সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আধ্যাত্মিক অজুর সবক নিন

মাওলানা রফিক আহমদ ওসমানী

আধ্যাত্মিক অজুর সবক নিন

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে আমরা অজু করে নামাজ পড়ি। অজু ছাড়া নামাজ হয় না। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ জান্নাতের চাবি। আর নামাজের চাবি হলো পবিত্রতা বা অজু।’ সুরা মায়েদায় আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা যখন নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেবে প্রথমে তোমাদের মুখ, দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও। মাথা মাসেহ কর এবং দুই পায়ের টাখনুসহ ধুয়ে নাও।’ মানুষের জীবনে অজু নিশ্চয় খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই তো আল কোরআনে এত গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি যথাযথভাবে অজু করে কিয়ামতের দিন অজুর অঙ্গগুলো নুরে ঝিকমিক করতে থাকবে।’ রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘অজুর সঙ্গে বান্দার দেহ থেকে গুনাহ ঝরে পড়ে।’ এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কি যথাযথ অজু করি? যে অজু গুনাহ ঝরিয়ে দেয়, কিয়ামতের দিন এ মাটির দেহে নুরের বাতি জ্বালিয়ে দেবে যে অজু আমাদের অজু কি সেই অজু হচ্ছে? দার্শনিক ও সুফিগুরু ইমাম গাজ্জালি (রহ.) তাঁর ছাত্রদের অজু শিখিয়ে বলেন, ‘তোমরা যদি এভাবে অজু করতে পার তাহলে এ অজু কিয়ামত পর্যন্ত তোমার জন্য দোয়া করতে থাকবে। এ অজু দিয়ে তুমি হাদিসে বর্ণিত ফজিলত অর্জন করতে পারবে।’ প্রিয় পাঠক! আমাদেরও তো সে রকম অজুই করতে হবে। আসুন! কিছু সময়ের জন্য আমরা পৃথিবীখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালির ছাত্র হয়ে যাই। এই মহান সুফির দারস থেকে প্র্যাকটিকাল শিখে নিই কীভাবে জীবন্ত অজু করতে হয়। অজুর শুরুতে তোমরা মিসওয়াক মানে দাঁত মেজে নেবে। দাঁত পরিষ্কার না থাকলে মানুষ তোমার থেকে কষ্ট পাবে। অজু করার সময় কাবামুখী হওয়া ভালো। শুরুতে আল্লাহর কাছে এই বলে নেবে, ‘পরম দয়াময় আল্লাহর নামে অজু শুরু করছি। হে আল্লাহ! শয়তানের ওয়াসওয়াসা এবং ধোঁকা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। সে যেন আমার কাছেই ঘেঁষতে না পারে।’ তারপর দুই হাতের কবজি পর্যন্ত ধুতে ধুতে বলবে, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ভালো চাই। বেশি চাই। খারাপ ও কম থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই।’

এরপর তিনবার কুলি করবে। এখানেও তুমি এ দোয়া পড়বে, ‘হে আল্লাহ এ মুখ দিয়ে আমাকে কোরআন তিলাওয়াত এবং বেশি বেশি জিকির করার তৌফিক দিন। দুনিয়া এবং আখিরাতে যেন আপনার জিকিরের সঙ্গেই থাকতে পারি।’ তিনবার নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করবে। তখন বলবে, ‘হে আল্লাহ! আপনাকে খুশি রেখে বেহেশতের সুঘ্রাণ নেওয়ার তৌফিক দিন। জাহান্নামের দুর্গন্ধ থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন।’ তারপর পুরো মুখ ধুয়ে নেবে। তখন এ দোয়া পড়বে, ‘হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দাদের চেহারায় যেদিন হাসি ফুটে ওঠবে সেদিন তোমার নুর দিয়ে আমার চেহারাকে আলোকিত করে দিও। আর যেদিন তোমার শত্রুদের চেহারা কালো হয়ে যাবে সেদিন আমাকে তুমি ভালোবাসার ডানা দিয়ে আগলে রেখ।’ তারপর ডান হাতের কনুইসহ ধুয়ে নেবে। বলবে, ‘হে আল্লাহ! আমার ডান হাতে আমলনামা দিও। বাঁ হাত ধোওয়ার সময় বলবে, হে আল্লাহ আমার আমলনামা বাঁ হাতে দিও না।’ হে প্রিয় তালিবে ইলম ইসলামের ছাত্র! তারপর তুমি মাথা মাসেহ করবে। মাথা মাসেহর সময় পড়বে, ‘হে আল্লাহ! তোমার রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে নাও। তোমার কল্যাণগুলো আমার ওপর নাজিল কর। আমার জন্য জান্নাত আবশ্যক এবং জাহান্নাম হারাম করে দাও।’ তারপর কান মাসেহ করবে আর বলবে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে তাদের দলে শামিল কর, যারা উপদেশবাণী শোনে এবং মানে। ঘাড় মাসেহ করার সময় বলবে, হে আল্লাহ! আমার ঘাড়কে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। দয়া করে এ ঘাড়ে তুমি জাহান্নামের শিকল পরাবে না।’ আমরা এখন অজুর শেষ দিকে চলে এসেছি। এখন ডান পায়ের কবজি পর্যন্ত তিনবার ধোবে। বলবে, ‘হে আল্লাহ! তোমার নেক বান্দাদের সঙ্গে আমার পা সিরাতুল মুস্তাকিমে দৃঢ় রাখ। বাঁ পা ধোওয়ার সময় বলবে, হে আল্লাহ! যেদিন মুশরিক মোনাফেকদের পা পুলসিরাতে পিছলিয়ে যাবে সেদিন আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমার পা তুমি দৃঢ় রেখ।’ এভাবে অজু শেষ করবে। প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধোবে। অজু শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রসুল। হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র। সব প্রশংসা আপনারই। আপনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। আপনি তওবা কবুলকারী। আপনি দয়াময়। আমার তওবা কবুল করে নিন। আমাকে নেক বান্দাদের দলে শামিল করে নিন। ধৈর্যশীল এবং শোকরগোজার বান্দা হওয়ার তৌফিক আপনি আামাদের দিন। বেশি বেশি জিকির ও তসবিহ করার তৌফিক দিন।

লেখক: খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর