শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্বময় করোনামুক্ত হিজরি নববর্ষের শুভেচ্ছা

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

বিশ্বময় করোনামুক্ত হিজরি নববর্ষের শুভেচ্ছা

মুসলিম বিশ্বে হিজরি সন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় প্রিয় নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় জন্মভূমি মক্কা নগরী ছেড়ে বিরহ-বেদনা নিয়ে মদিনার হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা। এটা মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ঐতিহ্যের মূল ভিত্তি সম্পৃক্ত। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ২৭ সফর মক্কা মুকাররমা থেকে মদিনায় হিজরত করেন প্রিয় নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ২৩ সেপ্টেম্বর, ৬২২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৮ রবিউল আউয়াল মহানবী কুবায় পৌঁছেন। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল মদিনায় পৌঁছেন। হিজরতের এক পবিত্র স্মৃতি বহন করে আসছে আমাদের হিজরি সন। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে পত্র লিখলেন, মদিনা থেকে রাষ্ট্রীয় যে পত্রগুলো আমাদের কাছে ফরমান হিসেবে আসে তাতে তারিখ সংযুক্ত না থাকায় আমরা সমস্যায় নিপতিত হই, সুতরাং সময়ক্রম নির্ধারণের জন্য সাল গণনার ব্যবস্থা করুন। তারপর হজরত ওমর (রা.) সবার পরামর্শক্রমে হিজরি সনের গোড়াপত্তন করেন। পরামর্শ সভায় হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) নবীজির ওফাত সাল থেকে হিজরি সন গণনার প্রস্তাব দেন। হজরত তালহা (রা.) নবুয়তের বছর থেকে সন গণনার অভিমত ব্যক্ত করেন। হজরত আলী (রা.) নবীজির হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব দেন। এরপর সবাই এ মতের ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন। কেননা মহানবীর জন্ম, নবুয়ত, হিজরত ও ওফাত- এ চারটি বিষয়ে জন্ম ও নবুয়ত নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে আর মৃত্যুশোকের স্মারক। তাই হিজরতের মাধ্যমে সন গণনার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। কেননা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনা হিজরত করার মাধ্যমে ইসলাম প্রসার লাভ করে, মুসলিমের সংখ্যা বাড়তে থাকে, মুসলিমদের শক্তি বৃদ্ধি পায়, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, ইসলাম বিজয়ী শক্তিতে পরিণত হয় এবং ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ ছাড়া আল্লাহতায়ালা নবীজির হিজরতের কথা কোরআনুল কারিমে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। বিধায় হিজরতের ঘটনাকে স্মরণ করেই হিজরি সন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রিয় নবী হিজরত করেছেন রবিউল আউয়াল মাসে, কিন্তু তৎকালীন আরব সম্প্রদায় মহররম মাসকে প্রথম মাস হিসেবে গণনা করে আসছিল, বিধায় রবিউল আউয়ালকে প্রথম মাস গণনা না করে মহররম মাসকে হিজরি সনের প্রথম মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও ধর্মীয় চিন্তা-চেতনায় হিজরি সনের প্রভাব সর্বাধিক। হিজরি তারিখের ওপর ভিত্তি করে সম্পাদিত হয় ইসলামের অনেক মৌলিক ইবাদত। প্রতিটি মুসলমানের জন্য হিজরি নববর্ষের সূচনালগ্নে বিগত বছরের গুনাহর কথা স্মরণ করা এবং ইবাদত-বন্দেগিী ত্রুটির ক্ষেত্রে মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং নতুন বছরের শুভাগমন কামনা করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও মানবতার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা, নতুন উদ্যমে উদ্যমী হয়ে ইবাদত-বন্দেগির জন্য সর্বতোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। করোনাভাইরাসের মতো বিশ্বময় মহামারী থেকে বিশ্বমানবতাকে রক্ষায় দুই হাত তুলে মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা।

লেখক : খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর