বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উম্মতের প্রতি নবীজির দুটি উপদেশ

কারি রফিক আহমদ ওসমানী

উম্মতের প্রতি নবীজির দুটি উপদেশ

ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-কে বলা হয় ‘হাফেজুদ দুনিয়া’ অর্থাৎ জগতের সব তাঁর মুখস্থ। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ বুখারির শরাহ ‘ফাতহুল বারি’র লেখক হওয়ায় হাদিসের ছাত্রদের কাছে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। হাদিসের ওপর তাঁর অনেক গবেষণা আছে। ‘আল ইসদিদাদ লি ইয়াওমিল মাআদ’ অর্থাৎ পরকালের জীবনের প্রস্তুতি নামে তিনি একটি চমৎকার হাদিসগ্রন্থ সংকল করেন। এখানে তিনি শুরুতে কিছু হাদিস উল্লেখ করেছেন যেসব হাদিসে উম্মতের প্রতি নবীজি (সা.) দুটি করে উপদেশ দিয়েছেন। আসুন জেনে নিই বিভিন্ন সময় উম্মতকে দেওয়া নবীজির সে হৃদয় নিংড়ানো উপদেশগুলো।

রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, দুনিয়ার মানুষ টাকাপয়সা, বাড়ি-গাড়ি এসব বৈষয়িক সম্পত্তিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। কিন্তু একজন মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো দুটি জিনিস। যার মধ্যে এ দুটি অমূল্য সম্পদ পাওয়া যাবে দুনিয়া-আখিরাতে সে চূড়ান্ত সফলতা লাভ করবে। ১. আল্লাহর প্রতি ইমান। ২. মানুষের সেবায় জীবন অতিবাহিত। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, বান্দা যখন আল্লাহর প্রতি ইমান আনে তখন সে পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করে। আর সে যখন ইমানের দাবি অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে মানুষের কল্যাণে জীবন অতিবাহিত করে তখন সে আখিরাতের মুক্তি নিশ্চিত করেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে।

অন্য এক হাদিসে নবী (সা.) উম্মতকে আরও দুটি উপদেশ দেন। তিনি বলেন, ‘নানান কারণেই মানুষের মন মরে যায়। জীবনের আনন্দ হারিয়ে যায়। গভীর নিস্তব্ধ হাতাশা বুকের গহিনে বাসা বাঁধে। দুটি কাজ নির্জীব মনে সজীবতা ফিরিয়ে আনে। ১. আল্লাহর সংস্রব। ২. জ্ঞানীদের জ্ঞানপূর্ণ কথা শোনা। এতটুকু বলার পর নবীজি একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, অনুর্বর জমি যেমন শীতল বৃষ্টিতে উর্বর হয়ে ওঠে তেমনি জ্ঞানের অমিয় সুধায় ঘুমিয়ে পড়া মন জেগে ওঠে।’ জ্ঞানের তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে আলী (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানের পথে থাকে সে আসলে জান্নাতের পথেই চলে। আর যে ব্যক্তি মূর্খের মতো দুনিয়ার পেছনে ঘোরে সে আসলে জাহান্নামের চারদিকে ঘুরতে থাকে।’ তিরমিজি।

অন্তর কখন নির্জীব হয়ে পড়ে? কখন জিন্দা দিল ঘুমে বেহুঁশ থাকে? হজরত ওসমান (রা.)-এর হাদিসে তা পাওয়া যায়। তাঁর থেকে বর্ণিত, ‘মানুষ যখন দুনিয়ার চিন্তায় বিভোর থাকে, দুনিয়া নিয়ে স্বপ্ন দেখে তখনই তার সুন্দর জাগ্রত মনটি মরে যায়। তাই হে মানুষ! কখনো মনকে দুনিয়ার ফিকিরে ডুবিয়ে রেখ না। সব সময় আখিরাতের চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। তা হলেই মন কখনো সজীবতা হারাবে না।’ আদাবুল মুফরাদ। প্রখ্যাত তাবেয়ি হজরত ইয়াহইয়া ইবনে মইন (রহ.) বলেন, ‘বুদ্ধিমান মানুষ কখনো দুনিয়ার ফিকিরে ডুবে থেকে অন্তরের সজীবতা হারিয়ে ফেলে না। কারণ বুদ্ধিমানমাত্রই জানে এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, পরকাল চিরস্থায়ী।’

হলেখক : খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্টার জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর