শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মানুষ মহান আল্লাহর গোলামি করে নিজের কল্যাণের জন্য

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক দুর্বল সৃষ্টি মানুষের প্রতি করুণা প্রদর্শন করে তার সুযোগ-সুবিধা ও জীবনধারণের প্রয়োজনে অন্যান্য সৃষ্টিকে প্রথম তৈরি করেছেন এবং মানুষের খেদমত আঞ্জামের জন্য তাদের মানুষের অনুগত ও আজ্ঞাবহ করেছেন। আর মানুষকে তাদের ওপর প্রাধান্য এবং কর্তৃত্ব দান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ আসমান এবং জমিনের সবকিছু তোমাদের অধীন করেছেন। মানুষের জন্যই সমস্ত সৃষ্টি।’ মানুষের প্রতি এ করুণা ও অনুকম্পার কারণ কী? এর কারণের প্রতি দিকনির্দেশনা করে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি জিন এবং মানুষকে আমার ইবাদত ও মারিফাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ সমস্ত সৃষ্টি মানুষের গোলামি করবে; আর মানুষ করবে আমার গোলামি, আর তা করবে তাদের কল্যাণের জন্যই। আল্লাহ মানুষের প্রতি মায়া-মমতা ও করুণার তাগিদেই এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

দুনিয়ার জীবনে আমরা দেখি, যদি আমার সন্তান উচ্চশিক্ষিত এবং অসাধারণ জ্ঞান ও প্রতিভার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আমার অবাধ্য হয়, আমার সঙ্গে বেআদবি করে, আমার মতের বিরুদ্ধে চলে, তাহলে সে আমার মহব্বত ভালোবাসা ও করুণা পেতে পারে না। সমাজের ছোট-বড় সবাই তাকে বোকা বলবে, অসম্মানের চোখে দেখবে। অন্যপক্ষে অজ্ঞ-মূর্খ সন্তানও যদি পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আনুগত্যশীল হয় তাহলে সে যেমন হবে পিতার কাছে স্নেহ-মায়ার অধিকারী, তেমনি সমাজের লোকও তাকে সম্মানের চোখেই দেখবে। সন্তানের ওপর মাতা-পিতার এ অধিকারের কারণ কী? পিতা-মাতা সন্তান সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন না, হাত-পা দিতে পারেন না, বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি দিতে পারেন না, প্রাণও দিতে পারেন না, মেধাশক্তিও দিতে পারেন না। এ সবকিছু আল্লাহ-প্রদত্ত নিয়ামত। তবে মাতা-পিতা সন্তানের আগমনের মাধ্যম হন। সন্তানের বস্তুজগতে আগমন মাতা-পিতার মাধ্যমে হয়। তারা আল্লাহর দেওয়া অন্ন-বস্ত্রের সাহায্যে সন্তানদের লালনপালন করেন তাই সন্তানদের প্রতি তাদের এ অধিকার রয়েছে। তাহলে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের মানুষের ওপর কী পরিমাণ অধিকার হতে পারে? আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন অতি সুন্দর সুঠাম করে। দেখার জন্য চোখ দিয়েছেন, শোনার জন্য কান দিয়েছেন, বলার জন্য জবান দিয়েছেন, চলাফেরা ও ধরার জন্য হাত-পা দান করেছেন, ভালো-মন্দ বোঝার জন্য দিয়েছেন মেধাশক্তি। আর প্রাণ দিয়ে দেহকে ক্রিয়াশীল করে তুলেছেন। আর এগুলোর দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন বিশাল পৃথিবী। সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্র এবং অসংখ্য গ্রহ-উপগ্রহ এর একটিও মানুষের তৈরি নয়, সবই আল্লাহর তৈরি। আল্লাহ এ সবকিছু মানুষকে দান করেছেন বিনামূল্যে এবং বিনা চাওয়ায়। কোটি কোটি ডলার খরচ করে এর একটিও দোকান থেকে সংগ্রহ করা যায় না এবং যাবে না। অতএব মানুষের ওপর আল্লাহর কী পরিমাণ অধিকার হতে পারে তা বলাই বাহুল্য।

 

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর