মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ফকির আলমগীর ও কেন এত এলোমেলো?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

ফকির আলমগীর ও কেন এত এলোমেলো?

শোকের মাস আগস্ট। প্রথম দিনই আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে কেন প্রদীপ জ্বালালেন বুঝতে পারলাম না। আমাদের বুদ্ধিসুদ্ধি কম বলে অনেক কিছু বুঝি না, নাকি এখনকার সঙ্গে মান্ধাতা আমলের আমাদের চলে না। বঙ্গবন্ধু শহীদ হয়েছেন, ঘাতকের হাতে নিহত হয়েছেন ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে। আমরা তো আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আনন্দেই ছিলাম, দারুণ উদ্দীপনায় ছিলাম। সাধারণত আমরা মোমবাতি জ্বালাই কারও জন্মদিন অথবা কোনো আনন্দের উৎসবে। কোনো শোক জানাতে গিয়ে মোমবাতি জ্বালানো কতটা যুক্তিযুক্ত আমার মাথায় ধরে না। তবু আওয়ামী লীগের দেশ, আওয়ামী লীগের ভাবনার সঙ্গেই চলতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন গার্মেন্ট ও কলকারখানা খুলে দেওয়ায় করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে। তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি একটুও বাড়বে না। বিশৃঙ্খল আসা-যাওয়ায় যা বাড়ার ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। করোনা বিস্তারের যে ফরমুলা ১ থেকে ২, ২ থেকে ৪, ৪ থেকে ৮, ৮ থেকে ১৬ জন এ রকম যদি হতো তাহলে বাংলাদেশের সব মানুষ এত দিনে করোনা আক্রান্ত হতো। করোনা সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না সেটুকুই থাকুক। বেশি পন্ডিতি করে বিশেষজ্ঞ সাজার দরকার নেই। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই, পরিত্রাণ চাই সেটুকু হলেই হলো। কাকে কী বলি, বলতে বলতে সত্যিই কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কেউ শোনার নেই, উপলব্ধি নেই, বোধশক্তি নেই। আমার স্ত্রী খুবই ভালো মানুষ। মায়া-দয়ায় তার দেহমন ভরপুর। কিন্তু তার সঙ্গে আমার বোধশক্তির অনুভূতির পর্বতপ্রমাণ পার্থক্য। এখনো কমবেশি আছে। সেই পার্থক্য এখন অনেকটাই চলনসই। কিন্তু সরকারি প্রশাসনের বোধশক্তি নিয়ে বড় কষ্টে আছি। যে ঈদের পর কত দিন ফেরিঘাটে মানুষের ঢল, তার সঠিক মোকাবিলা করা যেত না? ব্যবস্থা করা যেত না? লোকজনের চলাচলের বাধা কোথায়? বাধা তো করোনা, করোনা সংক্রমণ। যারা ফেরি পার হয়ে এসেছে, যারা রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া বদল করেছে, ১০০ টাকার ভাড়া হাজার টাকা দিতে হয়েছে তারা কি সরকারের প্রতি খুশি? না, হাঁটতে হাঁটতে রোদে পুড়তে পুড়তে একজন বয়সী মানুষ যখন একেবারে অসহায় হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে তার অন্তরাত্মা থেকে কি কোনো হুতাশ বেরিয়ে আসেনি? আর সেই হুতাশ কি কখনো সরকারের জন্য কল্যাণকর হবে? কর্তৃপক্ষ কি ফেরিঘাট পাড়ে কিছু গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারতেন না? যারা এসেছেন তাদের ঘোরাফেরা করতে না দিয়ে সোজা গাড়িতে উঠিয়ে গন্তব্যে পাঠিয়ে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো? আগেই বলেছিলাম, একটানা দুই সপ্তাহ কলকারখানা বন্ধ, বিশেষ করে যারা বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে তার মধ্যে অন্যতম গার্মেন্ট। দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখতে সবার লালবাতি জ্বলে যাবে। সেই গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেওয়া হলো। কিন্তু শ্রমিকদের কারখানায় ফেরার জন্য যানবহনের ব্যবস্থা হলো না। গণপরিবহন বন্ধ বলে অনেকেই গর্ব করলেন, গভীর রাতে গণপরিবহন চালু তা-ও আবার ১ তারিখ বেলা ১২টা পর্যন্ত এর কোনো কিছুই পরিকল্পিত নয়। এর প্রায় সবকিছুই অসভ্যপনা, মানুষকে কষ্ট দেওয়ার উপকরণ। শুনেছিলাম, ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ঢাকা উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছিল। যে আধুনিক পরিকল্পনার এখন পর্যন্ত ৭০ ভাগের বেশি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ভারতে কংগ্রেস ১০০ বছর আগে ভারতের কৃষি পরিকল্পনা করেছিল। যার ৫০ ভাগও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাহলে আমাদের যে ভদ্রলোকেরা এখন করোনা নিয়ে গাড়ি বন্ধ, গাড়ি চালু এসব করছেন তাদের কি সামান্য জ্ঞানবুদ্ধিও নেই? সেদিন একজন বিখ্যাত মানুষ বলেছিলেন, আপনি তো জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে ¯ন্ডেœহ করেন, ভালোবাসেন। তিনি কী বলেছেন জানেন? শুধু ঢাকার শ্রমিক দিয়ে গার্মেন্ট চালাতে হবে। ফরহাদ বলতে পারে। তার বয়স এবং অভিজ্ঞতা খুবই কম। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি এমন একটা জিনিস শার্ট-প্যান্ট-কোট-জ্যাকেট যা কিছুই হোক লাইন করে মেশিন বসাতে হয়। একটা জিনিস শেষ করতে যদি ২০-৩০-৪০ লাইন লাগে সেই ৪০ জন অপারেটরের মাঝে একজন না থাকলেও কোনো প্রোডাক্টই শেষ হবে না। কেউ হাতা লাগায়, কেউ গলা লাগায়, কেউ বোতাম লাগায়। তাই একটা গার্মেন্ট প্রোডাক্টকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে সব কজন শ্রমিকের সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্র চালাতেও তেমনি সমন্বয়ের দরকার, যোগ্যতা-দক্ষতার দরকার। কলকারখানা খুলে দেওয়া হবে সব গাড়ির মালিক শুরুর দিকে বলে দিলেই হতো, সবাই যার যার গাড়ি রাস্তায় বের করে রাখ। ঢাকার দিকে আসা মানুষকে তারা বিনা পয়সায় ঢাকা পৌঁছে দিলেই দোষ কী? প্রতিটি গাড়ির ভাড়া সরকার দিয়ে দিলে সরকার তো মাঠে মারা যেত না? শুধু চিন্তা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা বা দরদের অভাব। প্রিয় পাঠক, ফকির আলমগীরের একটা চিঠি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। তা তুলে দিলাম।

‘শ্রদ্ধাস্পদেষু

কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম।

প্রথমেই আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তির সেই মহানায়ককে আমার রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। সেই সাথে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আপনার পাঠানো ১৫ মার্চের চিঠির উত্তর বিলম্বে দেয়ার জন্য। একজন শিল্পীর কাছে পাঠানো আপনার উপদেশমূলক চিঠি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছে। পাশাপাশি আমার ভীষণ খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার ভালোবাসা বিজড়িত প্রথম চিঠিটি আমার হাতে এসে পৌঁছাল না বলে। তারপর বিলম্বে চিঠি লেখার কারণ হচ্ছে আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব জন্মদাতা পিতা ইন্তেকাল করেছেন গত ২২ শে এপ্রিল ১৯৮৯, ১০ই বৈশাখ ১৩৯৬, ১৬ই রমজানে। কোনো রোগব্যাধি ছিল না। ৯৫ বছরে বেশ পরিণত বয়সে বাবা মারা গেছেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি, ফরিদপুর জেলার কালামৃধা। রমজানে আমার ব্যস্ততা কম থাকায়, অন্যদিকে আমার সৌভাগ্য থাকায়, বাবার মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত ছিলাম। কুলখানি, চেহলাম পেরিয়ে প্রায় কয়েক মাস গত হলো। আস্তে আস্তে বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যাবে সেই প্রিয় মুখটি যেমনি হারিয়েছিলাম মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে ১৯৭৬ সালের ১৭ই নভেম্বরে। ১৭ নভেম্বরের পরে আবার কাঁদলাম। সঙ্গে সঙ্গে এবার কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটার মাস বৈশাখে শোককে শক্তিতে পরিণত করলাম এই ভেবে, এই অপমৃত্যুর দেশে যেখানে জলোচ্ছ্বাসে, বন্যায়, দুর্ভিক্ষে, ঘূর্ণিঝড়ে, মহামারীতে, ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ফেরিঘাটে অগণিত মানুষ মরে, সেখানে আমার নেতা ও আমার পিতার মাসুম-বেগুনাহ্ মৃত্যুর প্রক্রিয়া আমার কাছে ভিন্নতর। যেমনটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী নামের ব্যক্তিত্ব আমার কাছে এক অবিস্মরণীয় স্বতন্ত্রে চিহ্নিত। হুজুরের উপর প্রকাশিত আমার লং প্লে রেকর্ড কিংবা তার উপর দু’টি ক্যাসেট আপনার কাছে নেই জেনে অবাক হলাম। হুজুরের ক্যাসেটসহ অন্যান্য গানের ক্যাসেট আপনার কাছে কেমন করে পাঠাব, বিস্তারিত জানাবেন। আপনার সঙ্গে আমার আরেকটি মিল খুঁজে পেয়ে আনন্দিত হচ্ছি আপনি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করেও মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে, ভাসানীপন্থীদের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা করেন। আর আমি ভাসানীর রাজনীতি করেও একজন দেশ ও দশের শিল্পী হিসেবে মুকুন্দ দাস, ভাসানীর গানের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর এবং সমকালীন গণআন্দোলনের গান গেয়ে থাকি, আমরা স্ববিরোধী নই। অথচ আজ ভাসানীর নাম বেচে অনেকে মন্ত্রিত্ব, লাইসেন্স, পারমিট, বিদেশি ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছেন। তথাকথিতরা বামপন্থি চিন্তা বাদ দিয়ে কেউ কেউ এখন বুর্জোয়া রাজনীতির ভাবধারায় ক্ষমতার মসনদে আসীন। পেছনের কথা এখন আর কেউ স্মরণ করতে চান না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রয়েছে ভাসানীর ব্যাপারে সংকীর্ণতা। প্রগতিশীল শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের প্রতি উদাসীন রুচি এবং সৃজনশীলতার দুর্ভিক্ষ রয়েছে। তারা কেন মওলানা ভাসানীর মাজারে যায় না, কেন আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে না এই প্রশ্নে তাদের অনেককে আমি আলোড়িত করেছি। আমার প্রশ্নবাণে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদের “ইতিহাসের নিরিখে মওলানা ভাসানীর মূল্যায়ন হওয়া উচিত” শীর্ষক লেখা লিখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিব ও জিয়ার নামে ছাত্রাবাস নির্মিত হলেও ভাসানীর নামে কোনো ছাত্রাবাস নির্মিত হয়নি। এমনিভাবে সরকারের ভিতরে ও বাইরে ভাসানীর স্মৃতি রক্ষার কাজ সন্তোষজনক নয়। যদিও ডাকসু অফিসে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানো নিয়ে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদে বিতর্ক চলছে। অতীতে শহীদ মিনারে এমনি করে বিভিন্ন নেতার ছবি টানানো নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ চলত যা এখন অনেকটা কমেছে। তবে আমার মনে হয় যার যার নেতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে কেবল ছবি টানালে তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হয় না। তা যাক এ ব্যাপারে আগামীতে বিস্তারিত আলোচনার প্রত্যাশা রইল। আপনি যে ঐকান্তিকতা নিয়ে আমাকে গান গাইতে বলেছেন সেই উপদেশ আমার মনে থাকবে। এবং সেই গানকে কালজয়ী ও প্রান্তরে প্রান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত করেছি ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী। আপনি দোয়া করবেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন গণমানুষের সাথে থেকে গান গেয়ে যেতে পারি।

আপনার আন্তরিকতাপূর্ণ এবং তথ্যসমৃদ্ধ চিঠিখানির কোনো তুলনা হয় না। আগামীতে ছোট ভাইকে এমনি করে লিখে অনুপ্রাণিত করবেন। আশা করি আপনার লেখা প্রথম চিঠির কপিও কারও কাছে অথবা পোস্ট করে পাঠাবেন। তারপর সেদিন আপনার বোন হাসিনা আপার সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, বজ্র আমার মায়ের পেটের ভাইর চাইতেও বেশি। আমার বাবার জন্যে বজ্র যা করেছে... ওর ঋণ শোধ হবে না। বজ্রও আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। এসব শুনে কী যে ভালো লেগেছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। বাসার সবাই সেদিন আপনার টেলিফোন পেয়ে আনন্দিত হয়েছি। আপনজনের মতো টেলিফোন করে কলকাতার গোষ্ঠীর ব্যাপারে আমাদের উৎকণ্ঠা নিরসন করেছিলেন। ভাবীও এ ব্যাপারে যথেষ্ট কষ্ট করেছেন। ওইদিনই আমার অনুষ্ঠান ছিল টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। বিশাল মাঠ, লোকে লোকারণ্য। আমি গানের মাঝে আপনার শুভেচ্ছা গোপালপুরের লোকদের জানিয়েছিলাম। এর কিছুদিন আগে অনুষ্ঠান করেছিলাম টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী। সারা দেশব্যাপী আমার প্রচুর অনুষ্ঠান হয় তবে সেই তুলনায় টাঙ্গাইলে একটু বেশি হয়। যা হোক কলকাতার মিত্রায়ণের অংশগ্রহণে ঋষিজের গণসংগীত উৎসব নতুন প্রাণ পেয়েছিল। ওদের পরিবেশিত গণসংগীত ও নৃত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ঋষিজ এবার আরও একটি ব্যাপারে সফল হয়েছে তা হলো, উদীচী, কারক, সাংস্কৃতিক দল, ক্রান্তি, স্বরশ্রুতি, স্রোত ইত্যাদি দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে গণসংগীত উৎসব করে। গুণীজন সম্বর্ধনা, আলোচনা, গণসংগীত উৎসব ছিল অনুষ্ঠানের আকর্ষণ।

ডক্টর আহমদ শরীফ, ডক্টর আনিসুজ্জামান স্যার অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি-বিশেষ অতিথি ছিলেন। ঋষিজ গুণীসম্বর্ধনা দিয়েছে, লোকশিল্পী হরলাল রায়, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শ্রী অজিত রায়কে, সংগ্রামী নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক ও মামুনুর রশীদকে। টেলিভিশনসহ পত্রপত্রিকা এ অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার করেছে। জনগণের সহযোগিতায় সমস্ত রকম প্রতিকূলতার মধ্যেও এ অনুষ্ঠান ছিল বিভিন্ন দিক দিয়ে সফল। দেশব্যাপী, রাজনৈতিক শূন্যতা, হতাশা, বিভ্রান্তি, মন্ত্রীদের রংবদল, লোভ-লালসা, হত্যা-রাহাজানি, ছিনতাই, শিবিরের সন্ত্রাস, ছাত্রদের মধ্যে হানাহানি, আরোপিত হরতাল ইত্যাদি মিলে যখন সর্বক্ষেত্রে নৈরাজ্য, ঠিক তখন ঋষিজের এই উদ্যোগ সর্বক্ষেত্রে বেশ প্রশংসিত হয়। এমনি সড়কদ্বীপে মিত্রায়ণ এবং ঋষিজকে সম্বর্ধনা জানায়। যাক সে প্রসঙ্গ, আপনার চিঠি থেকে হুজুর প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত জানতে পারলাম। আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে জানতে চাই। মওলানা ভাসানী প্রসঙ্গে আপনার যে দৃষ্টিভঙ্গি তা সময়পোযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সাথে আমি একমত। যখন আপনার সঙ্গে হুজুর প্রসঙ্গে মতবিনিময় হচ্ছে, লেখালেখি হচ্ছে, বা ডাকসু office-এ বঙ্গবন্ধুর ছবি তোলার বিষয়টির আলোচনা কমে এসেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ভাড়াটিয়া বুদ্ধিজীবী এ কে এম সোবাহান হুজুর ভাসানী প্রসঙ্গে অমার্জনীয় মন্তব্য করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। দেশের সর্বস্তরের মানুষ বিচারপতি সোবাহানকে ধিক্কার জানিয়েছেন এবং মন্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য দাবি জানিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন মওলানা ভাসানী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূচনা করেছিলেন। বলাই বাহুল্য অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতীক মওলানা ভাসানীকে এ কথা বলার পেছনে বিচারপতির অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আমরাও কাগজে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে মিলেমিশে প্রতিবাদ করেছি। আপনার প্রিয় কর্মী জিন্নাহকে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত প্রতিবেদনমূলক একটি সাপ্তাহিকী... নিয়ে যেতে বলেছি।

দেশের প্রায় সব সংগঠন এ ব্যাপারে প্রতিবাদমুখর হলেও আওয়ামী লীগ, CPB ও মোজাফ্ফর ন্যাপ নীরব রয়েছে। তাদের এ নীরবতা সকল মহলকে হতাশ করেছে। আমার মনে হয় এসকল মন্তব্য দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক মহলকে শক্তিশালী করবে এবং সুযোগ করে দেবে। যা হোক তবু আমরা আশা করব স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির মধ্য থেকে সংকীর্ণতা দূরীভূত হবে এবং প্রকৃত ঐক্য প্রতিষ্ঠা হবে। পরিশেষে আপনার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি। আশা করি ভাবী, সন্তান এবং অন্যদের নিয়ে কুশলে আছেন। আমরা সবাই একপ্রকার ভালো আছি। ১লা সেপ্টেম্বর ছোট ছেলে রাহুলের তৃতীয় জন্মদিন গেল। আপনি এবং ভাবী, আমার এবং আমার স্ত্রী বনলক্ষী ও সন্তানদের পক্ষ থেকে গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। ঋষিজের সকল সদস্য/সদস্যা আপনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এবং একই সাথে তারা আপনার সম্মানের সাথে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আশা করে।

দোয়া রাখবেন যেন এমনি সংগীতের মাধ্যমে আমার সামাজিক, রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে যেতে পারি।

 

শুভেচ্ছান্তে

আপনার  স্নেহের

ফকীর আলমগীর

০১/০৯/৮৯’

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর