রবিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলামের কঠোর হুঁশিয়ারি

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলামের কঠোর হুঁশিয়ারি

দুনিয়ার প্রথম হত্যাকাণ্ড  ঘটেছিল হজরত আদম (আ.)-এর সময়। কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করেছিলেন প্রতিহিংসায় ভুগে। হিংসাশ্রয়ী মনোভাব যুগে যুগে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। ইসলামের চার খলিফার তিনজন হজরত ওমর (রা.), হজরত ওসমান (রা.) ও হজরত আলী (রা.) প্রাণ হারিয়েছেন হিংসাশ্রয়ী অপশক্তির হাতে। রসুল (সা.)-এর দুই প্রিয় নাতি ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.) নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। ক্ষমতালোভী পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ চক্রের হাতে তাদের প্রাণ হারাতে হয়। মুসলিম বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসেও ক্ষমতালিপ্সার কারণে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড  ঘটেছে। আমাদের জাতীয় জীবনেও ষড়যন্ত্র, হানাহানি ও অকারণ হত্যাকাণ্ড ট্র্যাজেডি সৃষ্টি করেছে। হানাহানি ও অকারণ রক্তপাত মানবসমাজে বিভক্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে। যে কারণে ইসলামী অনুশাসনে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া হয়েছে। পসুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে অকারণে হত্যাকে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যার অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুরা নিসার ৯৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত কোনো মুসলমানকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাৎ করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। ইসলামে হত্যাকে কবিরা গুনাহ ঘোষণা করে এ পাপে জড়িত হওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি এবং মানুষের জীবন রক্ষায় অবদান রাখার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘এ কারণেই আমি বনি ইসরাইলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে কেউ কোনো হত্যার বিনিময়ে অথবা পৃথিবীতে গোলযোগ সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবকুলকে হত্যা করল, আর যে কারও জীবন বাঁচাল সে যেন সমগ্র মানবকুলের জীবন বাঁচাল।’

ইসলাম ষড়যন্ত্র, হানাহানি ও অকারণ হত্যার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে তা হলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত।’ বুখারি, মুসলিম। অন্য একটি হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে নিয়ে আসবে। হত্যাকারীর চুলের অগ্রভাগ ও মাথা নিহতের হাতের মুষ্টিতে থাকবে আর তার কণ্ঠনালি থেকে তখন রক্ত ঝরতে থাকবে। সে বলবে, হে আমার রব, এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে তাকে আরশের কাছে নিয়ে যাবে।’ তিরমিজি, মুসনাদ আহমদ। ইসলাম এমনই এক জীবনবিধান যেখানে সব ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তি সর্বাধিক ঘৃণিত। ১. যে ব্যক্তি মক্কার হেরেমে নিষিদ্ধ বা গুনাহর কাজ করে ২. যে ব্যক্তি ইসলামে জাহেলি রাজনীতি কামনা করে এবং ৩. যে ব্যক্তি অবৈধ রক্তপাতের মানসে কোনো মুসলমানের রক্ত দাবি করে। বুখারি থেকে মিশকাতে।

রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মোমিনের হত্যাকাণ্ড আল্লাহর কাছে সারা দুনিয়া ধ্বংসের চেয়েও অধিক মারাত্মক। তিনি আরও এরশাদ করেন, ‘জঘন্য কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, কাউকে হত্যা করা, জাহান্নাম অনিবার্য হয় এমন মিথ্যা শপথ করা।’ বুখারি, মুসলিম, নাসায়ি।

তিনি অন্যত্র বলেন, ‘দুনিয়ায় যত অন্যায় হত্যাকাণ্ড ঘটবে তার একাংশ আদম (আ.)-এর পুত্র পাবে। কেননা সে-ই সর্বপ্রথম মানুষ হত্যার প্রচলন করেছে।’

বুখারি, মুসলিম।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে বলা যায় হত্যা ও ষড়যন্ত্র এক জঘন্য অপরাধ। এক মুসলমান আরেক মুসলমানের  রক্ত ঝরাবে তা কোনোভাবেই মুসলিম সমাজে হওয়া উচিত নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ষড়যন্ত্র, হানাহানি ও রক্তপাত থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন।

লেখক :  ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর