বাংলাদেশের ঘাড়ে রোহিঙ্গা নামের বোঝা চাপানোর চার বছর পূর্তি হয়েছে গতকাল। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে বর্মি সেনা অভিযান শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা। গত চার বছরে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় জন্ম নিয়েছে আরও ২ লাখ শিশু। সব মিলিয়ে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। চার বছর আগে পশ্চিমা বিশ্ব ও দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চাপের মুখে সরকার মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে দেশে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। প্রত্যাবাসনের পক্ষে জাতিসংঘসহ প্রায় সব দেশ বিভিন্ন সময়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের শেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২০১৯ সালের মে মাসে। গত বছরের শুরুতে ঢাকায় গ্রুপের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সে বৈঠক আর এগোয়নি। মিয়ানমারে সেনাশাসন কায়েম হওয়ায় রোহিঙ্গারা আদৌ কোনো দিন দেশে ফিরতে পারবে কি না অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর একটি। ১৩ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বিষফোঁড়া হিসেবে বিরাজ করছে। এ সমস্যার সমাধানও যেভাবে অনিশ্চিত হয়ে উঠছে তা উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের বোঝা ঘাড় থেকে নামাতে সরকারকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের কারণে যেহেতু বাংলাদেশ অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে বাধ্য হয়েছে, সেহেতু রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দায়ও তাদের নিতে হবে। নতুবা তারা রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে রেহাই দেবে এমনটিই প্রত্যাশিত।