শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সম্পদের সদ্ব্যবহার

মো. আমিনুল ইসলাম

সম্পদের সদ্ব্যবহার

আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানুষ সৃষ্টির আগেই সৃষ্টি করেন আসমান ও জমিন। আর এ জমিনে তৈরি করেন বান্দার প্রয়োজনীয় সব উপাদান। আর তাকে দান করেছেন প্রয়োজনীয় সম্পদ। কাউকে করেছেন ধনী, কাউকে গরিব। এ সম্পদ কীভাবে মানুষ সদ্ব্যবহার করবে তা তিনি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কোরআনে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যে বীজ উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০ দানা। তবে আল্লাহ যাকে চান তার জন্য আরও বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২৬১। একজন মুসলমানের জন্য শুধু নামাজ-রোজাই যথেষ্ট নয় তার সঙ্গে তাকে একজন দানশীল, বিবেকবান, পরোপকারী, চরিত্রবান, আল্লাহর আইনের প্রতিও আনুগত্যশীল হতে হয়। আমাদের জীবনে অর্থ-বৈভব, সন্তান-সন্ততি হলো পার্থিব জীবনের শোভা বই কিছুই নয়। আমরা যদি সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে না পারি তাহলে তা ডেকে আনবে চূড়ান্ত বিপদ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা বিশেষ, আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে মহাপুরস্কার।’ সুরা আত তাগাবুন, আয়াত ১৫।

সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করতে পারবে না।’ আয়াত ৯২। দুনিয়ার জীবনে যেসব বিষয় মানুষকে আল্লাহ থেকে গাফেল করে তা হলো ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি। আমাদের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা যেন এ দুটির প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে না পড়ি।

এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, কোন সদকায় সর্বাধিক সওয়াব পাওয়া যায়? তিনি বললেন, যে সদকা সুস্থ অবস্থায় এবং ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য করে, অর্থ ব্যয় করে ফেললে নিজেই দরিদ্র হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকা অবস্থায় করা হয়।’ তিনি আরও বললেন, ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে সেই সময় পর্যন্ত বিলম্বিত কোর না যখন আত্মা তোমার কণ্ঠনালিতে এসে যায় এবং তুমি মরতে থাকো আর বল, এ পরিমাণ অর্থ অমুককে দিয়ে দাও, এ পরিমাণ অর্থ অমুক কাজে ব্যয় কর।’ বুখারি, মুসলিম। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি মানুষকে ধনসম্পদ দান করেছেন তার কল্যাণের জন্য এবং পাশাপাশি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার জন্য। ইমানদার হওয়ার অন্যতম শর্ত আল্লাহর রাস্তায় ধনসম্পদ উৎসর্গের জন্য তৈরি থাকা। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা সচ্ছল-অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আর আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।’ আয়াত ১৩৪। সুতরাং আমাদের বুঝতে হবে, মুত্তাকি হলো তারাই যারা আল্লাহর পথে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য সর্বাবস্থায় তাদের সাধ্যানুযায়ী সম্পদ ব্যয় করে। বেশি হলে বেশি, কম হলে কমই ব্যয় করে। অর্থসম্পদ বেশি হলে মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায়, আবার কম হলে সে চিন্তামগ্ন হয়ে আল্লাহর প্রতি গাফেল হয়। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা কখনই আরাম-আয়েশেও আল্লাহকে ভোলে না, বিপদাপদেও আল্লাহর ধ্যানে উদাসীন হয় না।

সুবহানাল্লাহ! কত বড় পুরস্কারের সুসংবাদ এ আয়াতে আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিলেন। এর পরও কি আমরা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয়ে কৃপণতা করব? আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর দেওয়া সম্পদ তাঁর পথে ব্যয় করার তৌফিক দিন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর