারা এবং শ্রবণ, বাক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য ব্যবহারিক ক্লাসের বিকল্প কিংবা সমবয়সী সঙ্গীদের সঙ্গে মেশার মধ্য দিয়ে শিক্ষার কোনো বিকল্প কি হতে পারে? একইভাবে বলা যায় প্রকৌশল, কারিগরি শিক্ষা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ বিষয়ক শিক্ষা কোনো ব্যবহারিক ক্লাস বা হাতেকলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে আগামী দিনের নাগরিক ও পেশাজীবীরা। গবেষণা বলছে, আগামীতে এমন সব পেশার উদ্ভব হবে, যার নামও হয়তো আমরা শুনিনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের সময়ে ভবিষ্যতের পেশা হিসেবে ড্রোন ডিজাইনার, ড্রোন অপারেটর, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, হ্যাকিং অ্যান্ড অ্যান্টি হ্যাকিং এক্সপার্ট-  এসবের কথা আমরা শুনিইনি। অথচ এসবই আজকের আকর্ষণীয় পেশা। তেমনিভাবে ভবিষ্যতে এমন অনেক পেশা আসবে যার কথা হয়তো আমরা ভাবছি না। ভবিষ্যতের জন্য এসবই একেকটি অশনিসংকেত।

এক আইনজীবী বন্ধুর আশঙ্কা করোনা-পরবর্তীকালে এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়াবে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। প্রায় এক বছর আগেই অর্থাৎ ১৬ জুলাই ২০২০ তারিখে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার মূল প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে বিচারের রায় পাওয়া অপেক্ষায় প্রক্রিয়াধীন ছিল ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৮টি মামলা। এর মধ্যে সুুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮টি এবং অ্যাপিলেট ডিভিশনে ২৩ হাজার ৬১৭টি (মোট ৫ লাখ ১২ হাজার ৬৮৫টি) মামলা বিচারাধীন ছিল। অবশিষ্ট প্রায় ৩২ লাখ বিচার চলছিল দেশের অন্যান্য আদালতে। ২০১৬ সালে হাই কোর্টসহ সারা দেশের মামলার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩১ লাখ। অর্থাৎ বছরে প্রায় দেড় লাখ নতুন মামলা যোগ হয় পুরনো মামলার সঙ্গে। সে তুলনায় বিচারকের সংখ্যাও কম আমাদের দেশে। আমেরিকায় যেখানে প্রতি ১০ হাজারে এবং ভারতে ৬৭ হাজারে একজন বিচারক আছেন, সেখানে বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য বিচারক একজন। বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ এবং দ্রুততম সময়ে শেষ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আইনজীবী সমাজ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পর নবীন আইনজীবীরা দক্ষ হয়ে ওঠেন মূলত সিনিয়র আইনজীবীদের অধীনে ‘জুনিয়র’ হিসেবে কাজ করে। বাস্তবতা হলো- করোনাকালে বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে না চলার কারণে দেশের লাখো নবীন বা জুনিয়র আইনজীবী গত প্রায় দেড় বছর কোনো বিচার কার্যক্রম, জেরা, যুক্তি, পাল্টা যুক্তি, ড্রাফট বা ডিক্টেশন লেখা, আবেদন করা, নোটিস পাঠানো, এসব বাস্তব শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আইনজীবী বন্ধুর মতে করোনাকালে বহু সাক্ষী মারা গেছেন। বহু সাক্ষী মূল ঘটনা ভুলে গেছেন বা নষ্ট হয়েছে। বহু প্রামাণ্য দলিল বা চিহ্ন হারিয়ে গেছে। বহু বাদীও মারা গেছেন। বহু বাদী সময়ের কারণে প্রাকৃতিক নিয়মে বিচার পাওয়ার আকাক্সক্ষা বা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। বহু আইনজীবীও মারা গেছেন বা বার্ধক্য ও রোগেশোকে কর্মক্ষমতা ও স্পৃহা হারিয়ে ফেলেছেন। বাস্তব শিক্ষাবঞ্চিত নবীন বা জুনিয়র আইনজীবীরা এবং নতুন বিচারকরা এই মামলার পাহাড় কীভাবে এবং কত বছরে পার হবেন, তার সদুত্তর নেই কারও কাছে। অথচ সমাজ জানবে একটি অপরাধ হয়েছিল অথচ কয়েক যুগেও তার বিচার হয়নি। যার কুপ্রভাব বইতে হবে এই সমাজকেই।

বিমান বা বৈশ্বিক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সুযোগ ও বৃত্তি পেয়েও অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাওয়া হয়নি। অথচ কালের স্রোতে তাদের অনেকেই পারিবারিক ও সামাজিকজীবনে পরিবর্তন হয়েছে। কেউ হয়তোবা বিয়ে করে সন্তানের বাবা-মাও হয়ে গেছেন, যে বন্ধন ছিঁড়ে উচ্চশিক্ষায় আর বিদেশে যাওয়া হবে না। সব দেখে-শুনে আমাদের মানিকগঞ্জ জেলার ধামরাই এলাকার আমতা গ্রামে জন্ম নেওয়া এবং ভারতে কালিভক্তদের পরম শ্রদ্ধার পাত্র বাউল গায়ক ভবা পাগলার (ভবেন্দ্র মোহন চৌধুরী) একটি গান মনে পড়ল। আমাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের নীতি-নির্ধারকরা গানটি শুনতে পাবেন। গানের একটি অংশ হলো-

“বাইতে জানো না, কেন ধর হাল?

মন মাঝিটা আমার হলো রে মাতাল।

বুঝিয়ে বল তারে, যেতে হবে ওই পাড়ে?

অবেলার বেলা পানে চাও-চাওরে।”

                লেখক : গবেষক, কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

সর্বশেষ খবর