মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল

মাহমুদুল হক জালীস

ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল

যৌবন প্রত্যেক মানুষের শ্রেষ্ঠ সময়। সে সময়ের উদ্যমতাকে যদি যুবক-যুবতীরা সঠিক পন্থায়, ভালো কাজে ব্যয় করতে পারে তাহলে তারা আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দায় পরিণত হবে। গড়ে উঠবে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ। কারণ এ যুবক-যুবতীরাই জাতির মেরুদন্ড। এরা সুসংহত হলে গোটা জাতি সুসংহত হয়। এরা পথ হারালে গোটা জাতিই পথ হারায়। মানবজীবনে যৌবনকাল হলো জন্ম-মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়। শিশুকালে মানুষ থাকে দুর্বল আর বৃদ্ধকালে হয় পরনির্ভরশীল। মাঝের সময়টুকুই থাকে শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার বিবেচনায় পরিপক্ব। অথচ আজ সে সময়টাকে যুবক-যুবতীরা অবহেলায় নষ্ট করছে। রবের ইবাদত থেকে দূরে থাকছে। গেমস খেলে সময় ব্যয় করছে। অন্যায় অনাচারে লিপ্ত হচ্ছে। হেলায়-খেলায় কাটিয়ে দিচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অনুচিত। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যৌবনকে মূল্যায়ন করার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সময় ফুরিয়ে আসার আগে যৌবনকে কদরের কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তিকে নসিহতের সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘পাঁচটি বিষয় আসার আগে পাঁচটি বিষয়ের মূল্যায়ন কর। এক. বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার আগে যৌবনকে। দুই. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে। তিন. দারিদ্র্য গ্রাস করার আগে স্বনির্ভরতাকে। চার. কর্মব্যস্ততার আগে অবসরকে। পাঁচ. মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ শুয়াবুল ইমান।

আল্লাহর কাছে যুবক বয়সের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক। কেননা তখন মানুষ বেশির ভাগই সুস্থ থাকে এবং সব ইবাদত যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়। এজন্য হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যৌবনে ইবাদতকারীদের পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাত প্রকারের মানুষকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন যেদিন তার ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন যুবক।’ বুখারি।

কিয়ামতের মাঠে পুরো জীবনের কার্যক্রমের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। তখনো যৌবনকালের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্বসহকারে জিজ্ঞাসা করা হবে। এ প্রসঙ্গে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আদমসন্তানের পদদ্বয় আল্লাহর কাছ থেকে এক কদমও আগে বাড়তে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কীভাবে তা অতিবাহিত করেছে; তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা ব্যয় করেছে। তিরমিজি। আজ যুবকরা যৌবনের রঙিন দিনগুলোয় লিপ্ত হয়ে পরকালের কথা ভুলে যায়। ভুলে যায় মহান প্রতিপালকের কথা; তাঁর দরবারে জবাবদিহির কথা। বিভিন্ন অপরাধে সময় অতিবাহিত করে। গেমস ইত্যাদির পেছনে নিজেকে আবদ্ধ রাখে। ঠিকমতো রবের হুকুম মানে না। মৃত্যুর কথা ভুলে যায়। যুবক-যুবতীদের উচিত যৌবনকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করা। অধিক পরিমাণে পরকালের কথা চিন্তা করা। কারণ পরকালের শাস্তির ভয় যৌবনকে অপরাধমুক্ত রাখতে সহযোগিতা করতে পারে।

লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর