চলছে মহিমান্বিত মহররম মাস। আজ পবিত্র আশুরা। মহররম মাস ও আশুরাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে বিভিন্ন রকমের কার্যকলাপ রুসুম রেওয়াজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যার কোনো ভিত্তি কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। মানুষের সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মনগড়া কিছু নিয়মনীতি। এ মাস সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে যা এসেছে তা হলো এ মাস অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কোরআনের ভাষায় যাকে ‘আরবাআতুন হুরুম’ অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম এ মাস বলা হয়েছে। এ মাসে বিশেষভাবে রোজা রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ মুসলিম।
এ মাসে আশুরার দিনের রোজার ফজিলত আরও বেশি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ বুখারি।
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোন মাস আছে যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে যে দিনে আল্লাহ একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ তিরমিজি।আশুরার দিনে রোজা রাখলে আল্লাহতায়ালা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ অতীতের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ মুসলিম।
আশুরার রোজা রাখার ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ হাদিসে এসেছে ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখ।’
মুসনাদে আহমদ।
এ মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সেজন্য এ মাসের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। কারণ এ মাসে আল্লাহ তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদের নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরেছেন। বুখারি।
লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।