মামাবাড়ির আবদার বলে একটি প্রবচন বাংলা ভাষায় বেশ প্রচলিত। তেমন আবদারই করেছে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার, জমির মালিকানা ও ব্যবসা এবং চাকরির সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যবস্থায় কথিত মুরব্বিরা। এ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বাসিন্দা। শত শত বছর ধরে তারা বসবাস করছেন মিয়ানমারের আরাকান বা রাখাইনে। রাখাইনে মিয়ানমার বা সাবেক বার্মার দখলদারি কায়েমের আগে থেকেই সেখানে ছিল রোহিঙ্গাদের বসবাস। মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা জাতিগত নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়ার পর দলে দলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য সীমান্ত এলাকায় জড়ো হন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বসানো হয় প্রহরা। কিন্তু জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আবেদন ও দেশের একটি প্রেসার গ্রুপের চাপে সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়। কথা ছিল জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে তার একটি হলো বিশ্বব্যাংকের আপত্তিকর প্রস্তাব গ্রহণ। সেখানে বলা আছে- রোহিঙ্গাদের সব ধরনের আইনি অধিকার দিতে হবে। বাকি বাংলাদেশিদের মতো অধিকার দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের কাজ করার অধিকার দিতে হবে, তাদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে, তাদের যেখানে খুশি সেখানে চলাচলের স্বাধীনতা দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ইচ্ছামাফিক বসতি গড়ার জন্য জমি কেনার অধিকার অর্থাৎ মালিকানার অধিকার, যা ইচ্ছা ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। তারপর তাদের ভোটাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যাতে তারা ইচ্ছামতো তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন। তারা যেন সহজে যে কোনো চাকরি পেতে পারেন তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবকে শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে অভিহিত করতে চাই। সরকার এ হুমকি মোকাবিলায় কঠোর হবে এমনটিও প্রত্যাশিত।