বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মানবতাবিরোধী অপরাধ

তদন্ত ও বিচারে গতি সৃষ্টি হোক

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায়ও করোনা খাতের থাবা বিস্তৃত হয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তসংক্রান্ত কাজ। এই সময়ে তদন্ত কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারেননি দেশজুড়ে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার কারণে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তদন্ত প্রতিবেদনও পেশ করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যর্থতার জন্য মহামারীর পাশাপাশি লোকবল সংকটও অনেকাংশে দায়ী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মতো ভয়াবহ অপরাধে ৩ হাজার ৮৩৯ জনের বিরুদ্ধে ৭৭৮টি অভিযোগ জমা পড়েছিল এ সংস্থায়। গত ১১ বছরে মাত্র ৭৮টির তদন্ত শেষ করতে পেরেছে সংস্থাটি। আর একই সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ঢাকার পুরনো হাই কোর্ট ভবনে থাকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৪২টি মামলায় রায় দিয়েছে। তদন্ত না হওয়া ৭০০ অভিযোগের তদন্তকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে মুজিববর্ষ সামনে রেখে একটি ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ হাতে নেওয়া হয়েছিল। যার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষে অন্তত ৫০ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তির একটা লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় তা আর খুব একটা এগোয়নি। তবে শিগগিরই দুটি অভিযোগের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে আভাস দিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান। বর্তমানে যে গতিতে তদন্তকাজ চলছে তাতে আগামী ১০ বছরেও এ ৭০০ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়- এমনটিই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধে ঘাতক-দালাল ও তাদের প্রভু পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সম্ভ্রম হারিয়েছে ২ থেকে ৩ লাখ নারী। বিবেকবর্জিত ঘাতক-দালালরা পাকিস্তানি দখলদারদের চোখ-কানের ভূমিকা না রাখলে মুক্তিযুদ্ধের জয় অনেক আগেই অর্জিত হতো। এড়ানো যেত ক্ষয়ক্ষতি। এ প্রেক্ষাপটে মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্রুত তদন্ত ও বিচার জাতীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর