বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক কূটনীতি : অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা

শাবান মাহমুদ

আন্তর্জাতিক কূটনীতি : অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা

তিন দশকের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলো আমি সাংবাদিকতায়। সাংবাদিকতা থেকে কূটনীতি, একটি নতুন অভিজ্ঞতা। বিশ্বে বাংলাদেশ হাইকমিশন, দূতাবাস বা মিশন রয়েছে প্রায় ৮০টি দেশে। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই মনে করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কূটনৈতিক সমীকরণে তাই দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মর্যাদা একটু আলাদা। সেদিক থেকে বলতেই হয়, গুরুত্বপূর্ণ এ হাইকমিশনে মিনিস্টার (প্রেস) হিসেবে আমার নিয়োগদান মর্যাদা ও গৌরবের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমার আজীবনের কৃতজ্ঞতা।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ এখন অতিক্রম করছে একটি সোনালি অধ্যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরের ঐতিহাসিক মুহুর্তে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে জাতির পিতার হাতে গড়া রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ শুভলগ্নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বঙ্গবন্ধুকন্যা, বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে যিনি কেবল কোটি মানুষের হৃদয় জয় করা একজন জননন্দিত নেত্রীই নন; যিনি বিশ্বমানবতার মা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং বাংলাদেশের মানুষের আস্থার নির্ভরতা শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার এ মাহেন্দ্রক্ষণ দীর্ঘপ্রতীক্ষিত। বিশ্ববিধাতার কি অপূর্ব সমীকরণ! সব যেন মহান সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদের যোগসূত্র। স্বাধীনতার ৫০ বছরের এ ঐতিহাসিক মুহুর্তে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং পারস্পরিক মর্যাদা, আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে একে অন্যের বিশ্বস্ত বন্ধু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য নেতৃবৃন্দসহ Guest of Honour হিসেবে যোগ দিতে মার্চ, ২০২১-এ বাংলাদেশ সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০১৫ সালের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এটি দ্বিতীয় বাংলাদেশ সফর। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তিতে নরেন্দ্র মোদির এ সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করেছ।

সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি যখন অসীমাংসিত, করোনা সংকটে ভারতের কাছ থেকে যে মুহুর্তে করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে এক ধরনের চাপা অসন্তোষ ঠিক সে মুহুর্তে ভারতজুড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনায় এলেন তাঁর সূ² কূটনীতির কারণে। বাংলাদেশের হাঁড়িভাঙা আম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ বিভিন্ন অঙ্গবাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘ম্যাংগো ডিপ্লোম্যাসি’তে প্রধানমন্ত্রীর যে সূ² কূটনীতির পরিচয় মিলেছে তা ভারতের গণমাধ্যমে রীতিমতো প্রশংসার জোয়ারে ভেসেছে। দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে এ ম্যাংগো ডিপ্লোম্যাসি যা শেখ হাসিনার এক নতুন বিস্ময়।

দীর্ঘ ৫০ বছরের পথচলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ বারবার আক্রান্ত হয়েছে দেশবিরোধী গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে। যে মহান নেতা নিজের জীবন উৎসর্গ করে হাজার বছরের অবহেলিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে ধন্য করেছিলেন এই পবিত্র মাটিকে তাঁর জীবনাবসান এক রক্তক্ষয়ী করুণ ট্র্যাজেডির শোকগাথা স্মৃতি হয়ে আছে বাঙালির হৃদয়ে। বিশ্বনন্দিত নেতা বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে জীবন দিয়ে ভালোবাসলেও মীরজাফরের প্রেতাত্মারা তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশকেই হত্যা করেত চেয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। কালজয়ী নেতা বঙ্গবন্ধুকে প্রায় সপরিবারে হত্যার পর বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছিল সন্দেহ নেই। তবে কিছু হৃদয়হীন আর বর্বর মানুষের চক্রান্তে বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছে প্রতিনিয়ত। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতালোভী বিতর্কিত ও বর্বর শাসকরা বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে ক্রমাগত বিবর্ণ আর অস্তিত্বহীনই করেনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বীর বাঙালিদের মর্যাদা অনেকটাই ক্ষুণ্ণ করেছে। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ ২১ বছরে বাঙালির অগ্রযাত্রাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবল নির্বাসনেই পাঠানো হয়নি, বিশ্বভুবনে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর, ব্যর্থ এবং অভাবী রাষ্ট্রের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন ব্যর্থ শাসকরা। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যেন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। মৌলবাদ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর স্বপ্নহীন বাংলাদেশ যেন পরিণত হয়েছিল অনিশ্চিত গন্তব্যের ঠিকানায়। এ সময় দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই লজ্জাজনক অধ্যায়ের অবসান হতে যাচ্ছে।

গত ছয় মাসে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সম্মানিত কূটনীতিকদের সঙ্গে বিভিন্ন ফোরামে আমার কথা হয়। দিল্লিকে বলা হয় বিশ্বকূটনীতির প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা আমাকে প্রথম যে প্রশ্নটি করেন তা হলো ‘হোয়াট ইজ দ্য ম্যাজিক অব ইউর প্রাইম মিনিস্টার?’ দ্বিতীয় প্রশ্নটি উচ্চারিত হয় এভাবে- ‘হোয়াট ইজ দ্য ম্যাজিক অব রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ?’ আমি অভিভূত হই, বিস্মিত হই।

কূটনীতিকদের প্রশ্ন থেকেই আমার মধ্যে এক ধরনের কৌত‚হল সৃষ্টি হয় শেখ হাসিনাকে নতুন করে জানার এবং বোঝার। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক অবদান নিয়ে আমার ক্ষুদ্র গবেষণার কাজটিও শুরু হয়। আমি কূটনীতিকদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী সাফল্যে। টানা তিনবারে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার কীভাবে বিশ্বকূটনীতিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরছে তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। বাংলাদেশ যে শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে, নিজস্ব অর্থায়নে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে তা নয়, বিশ্ব অবাক হয়ে দেখছে আসলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার সার্বিক চিত্র। অবাক বিস্ময়ে পর্যবেক্ষণ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে বিশ্বনন্দিত নেতার ভূমিকায় নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনার ম্যাজিকটা কী? আসলেই মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন।

আমার মনে হয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বারবার পরিবর্তন এলেও কার্যত বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করেছেন তা অন্য কোনো সরকার আমলে সম্ভব নয়। যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে তারা কেবল নিজের কথাই ভেবেছে। সাধারণ মানুষ ছিল সম সময় উপেক্ষিত। খুব সহজ সমীকরণ। প্রিয় বাংলাদেশ তো তাদের ভাবনায় না থাকাটাই স্বাভাবিক। মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন, সাধনা এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ফসল। এই বাংলাদেশে তো বঙ্গবন্ধুর সোনালি অর্জন। বাংলার পবিত্র মাটি তো কেবল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবদানেই শ্রেষ্ঠ অর্জন। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ অভিন্ন। নিজেকে ক্ষমতায়ন করার কথা না ভেবে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ বানানোর স্বপ্ন তো কেবল তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় সারাক্ষণ। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত এক আশীর্বাদ।

বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা বাংলা মায়ের পরীক্ষিত সন্তান। বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করাই শেখ হাসিনার চূড়ান্ত লক্ষ্য। গত এক যুগে বিশ্বের মানচিত্রে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ তো শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তার এক বিরল অর্জন।

দ্বিপক্ষীয় কূটনীতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উদাহরণ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজ সমাদৃত। প্রায় ১১ লাখ নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক আশ্রয়, জলবায়ু পরিবর্তনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জের জোটকে নেতৃত্ব প্রদান তারই অনন্য উদাহরণ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ অবদান, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ন্যায়, শান্তি, বিশ্বফোরামে শেখ হাসিনার অবস্থান এক অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তন। সেখানেও বাংলাদেশের সরব ও সক্রিয় অবস্থান। পরিবেশ ফোরামে বাংলাদেশ এখন এলডিসি এবং এসআইভিএমের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলিষ্ঠ ভূমিকায়। জাতিসংঘের অধিবেশনেও বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি এখন শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী ফোরামে শেখ হাসিনা যেন এক সাহসী ঠিকানা।

বিশ্বকূটনীতিকরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা ও কভিড-১৯ মহামারীর মতো বিষয়গুলো মোকাবিলায় বাংলাদেশ সক্রিয় অবস্থান পালন করছে। অর্থনৈতিক কূটনীতি বেগবান করার পাশাপাশি দূতাবাসসমূহের সেবার মান বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ গুরুত্বারোপ করছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ দুই বছর মেয়াদে ডি-৮ এবং তিন বছর মেয়াদে Climate Vulnerable Forum (CVF)-এর দায়িত্ব পালন করছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তির সংস্কৃতি চালু করেছেন এবং ১৯৩টি দেশ তা গ্রহণ করেছে। শান্তির সংস্কৃতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো : মানুষে মানুষে শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো। জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ রোহিঙ্গা নৃ-গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে ২০১২ সালে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্তমূলক রেজুলেশন জাতিসংঘে উপস্থাপন করে এবং তা গৃহীত হয়। ২০১৭ সালে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ভাষণকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবেই শুধু ঘোষণা নয়, স্বীকৃতিও প্রদান করেছে।

করোনাকালে এশিয়ার সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যখন ধারণা করেছিল বিশ্বের কোনো দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১.৩৮ থেকে ৩.৩৮ শতাংশের বেশি হবে না তখন বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিল হওয়ার পর কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বাতিল হওয়া অর্ডারের ৪০ শতাংশ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এ সময়ে শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলাপ করেছেন যাতে এ সাপ্লাই চেইন নষ্ট না হয়। এটা অভাবনীয় সাফল্য। বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্প অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভালো করছে, প্রতি মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে।

মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক বছরে বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরাম এবং ভি-২০-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে, যা নিশ্চয়ই গৌরবের। বাংলাদেশ তার দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে ওই ফোরামগুলোর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জলবায়ু অধিকার আদায়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশে Global Centre on Adaptation (GCA)-এর দক্ষিণ এশিয়ার কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক বহুমাত্রিক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্রিয় নেতৃত্বমূলক ভূমিকা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযানে ও সহনশীলতা গঠনে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যা আমাদের জিপিডির ২.৫ শতাংশ। মিয়ানমারের ১১ লাখ বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গার উপস্থিতি বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব আরও গভীর করে তুলেছে। বাংলাদেশ সরকার একটি উচ্চাকাক্সক্ষা Nationality Determined Contribution (NDC) এ বছরই জাতিসংঘে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক বছরে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে বর্ধিত সহীসোপানে সমুদ্রসীমা -সংক্রান্ত সংশোধিত তথ্যাদি জাতিসংঘে পেশ করেছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণবিষয়ক আন্তর্জাতিক মামলায় যথাক্রমে ২০১২ ও ২০১৪ সালে প্রদত্ত ঐতিহাসিক রায়ে বাংলাদেশ জয়লাভ করে। এ জয়ের ধারায় বঙ্গোপসাগরে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ চূড়ান্ত হয়। মহীসোপানের সীমা নির্ধারণ চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ তার সীমানার সমুদ্রসম্পদ ও সমুদ্রতলদেশের খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এ অর্জন শেখ হাসিনার সরকারের দূরদর্শিতার ফল মনে করে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।

বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। ফলে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে প্রাপ্ত বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্য সুবিধা লোপ পাবে। এজন্য আমাদের ক্রমান্বয়ে দ্বিপক্ষীয় পিটিএ-এফটিএ স্বাক্ষরের দিকে নজর দিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে ভুটানের স্বীকৃতিদানের ঐতিহাসিক দিনে (৬ ডিসেম্বর, ২০২০) দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ ভুটানের বাজারে ১০০ পণ্যে শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা পাবে। আর ভুটান বাংলাদেশের বাজারে তাদের ৩৪ পণ্যে একই সুবিধা পাবে। পিটিএ-এফটিএ স্বাক্ষরের যাত্রা হলো।

কূটনীতির মাধ্যমে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, এ মহামারীতেও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারসাম্য রক্ষা, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এগিয়ে। বিশ্বকূটনীতিতে বাংলাদেশ এখন অবাক বিস্ময়।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেখানে করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ সেখানে তাদের আগেই ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিশ্চিত করছে বহুমুখী উৎসের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের সব মানুষ ভ্যাকসিন পাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টারই এক অনন্য উদ্যোগ। মুজিব শতবর্ষেই আগামী নভেম্বরে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী যারা সারা পৃথিবীতে শান্তির জন্য কাজ করছেন তাদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী বিশ্বশান্তি সম্মেলন আয়োজন করবে বাংলাদেশ। এ সময় বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ সম্মেলনে বিশ্বশান্তি ও মানবতার অগ্রদূত বঙ্গবন্ধুর ওপর আলোচনা করা হবে, যা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়।

শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো হয়তো একদিন ঠাঁই পাবে ইতিহাসের পাতায়।

লেখক : মিনিস্টার (প্রেস), বাংলাদেশ হাইকমিশন, নয়াদিল্লি, ভারত।

সর্বশেষ খবর