বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মাদক নিয়ন্ত্রণে ইসলামী অনুশাসন

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

মাদক নিয়ন্ত্রণে ইসলামী অনুশাসন

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন- ব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি যথাযথ সুরক্ষার জন্য পরিপূর্ণ নিশ্চয়তার কালজয়ী পাথেয় নিয়ে ইসলামের আবির্ভাব। জান-মাল, জ্ঞান-বুদ্ধি, বংশধারা ও ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করা এবং ধর্মীয় নিরাপত্তা বিধান ইসলামের শ্রেষ্ঠতম বৈশিষ্ট্য। জ্ঞান-বুদ্ধি সুরক্ষার জন্য ইসলাম মাদক ও মাদকজাতীয় নেশাদ্রব্য হারাম ঘোষণা করেছে। কোরআন-সুন্নায় মাদকের কঠোর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্যনির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য। অতএব, এগুলো থেকে তোমরা বেঁচে থাক, যাতে তোমরা সফল হতে পার। শয়তান তো মদ-জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়। অতএব, তোমরা কি নিবৃত হবে?’ সুরা মায়িদাহ, আয়াত-৯০-৯১।

রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মদ পান করা, ক্রয়-বিক্রয় করা ও এর বিনিময় হারাম করেছেন।’ মুসনাদে আবি হানিফা।

সাহাবি জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর রসুল মাদক বিক্রয়, মৃত প্রাণী, শূকর ও প্রতিমা হারাম করেছেন।’ এ হাদিসের শেষে রয়েছে, তিনি বলেন ‘আল্লাহ ইহুদিদের ধ্বংস করুক! তাদের ওপর যখন এক প্রকার চর্বি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তখন তারা তা বিক্রয় করে এর মূল্য ভোগ করত।’ বুখারি, মুসলিম।

অন্য এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মাদকের ওপর আল্লাহ অভিশাপ করেছেন। অভিশাপ করেছেন মাদক গ্রহণকারী, প্রচারকারী, ক্রেতা-বিক্রেতা, উৎপাদনকারী, সংগ্রহকারী এবং সংরক্ষণকারীর ওপর।’ আবু দাউদ। মাদক ইসলামী শরিয়তের আলোকে নিষিদ্ধ, মারাত্মক ক্ষতিকর ও অপবিত্র বস্তু। কোনো মুসলমান এর সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হতে পারে না। মাদকের প্রভাবে মস্তিষ্কের বিকৃতি সাধন হয়, মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাদকসেবী একপর্যায়ে শারীরিকভাবে অসাধারণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মাদকের প্রতিক্রিয়ায় পাকস্থলী ও লিভারের সমস্যা, হার্টব্লক, হার্ট অ্যাটাক, যৌনক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি প্রাণঘাতী ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। প্রাণঘাতী মাদকের দাপট বাংলাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এলএসডি, ডিএমটি, আইস, কোকেন, হেরোইন, ইয়াবা ও এনপিএস এসব ভয়ংকর মাদক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। মাদক আতঙ্ক এখন সব মহলে। সচেতন অভিভাবকরা এখন চরম উদ্বিগ্ন। মাদকাসক্তি আধুনিক বিশ্বের ভয়ংকর ব্যাধিগুলোর অন্যতম সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তাই বিশ্বশান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য সর্বস্তরে মাদক পরিহার করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও পারিবারিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অনুসরণ করতে হবে ধর্মীয় অনুশাসন।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর