সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মহররম ও আশুরা

মাওলানা মাহমূদ হাসান তাসনীম

মহররম ও আশুরা

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ মাস এটি। কোরআনে কারিমে যে চার মাসকে সম্মানিত বলা হয়েছে মহররম এর অন্যতম। আর এ মাসের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট দিন হলো আশুরার দিবস। এ মাসে বিশেষ করে আশুরার দিনে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এ দিনই আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফিরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তবে এ দিনের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে নানা ভিত্তিহীন কথা প্রচার করা হয়। যেমন এ দিন আদম (আ.)-এর তওবা কবুল হয়েছে। নুহ (আ.)-এর কিস্তি জুদি পাহাড়ে থেমেছে। ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইদরিস (আ.)-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইসা (আ.)-এর জন্ম হয়েছে। এ দিনই কিয়ামত সংঘটন হবে ইত্যাদি। এ দিনের অন্যতম একটি ঘটনা হলো কারবালার প্রাঙ্গণে হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত। অনেকের ধারণা, এ ঘটনার কারণেই শরিয়তে আশুরার এত গুরুত্ব। এমনটা ধারণা করা ঠিক নয়। আমাদের সমাজে এ মাস ঘিরে বিভিন্ন ধরনের জাহিলি রসম-রেওয়াজ প্রচলিত আছে, যেগুলোকে কখনই ইসলাম সমর্থন করে না। আমাদের উচিত শরিয়তের পক্ষ থেকে এ মাসের জন্য নির্ধারিত করণীয় আমলগুলো করা আর বর্জনীয় কাজগুলো পরিহার করা।

করণীয়সমূহ : ১. রোজা রাখা। রসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ মুসলিম। এর মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত সবচেয়ে বেশি। রসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ অতীতের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ মুসলিম। ২. বেশি বেশি তওবা-ইসতিগফার করা। রসুল (সা.) বলেন, ‘মহররম হলো আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ তিরমিজি। ৩. দীনের খাতিরে হুসাইন (রা.) যে ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শন করেছেন তা থেকে দীনের জন্য যে কোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকার করার শিক্ষা গ্রহণ।

বর্জনীয়সমূহ : ১. কারবালার শহীদদের উদ্দেশে শোক পালন করা। ২. তাজিয়া বানানো। ৩. শোকগাথা পাঠ বা শোনা। ৪. ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে মাতম ও শরীর রক্তাক্ত করা। ৫. তাঁদের ইসালে সওয়াবের জন্য খিচুড়ি পাকানো। ৬. তাঁরা পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেছেন তাই লোকদের পানি ও শরবত পান করানো। ৭. শোক প্রকাশের জন্য কালো ও সবুজ রঙের পোশাক পরিধান। ৮. এ মাসকে অশুভ মনে করে বিয়েশাদি থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।

আল্লাহ আমাদের এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর