শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গোলাপি এখন খামারে

শাইখ সিরাজ

গোলাপি এখন খামারে

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার দাসের গাঁওয়ে বিশাল সব শেডে বড় বড় শিল্পকারখানা। এসব শিল্পকারখানার মধ্যে লুৎফর রহমান স্বপন নামে এক উদ্যমী যুবক গড়ে তুলেছেন অন্য রকম এক স্বপ্নের কারখানা। আপাত-দৃষ্টিতে বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ভিতরে প্রবেশ করলেই বোঝা যাবে আর দশটি শিল্পকারখানা থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই ভিন্ন। আদল শিল্পকারখানার হলেও এটি মূলত গবাদি পশুর বিশাল খামার। গত ঈদুল আজহার সপ্তাহখানেক আগে তার খামার ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। খামারটি উন্নত বিশ্বের ক্যাটেল ফার্মের মতোই। লুৎফর রহমান স্বপন দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। ইউরোপে পড়াশোনা শেষে বেশ কিছুদিন চাকরিও করেছেন। কিন্তু হৃদয়ে মাটি ও মানুষের অনুষ্ঠানগুলো দেখে তার মনে হলো সোনা ফলা এই দেশ ফেলে কেন তিনি বিদেশে পড়ে থাকবেন। দেশে ফিরে প্রবাসের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়েই চেষ্টা করেছেন খামার গড়তে।

২০০৭ সালে কৃষির সঙ্গে যুক্ত হন লুৎফর রহমান স্বপন। শুরুটা শৌখিনতা থেকে, অনেকটা পরীক্ষামূলক। শতভাগ বাণিজ্যিক চিন্তা নিয়ে খামার গোছাতে শুরু করলেন বছর দুয়েক আগে। বিনিয়োগমুখী কৃষি-শিল্পের সূক্ষ্ম হিসাব বুঝে নিয়েই গড়ে তুলেছেন প্রাণিসম্পদের বিশাল খামার। নানান জাতের ৩০০ গরু মোটাতাজা করেন গত কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে। ঈদের মাসখানেক আগেই তিনি তার ৭০ শতাংশ গরু বিক্রি করে ফেলেন। এবার কোরবানির বাজার মন্দা গেলেও অর্গানিক উপায়ে গবাদি পশু লালনপালন ও ব্যতিক্রমী মার্কেটিং কৌশল অবলম্বন করে নিজের লাভটুকু ঠিকই বের করে নিয়েছেন স্বপন।

স্বপনের খামারে গরুগুলো জাতভেদে ব্লক করে রাখা। দেখলাম প্রায়ই গরুর ব্লকে ‘শোল্ড’ লেভেল লাগানো। স্বপন জানালেন, ফেসবুকেই বিক্রি হয়ে গেছে অধিক গরু। তার ফেসবুক পেজ থেকে ৭০ শতাংশ গরু কিনে নিয়েছেন ঢাকার নতুন ক্রেতা। বাকি ৩০ শতাংশ রয়েছে তার পুরনো ক্রেতার জন্য। অর্থাৎ গরুর এ বাণিজ্যে তিনি শতভাগ সফল। স্বপনের দাবি, গরু লালনপালনের শুদ্ধতা ও ব্যবসায়িক সততা ইতিমধ্যেই ভোক্তা ও ক্রেতাদের মধ্যে পৌঁছে গেছে।

খামের ৩৬০টি দেশি-বিদেশি গরু ছাড়াও ২৫টি দুগ্ধজাত গাভি, মহিষ, ছাগল, গাড়লসহ ৮ বিঘা আয়তনের সমন্বিত খামারটি যেন সফল এক শিল্পোদ্যোগের বারতা দেয়। স্বপন জানালেন, গাড়ল লালনপালন সবচেয়ে বেশি লাভজনক, কারণ এর খাবার খরচ নেই বললেই চলে। তাই গাড়ল নিয়ে তিনি নতুন করে ভাবছেন। তার খামারে বেশ কিছু ছাগলও রয়েছে। ছাগলের স্বাস্থ্যই বলে দিচ্ছিল কতটা যতেœ স্বপন তাদের লালনপালন করছেন। এ ছাড়া আলাদা জায়গায় রয়েছে নেপালি, অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান, ব্রাহমা জাতের উচ্চমূল্যের গরু। শারীরিক গড়ন ও রঙে একেক জাত একেক রকম। এর মধ্যে একটি গরুর সামনে স্বপন গিয়ে বললেন, ‘দাঁত দেখাও তো’ অমনি গরুটা দাঁত বের করল! এ এক মজার ব্যাপার, গরু স্বপনের ভাষা শিখে গেছে। কী নেই স্বপনের খামারে, আছে বিশেষ জাতের মহিষ, ভুটানি ভুট্টি জাতের গরু, পাহাড়ি গয়াল। বিশেষ জাতের মহিষ নিয়েই আজ বলব। তার আগে জানিয়ে রাখি স্বপনের খামারে দানাদার খাবার তৈরিতে ব্যবহার হয় কাঁচা ঘাস, ধানের খড়, খইল, চাল, চালের খুদ, ডালসহ দরকারি উপকরণ। এগুলো সবই গরুর প্রচলিত পুষ্টিকর খাদ্য। মূলত এগুলোই মোটাতাজাকরণে ভূমিকা রাখে। স্বপন জানালেন নিজের পরিবারের যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়, তেমনি গবাদি পশু লালনপালনের ক্ষেত্রেও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হয়, না হলে সফল হওয়া সম্ভব নয়। নিজের ১০০ বিঘা জমির ৭০ বিঘায় তিনি চাষ করেন ঘাস। আর বাকি ৩০ বিঘায় চাষ করেন ধান, গম, ভুট্টা। সবই ব্যবহার করা হয় গরুর খাবার তৈরিতে। ঘুরে দেখলাম তার বিশাল খাবার তৈরির কারখানা। যেমনটি দেখে এসেছি নেদারল্যান্ডস ও কোরিয়ায়।

বলছিলাম স্বপনের বিশেষ জাতের মহিষ নিয়ে। স্বপনের সংগ্রহে আছে নানান জাতের মহিষ, নীলি-রাভি থেকে শুরু করে মুরাহ, জাফরাবাদী, কুন্ডি এমনকি গোলাপি বিশেষ জাতের একপাল মহিষের দেখা মিলল স্বপনের খামারে। শৌখিন উদ্যোক্তার সুপরিকল্পিত ও আধুনিক খামারে মহিষ পালনের এমন দৃশ্য এই প্রথম দেখলাম। এর আগে কোনো কোনো খামারে একটি দুটি গোলাপি বা সাদা বর্ণের মহিষ দেখলেও একসঙ্গে এত ধূসর ও গোলাপি রঙের মহিষ দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার মনে হলো। এই সময়ে খামার গড়ায় উদ্যোক্তারা নতুনের সন্ধান করছেন। আবিষ্কার করতে চাইছেন নতুন কিছু। জন্ম দিতে চাইছেন নতুন সম্ভাবনা। এই সাদা বা গোলাপি রঙের মহিষও সে সম্ভাবনারই অংশ। সাদা বা গোলাপি মহিষ কোথাও কোথাও albino buffalo হিসেবে পরিচিত হলেও White Buffalo নামেই বিশ্বে অধিক পরিচিত। অনেকে বলেন এটি নেটিভ আমেরিকান জাতের বুনোমহিষ। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের ৩১ জানুয়ারি ১৯০৯ সালের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, সাদা রঙের মহিষ দেখতে পাওয়াকে আদিবাসীরা খারাপ বলে মানতেন। কেউ যদি সাদা রঙের মহিষ দেখতে পেতেন তবে তাকে ঔষধি গাছের ধোঁয়া দিয়ে চিকিৎসা করা হতো। সাধারণত উত্তর আমেরিকার বনমহিষ বা বাইসন দেখতে হালকা থেকে গাঢ় বাদামি বর্ণের হয়। কিন্তু সেখানকার আদিবাসীরা সাদা মহিষকে বিবেচনা করতেন পবিত্রতার স্মারকরূপে। এ মহিষ নিয়ে নানা গল্প সেখানে প্রচলিত। একটি গল্পে উল্লেখ আছে, খাদ্যাভাবে ল্যাকোটা সিউক্সে দুজন লোক শিকারের উদ্দেশ্যে বের হন দক্ষিণ ডাকোটার কালো পাহাড়ে। সারা দিন ঘুরেও কোনো শিকার পেলেন না তারা। ক্ষুধা তেষ্টায় কাতর। এমন সময় সেখানে সাদা কাপড় পরিহিত এক সুন্দরী নারী তাদের সামনে আসেন। সেই নারী তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি শিক্ষা দেন। এরপর তিনি মাটিতে চারবার গড়িয়ে যান। গড়িয়ে যাওয়ার পর সেখানে একটা সাদা মহিষের বাচ্চার জন্ম হয়। নারীটি চলে যান কিন্তু সাদা মহিষ পৃথিবীতে বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। সাদা মহিষ নিয়ে এমন সব গল্প প্রচলিত। আমেরিকার আদিম অধিবাসীদের মতে প্রথম সাদা মহিষের দেখা মেলে ১৮৩৩ সালে। গবেষকদের দাবি, সাধারণত প্রতি ১ কোটি মহিষের মধ্যে একটি সাদা মহিষের জন্ম হয়। এ সাদা মহিষের জন্মের প্রক্রিয়াটি অ্যালবিনিজমের কারণ নাকি লিউসিজম তা নিয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে। মতভেদ যা-ই হোক, লুৎফর রহমান স্বপনের দাবি তার খামারের ১২টি গোলাপি মহিষ হচ্ছে নেটিভ আমেরিকান কোনো এক জাতের। তিনি বলেন, এ জাতের মহিষ প্রথম দেখেন বছর তিনেক আগে আমেরিকার অ্যারিজোনা ভ্রমণে গিয়ে। এরপর দেশে ফিরে খুঁজতে থাকেন কী করে নিজের খামারে এ মহিষ লালনপালন করা যায়। তিনি দেশের বিভিন্ন খামার ও ভারত থেকে এক এক করে ১২টি গোলাপি মহিষ সংগ্রহ করেন। তবে স্বপন বলছেন, এখন দেশের অনেক খামারেই দু-একটি এমন মহিষ দেখা যায়। শখ থেকে শুরু করলেও রঙিন এ মহিষ প্রতিপালনে স্বপন এখন বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও দেখছেন। আর সে সম্ভাবনা পুঁজি করতে উদ্যোগ নিয়েছেন এর ব্রিডিং করিয়ে সংখ্যা বৃদ্ধিকরণের।

মনে পড়ছে গয়ালের কথা। মহিষ ও গরুর মিশ্র আদলের একটি বন্যপ্রাণী। যেটি বন্যপ্রাণী থেকে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ গয়াল পালন ও জাত উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার এরশাদ মাহমুদ। তার খামারের সহায়তা নিয়ে দেশের অনেক স্থানেই গড়ে উঠেছে গয়ালের খামার।

আমাদের প্রাণিসম্পদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি গৃহপালিত মাংসল প্রাণী মহিষ। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় উন্মুক্ত স্থানে মহিষ পালন করা হয়। চরে বা নদীতীরে ছেড়ে দিয়ে মহিষ পালন এক পুরনো পদ্ধতি। বলা হয়, মহিষের বাথান। সাধারণত দেশের উপকূলীয় জেলা ভোলা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, পিরোজপুর, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালীতে মহিষের বাথান আছে। এ ছাড়া যমুনাপাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও জামালপুরেও মহিষ পালন করা হয়। এর বাইরে সারা দেশেই কৃষকের গৃহস্থ পর্যায়ে স্বল্পসংখ্যক মহিষ পালনের রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মহিষ নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা, উন্নয়ন বা এ ধরনের তৎপরতার কথা শোনা যায় না।

মনে পড়ছে, ১৯৯০-৯১ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানের জন্য গিয়েছিলাম ভোলার দুর্গম এক চরে। সেখানে সিরাজুল ইসলাম নামে এক তরুণ তার এক সহকর্মীকে নিয়ে লালনপালন করতেন ৫০০-এর অধিক মহিষ। চরে একটা উঁচু টংঘরে তারা থাকতেন। এসব টংঘরকে বলা হতো বাঁশের কেল্লা। সেদিন ছিল বৃষ্টি। এই বৃষ্টি হচ্ছে, থামছে, আবার হচ্ছে। এর ভিতরই আমরা কাজ করছিলাম। সারি সারি মহিষের পিঠে বৃষ্টি এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করেছিল। সিরাজুল মহিষগুলোর প্রতিটির আলাদা নাম রেখেছিলেন। কোনোটির নাম ববিতা, শাবানা, কোনোটির জসিম। একটি মহিষের রং কিছুটা গোলাপি বর্ণের ছিল বলে তার নাম রেখেছিলেন গোলাপি। বাথানে সারি ধরে চলার সময় সিরাজুল যখন মহিষের নাম ধরে ডাকেন ঠিকই গলা উঁচু করে ডাকের সাড়া দেয়। আমরা ক্যামেরায় এসব দৃশ্য ধারণ করছিলাম। কখনো মহিষের কাছে গিয়ে, কখনো তাড়া দিয়ে দিয়ে মহিষগুলোকে চরম বিরক্ত করে তুলেছিলাম। যা হয়, মহিষ বিরক্ত হয়ে আমাদের তাড়া করল। আমরা ভয়ে ট্রাইপড, বুম ফেলে ক্যামেরাটা নিয়ে কোনোমতে টংঘরে আশ্রয় নিলাম। সিরাজুল মহিষগুলো শান্ত করার চেষ্টা করলেন। সেই স্মৃতি এখনো মনে ভাসে।

২০১৫ সালে তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সে সময় ভোলার দুর্গম এক চরে গিয়েছিলাম মহিষের বাথানে। ২৫ বছর পর আবার মহিষ নিয়ে কাজ করছিলাম। সাধারণ জনবসতির বাইরে একপাল মহিষ ঘিরে হাতে গোনা কিছু মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্পটি ছিল অন্য রকম। সেখানে চরেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা হাজার হাজার মহিষের। বাথানে আগের মতো রয়েছে বাঁশের উঁচু কেল্লা। কেল্লাতেই দিনরাতের সংসার কয়েকজন মহিষপালকের। ওখানে মহিষ পালনের মূল লক্ষ্য দুধ উৎপাদন। কিন্তু মহিষপালকদের দাবি, দিনের পর দিন কমছে দুধের উৎপাদন। কারণ মহিষের প্রাকৃতিক খাদ্য দিন দিন কমে আসছে। সেখানে এক প্রৌঢ় আমাকে এসে বললেন, ‘সিরাজ ভাই, আমাকে চিনছেন? আমি সিরাজুল।’ আমি চিনতে পারিনি। তখন তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন ২৫ বছর আগে সেই মহিষের তাড়া খাওয়ার গল্প। ২৫ বছরে যুবক সিরাজুল বুড়িয়ে গেছেন। তাই চিনতে পারিনি। কিন্তু তিনি ঠিকই আমাকে মনে রেখেছেন। তিনি জানালেন, একসময় চরে মহিষের সংখ্যা বেড়েছিল, এখন কমে আসছে।

আমাদের দেশেরই বেসরকারি কৃষি-শিল্প প্রতিষ্ঠান লাল তীর লাইভস্টক লিমিটেড ও চীনের বেইজিং জেনম ইনস্টিটিউট যৌথভাবে মহিষের জীবনরহস্য উন্মোচন করে। ১৪ জন বিজ্ঞানী দুই বছর তিন মাসে এ গবেষণাটি করেন। লাল তীরের বিজ্ঞানীরা আশা করেন, তিন থেকে চার বছরের মধ্যে এ জীবনরহস্যের ফল কাজে লাগিয়ে তারা উন্নত মহিষের জাত উদ্ভাবন করবেন। এ নিয়ে কথা বলি লাল তীর লাইভস্টক লিমিটেডের কর্ণধার আবদুল আওয়াল মিন্টুর সঙ্গে। তিনি জানান, গরু লালনপালনে যে পরিমাণ খরচ মহিষ লালনপালনে সে খরচ নেমে আসে অর্ধেকের কম। মাংস ও দুধের চাহিদা মেটাতে মহিষ রাখতে পারে অনন্য ভূমিকা।

অবশ্য প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট বিএলআরআইর মহিষের জাত উন্নয়নসহ নানামুখী গবেষণায় পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প আছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শেষ হবে ২০২৩ সালে। এ প্রকল্পের তৎপরতা ও কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছি বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল জলিলের সঙ্গে। জানালেন তারা মহিষের সংকর জাত উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছেন।

ভারতে মোট উৎপাদিত দুধের ৭০ শতাংশই আসে মহিষ থেকে। গবেষকদের হিসাবে বাংলাদেশে ১৪ লাখ মহিষ আছে। কিন্তু আমাদের দুগ্ধশিল্পে মহিষের অবদান সে অর্থে উল্লেখযোগ্য নয়। দেশি মহিষ সাধারণত দৈনিক দেড় থেকে আড়াই লিটার দুধ দেয়। কিন্তু নীলি-রাভি, মুররাহ, সুরটি, জাফরাবাদী, মেহসানা, কুন্ডি, ভাদোয়ারি ও ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় মহিষগুলো দৈনিক ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ দেয়। ঠিক এদিকে দৃষ্টি রেখেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পটির শেষনাগাদ আমাদের প্রাপ্তি কী হবে তা-ই প্রশ্ন।

যা হোক, ফিরে আসি সাদা মহিষ প্রসঙ্গে। গত কোরবানির ঈদে দেশের একাধিক খামারে এ সাদা মহিষ দেখা গেছে। সেগুলো ভালো দামে বিক্রিও হয়েছে। গবেষকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এ জাতের মহিষের সম্ভাবনা নিয়ে। তারা স্পষ্টত এ জাতের মহিষ নিয়ে কিছু বলতে পারেননি।

শুরুতেই বলেছি বাণিজ্যিক কারণ ও বৈচিত্র্যের নেশায় আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নিতে অনেক বেশি আগ্রহী। লুৎফর রহমান স্বপন এমন উৎসাহ থেকেই বিশ্বমানের একটি খামার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে নেমেছেন। চার বছরেই নতুন উদ্যোগ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার আশা তার। এ ধরনের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আমাদের গবেষণা ও সম্প্রসারকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ ভূমিকার মাধ্যমেই মহিষ নিয়ে আমরা একটি দারুণ সম্ভাবনার দিকে অগ্রসর হতে পারতাম। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যে কাজ চলছে তা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাক। এ ক্ষেত্রেও অসাধারণ একটি সাফল্য আসুক। আমাদের দুগ্ধশিল্প ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে মহিষের অবদান গৌণ হয়ে না থাকুক।

 

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।  

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর