বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণে ইসলামের নির্দেশনা

মো. আবু তালহা তারীফ

করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণে ইসলামের নির্দেশনা

করোনা ভ্যাকসিন আমাদের জন্য একটি চিকিৎসা। চিকিৎসা গ্রহণ সম্পর্কে প্রত্যেক ধর্মে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন। তিনি নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করতেন বলে প্রমাণ রয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, কেননা মহান আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তা হলো বার্ধক্য।’ আবু দাউদ।

করোনা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পরপারে পাড়ি জমায়। এ মহামারীর প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা হাজারো চেষ্টা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভ্যাকসিন তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু ভ্যাকসিন তৈরিতে হারাম দ্রব্য ব্যবহৃত হলে করণীয় কী? আর এ ভ্যাকসিন গ্রহণ করা আমাদের জন্য কতটুকু বৈধ। করোনা ভ্যাকসিনে হারাম দ্রব্য ব্যবহৃত হলে তা গ্রহণ করা যাবে কি না এ ক্ষেত্রে ইসলামে সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে। আমরা হাদিস গ্রন্থের মাধ্যমে জানতে পারি হারাম বস্তু দ্বারা তৈরি প্রতিষেধক ব্যবহার করতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু জীবন বাঁচানোর জন্য হারাম দ্রব্য ব্যবহৃত পণ্য ব্যবহার করা দোষণীয় নয়। যে রোগের প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি, কিংবা হালাল কোনো প্রতিষেধক না থাকে তখন অবশ্যই হারাম উপাদান থাকলেও সেই ভ্যাকসিন কিংবা টিকা গ্রহণ করা জায়েজ আছে। কেননা মহান আল্লাহ সবার অন্তরের খবর জানেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘একান্ত নিরুপায় অবস্থায় গুনাহ করার ইচ্ছা ছাড়া শুধু জীবন বাঁচানোর জন্য হারাম খাদ্য খেলে কোনো অপরাধ নেই।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৭৩।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখা জরুরি, একটি রোগের জন্য হারাম কিংবা হালাল প্রতিষেধক থাকলে অবশ্যই আমাকে হালাল প্রতিষেধক গ্রহণ করতে হবে। আর যদি হালালটা না থাকে তাহলে সে হারামটা গ্রহণ করতে সমস্যা নেই। অতএব ওষুধ বা প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন বা টিকা হালাল কোনো কিছু নেই তবে নিরুপায় হয়ে অবশ্যই হারামটা গ্রহণ করা জায়েজ আছে। জীবন রক্ষার খাতিরে করোনা ভ্যাকসিনে হারাম উপাদান থাকলে তা গ্রহণে অসুবিধা নেই। ইসলামে নিজেকে নিজে মেরে ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। আল কোরআনে রয়েছে, ‘তোমরা নিজেকে নিজে মেরে ফেল না।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫। অসুস্থতা-সুস্থতা দুটোই আল্লাহর পক্ষ থেকে। মরে গেলে যাব তবু ভ্যাকসিন নেব না- এমনটা মনে করা এহেন বোকামি। তাহলে আমরা অসুস্থ হলে অযথা ওষুধ খাচ্ছি কেন? ইসলাম ধর্মে শারীরিক ও মানসিকভাবে যাতে সুস্থ থাকে সে ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এখনো কোটি মানুষ এ করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ভ্যাকসিনের বিকল্প নেই। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। নিজেকে সর্বদা সুস্থ রাখতে হবে। কেননা যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তারাই বুঝতে পারবে সুস্থতা কত বড় এক নিয়ামত। পৃথিবীর কোনো কিছুই ভালো লাগে না অসুস্থ ব্যক্তির। এ সুস্থ শরীরে মহান প্রভুর ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হলে প্রভুর ইবাদত করতে ভালো লাগবে না। তিরমিজিতে উল্লেখ রয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তাঁকে বলা হবে আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর