বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইসলামে শারীরিক সুস্থতার গুরুত্ব

এম এ মান্নান

ইসলামে শারীরিক সুস্থতার গুরুত্ব

ইসলাম এমন এক জীবনবিধান যাতে মানুষের সুস্থতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মানুষ যাতে সুস্থ-সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আল কোরআনে। সুস্থ-সবল থাকা সুন্দর জীবনযাপনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রসুল (সা.) সুস্থ-সবল থাকার বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বলেছেন, ‘দুর্বল মোমিনের চেয়ে সুস্থ-সবল মোমিন অনেক উত্তম।’ কারণ সুস্থ-সবল না থাকলে সঠিকভাবে আল্লাহর ইবাদতও করা যায় না। এজন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিমিত জীবনযাপনের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। বিশেষ করে পানাহার, নিদ্রা, জৈবিকতাসহ সব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও পরিমাণ মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জীবনের সব ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই ইসলামী বিধান। যা মেনে চললে অনেক জটিল ও কঠিন রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সংযমী খাদ্যাভ্যাস এবং মদ, তামাক ইত্যাদি থেকে দূরে থাকলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা যায়। ইসলামের খাদ্য বিধানে শূকরের মাংস নিষিদ্ধ। আল্লাহ কোরআনের চার স্থানে শূকরের মাংস খেতে নিষেধ করেছেন। কারণ তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেসব জীবজন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় অথচ নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয় তার জন্য কোনো পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৭৩।

শূকরের মাংস ও চর্বি কোলন ক্যান্সার (বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার), রেকটাল ক্যান্সার (মলদ্বারের ক্যান্সার), অ-কোষের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও ব্লাড ক্যান্সারের বিস্তার ঘটায়।

শূকরের মাংস নিয়মিত খেলে চর্মরোগ ও পাকস্থলীর রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ মাংসের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো এতে ফিতা কৃমির শূককীট থাকে; যাকে বলা হয় টিনিয়া সলিয়াম। এ কৃমি ২-৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এ কৃমির ডিম মস্তিষ্কে বাড়লে মানুষ মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হতে পারে। আর যদি হার্টে বাড়লে তাহলে মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে পারে। খাবার ও জীবনযাপনের ধারার সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। শুধু শূকরের মাংস নয়, ইসলামে সব ধরনের ক্ষতিকর খাবার নিষিদ্ধ। ধূমপান বা মদপানের সঙ্গে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালি এবং যকৃৎ বা লিভার ক্যান্সারের যোগ রয়েছে। তেমনি পান, সুপারি, জর্দা, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সঙ্গেও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের যোগসূত্র রয়েছে। করোনাভাইরাস জগদ্বাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব। প্রতিটি মুসলমান দিনে অন্তত পাঁচবার নামাজ আদায়ের জন্য অজু করেন। যা মানুষকে অনেক রোগবালাই থেকে দূরে রাখে। রসুল (সা.) পরিমিত আহারের নির্দেশ দিয়েছেন এবং উদর পূর্তি করে খেতে নিষেধ করেছেন। পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক অংশ পানি পান করে পূর্ণ করতে এবং এক অংশ খালি রেখে খাবার শেষ করতে বলেছেন। এভাবে পরিমিত আহার করলে হজমশক্তি বাড়লে। ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের উপসর্গ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ইসলাম বিশুদ্ধ ও অনুমোদিত খাবার খাওয়ার জন্য সব মানুষকে নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবসব! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোর না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৬৮।

মদপান ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর সব ঘৃণ্যবস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে সফলকাম হতে পার।’ সুরা মায়েদা, আয়াত ৯০। মদ মানুষের স্বাভাবিকতা কেড়ে নেয়। মানুষ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। একই সঙ্গে তা নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামে সব ধরনের নেশা নিষিদ্ধ। ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে লিভার, পাকস্থলী, মূত্রনালি, কিডনি ও সারভাইক্যাল ক্যান্সার ধূমপানের কারণে হতে পারে। মুখ ও গলার ক্যান্সারে আক্রান্তের শতকরা ৯০ ভাগই তামাক গ্রহণে অভ্যস্ত বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তার ২৫ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারে ভোগে। মহিলারা ধূমপান করলে স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কা ৬০ ভাগ বেড়ে যায়। তামাক, জর্দা, গুল মানুষের জন্য উপকারী নয়। এগুলো চরম ক্ষতিকারক উপকরণ; যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। সেহেতু তা ইসলামে নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজদের ধ্বংসে নিপতিত কোর না।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো স্থান ইসলামে নেই।’ ইবন মাজাহ, ইমাম মালিক। অপবিত্রতা, অপরিচ্ছন্নতা এবং অশালীন জীবনাচরণ মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মলত্যাগের পর ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন না হলে কোলন ক্যান্সার হতে পারে। এজন্য ইসলামে মলত্যাগের পর ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলামে বিবাহবহির্ভূত যৌনতা নিষিদ্ধ। যে কারণে মুসলমানের মধ্যে এইডস, এইচআইভিতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। ইসলাম পবিত্রতার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধাংশ।’ মিশকাত। শারীরিক ও মানসিক পরিচ্ছন্নতা ইসলামী অনুশাসনের অন্যতম পালনীয় বিষয়।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর