শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মাছের কথা

মাছের কথা

কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালির খাদ্য তালিকায় প্রথম ও প্রধান অঙ্গ হিসেবে মাছকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। অবশ্য বাঙালি ছাড়া আরও অনেকে মাছ পছন্দ করে। তবে যত দোষ নন্দ ঘোষ। মাছের কদর বাঙালির ঘরে ঘরে দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশে যেসব মাছ খাল-বিল, হাওর, নদী-নালা, পুকুর ইত্যাদিতে পাওয়া যায় তার মধ্যে আছে রুই, কাতলা, পাবদা, রানী, চিংড়ি, টেংরা, পুঁটি, গলদা চিংড়ি, মৃগেল, চাপিলা, দাড়কিনা, সরপুঁটি, বোয়াল, মলা, বেটকি, চিতল, বাঁশপাতা, ভেড়া, বাঘ, শিং, মাগুর, বালিয়া, উপল, চেং, ইলিশ, কই, আইড়, বাইন, রিটা, ফুটকরা, চেলা, বালুয়া, লাছো, লাড়িয়া, গজার, শোল, তেলাপিয়া, গুতুম, বাচা ইত্যাদি। সমুদ্রে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছকে সামুদ্রিক মাছ বলে। তবে সমুদ্রের মাছের চেয়ে আমাদের দেশের নদী নালা খাল বিল ও পুকুরের মাছের স্বাদ বেশি। সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে প্রচুর সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। সামুদ্রিক মাছ থেকে উন্নতমানের শুঁটকি তৈরি করা হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের চাহিদাও বাড়ছে। আজকাল আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাছের চাষ হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে বাজারে মাছের দামও হুহু করে বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকা-ই এ বৃদ্ধির কারণ। অন্য কারণ হচ্ছে বিদেশে রপ্তানি। দেশের চাহিদা পূরণ না করে বিদেশে মাছ রপ্তানি না করার জন্য ভোক্তাদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন-নিবেদন করা হচ্ছে। ইলিশ মাছের জন্য বাংলাদেশ বিখ্যাত হলেও জাটকা নিধন এবং অসময়ে এসব মাছ শিকারের কারণে সরবরাহে ভাটা পড়ছে। চিতল, কই, কাতলা, মৃগেল মিঠা পানির মাছ। এর সবকটি স্বাদে উপাদেয় আর বড় মাপের মাছ। এতে দূষণ কম থাকে এবং জীবাণু সংক্রমিত হয় না। রুই, কাতলা, মৃগেল যদিও রাজকীয় মাছ, শিং, মাগুর, বোয়াল বা পাবদাও কম নয়। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি ডাক্তাররা রোগীদের পথ্য হিসেবে শিং, মাগুর মাছের ঝোল খেতে পরামর্শ দেন। প্রধান কারণ হিসেবে শিং, মাগুর মাছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস অন্য মাছের চেয়ে বেশি। অসুস্থতার জন্য এসব রোগীদের পথ্য হিসেবে খেতে বলা হয়। এসব মাছ ছোট হলেও গুণের দিক দিয়ে বড় মাছকেও ছাড়িয়ে যায়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাটের গলদা চিংড়ির কদর তো একেবারে সুদূর ইউরোপেও রয়েছে। এ গলদা চিংড়ি রপ্তানি করে আমাদের দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অসংখ্য পুকুর জলাশয় আছে। এতে পরিকল্পিত উপায়ে প্রচুর উন্নত জাতের মাছ চাষ ও উৎপাদন সম্ভব। আমাদের দেশে মাছের মোট চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন হলেও তার বিপরীতে উৎপাদন ৩৫-৪০ লাখ টন। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। 

আফতাব চৌধুরী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর