বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কোরআন হারিয়ে মুসলমান সর্বহারা

মাওলানা রফিক আহমদ ওসমানী

কোরআন হারিয়ে মুসলমান সর্বহারা

প্রভুর সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্ক জুড়ে দেয় কোরআন। কোরআনের সঙ্গে যার সম্পর্ক যত মধুর, রবের সঙ্গে তার সম্পর্ক তত নিবিড়। মানুষের মনোজগৎ পরিবর্তন করে সোনার মানুষে পরিণত করে কোরআনুল কারিম। তাই মক্কার কাফিরদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল কোরআন থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখা। মক্কার মাথাওয়ালা কাফিররা সাধারণ মানুষকে কোরআন শুনতে বারণ করত যাতে সত্য গ্রহণে তাদের অন্তর খুলে না যায়। কোরআনুল কারিমে বিষয়টি মহান আল্লাহ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘অবিশ্বাসীরা বলে, তোমরা এ কোরআন মনোযোগ দিয়ে শুনবে না, বরং শোরগোল তৈরি করবে। তবেই তোমরা বিজয়ী হতে পারবে।’ সুরা হা মিম সিজদা, আয়াত ২৬।

আমাদের পূর্বসূরিদের কোরআনের সঙ্গে ছিল গভীর সম্পর্ক। শুধু পাঠে নয়, তাদের চিন্তা-চেতনায়, কাজে-কর্মে খোদায়ি বাণীর পূর্ণ প্রতিফলন। যে কোনো সমস্যায় তারা কোরআন থেকে সমাধান খুঁজতেন। রাতের পর রাত তাদের অনায়াসে কেটে যেত কোরআন গবেষণায়। একটি কিংবা দুটি আয়াতের মর্ম উদ্ধারে নির্ঘুম রাত কাটাতেন। জীবনের প্রতিটি পদে তারা কোরআন থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে কোরআনের ১০টি করে আয়াত ভালোভাবে শিখে নিতাম এবং তার মর্মার্থ পুরোপুরি বুঝেশুনে আমলে পরিণত করার আগে সামনের আয়াত শিখতাম না। এভাবে আমরা পুরো কোরআন শিখতাম ও আমলে পরিণত করতাম।’ জামেউল বায়ান, প্রথম খন্ড, ৩৫ পৃষ্ঠা।

তাবেয়ি হাসান বসরি (র.) বলতেন, ‘কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে অনুযায়ী আমল করার জন্য। আর তোমরা শুধু তিলাওয়াত করেই বসে থাক। এটা ঠিক নয়। তিলাওয়াতও করতে হবে। পাশাপাশি আমলেরও চর্চা করে যেতে হবে’। মিফতাহু দারুস সায়াদাহ, প্রথম খন্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা। অথচ আমাদের কাছে আজ কোরআন প্রাণহীন গ্রন্থে পরিণত হয়েছে। আমাদের কেউ কেউ কোরআন পড়তে পারলেও এর মর্মার্থ অনুধাবনে সচেষ্ট নয়। কোরআন গবেষণায় কার্যকর উদ্যোগ নেই। এমনকি এর প্রয়োজনীয়তাও আমরা উপলব্ধি করি না। ফলে অনেক কিছু জানলেও কোরআনের মর্মবাণী না জানার কারণে রবের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আমাদের জীবনে কোরআনের প্রতিফলন ঘটে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা কি কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা ঝোলানো?’ সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত ২৪। আরও বলা হয়েছে, ‘আমি আপনার প্রতি বরকতময় গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি যাতে তারা এর আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বিবেকবানরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ সুরা সোয়াদ, আয়াত ২৯।

নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন পড়। মনে রেখ কোরআন যা নিষেধ করে তা যদি বর্জন করতে না পার তবে তোমার কোরআন পড়াই হয়নি।’ মুসনাদুশ শামিয়িন, হাদিস নম্বর ১৩৪৫। হাসান বসরি আক্ষেপ করে বলতেন, ‘তোমরা এখন কোরআনকে শুধু তিলাওয়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছ। অথচ তোমাদের পূর্বসূরি ইমানদাররা কোরআনকে তাদের রবের পক্ষ থেকে বার্তা হিসেবে গ্রহণ করতেন। তারা রাতে কোরআন নিয়ে গবেষণারত থাকতেন এবং দিনে তা কার্যকর করতেন।’ আত-তিবইয়ানু ফি আদাবি হামালাতিল কোরআন।

                লেখক: খতিব, হযরত শাহজালাল  আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্টার জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর