শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্যর্থ নেতাদের পদত্যাগের পদাবলি

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচ.ডি

ব্যর্থ নেতাদের পদত্যাগের পদাবলি

একসময় বানকশি নামে পরিচিত ইংল্যান্ডের এক ভবঘুরে গায়কের একটি বাণী বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তিনি বলেছেন, ‘তুমি যদি ক্লান্তি বোধ কর তবে বিশ্রামে যাও, পালিয়ে যেও না।’ বিংশ শতকের শুরুর দিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুফি-সাধক ও যন্ত্রশিল্পী হজরত এনায়েত খানের আরেকটি বাণী পশ্চিমা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। তাঁর মতে, ‘কোনো কিছু থেকে নিজেকে বিরত রাখা পবিত্র আত্মার একটি গুণ।’ পশ্চিমা বিশ্বে দায়িত্ব পালনে ক্লান্তি বা ব্যর্থতার জন্য কাউকে শাস্তি প্রদান বা দায় মাথায় নিয়ে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া একটি প্রচলিত বিষয়। তবে আমাদের উপমহাদেশে পদ-পদবি থেকে কাউকে অব্যাহতি প্রদান কিংবা স্বেচ্ছায় পদ-পদবি ছেড়ে দেওয়াটা সহজে কেউ মানতে পারে না। অন্যদিকে অপরাধবিজ্ঞানীদের মতে কাউকে সাজা দেওয়ার অর্থ হলো সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করা, যা একদিকে সমাজকে অপরাধ ও অনিয়ম থেকে রক্ষা করে, ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করে এবং অপরাধী বা অন্যায়কারীকে সংশোধনের সুযোগ দেয়। কিন্তু ক্ষমতার জটিল চক্রে এ নীতিকথা হারিয়ে যায় বলে বহু অন্যায়, অপরাধ ও অনিয়মকারী পার পেয়ে যায়। করোনাকালে এ মহামারী মোকাবিলায় দেশে দেশে বহু অন্যায়, অপরাধ, অনিয়ম ও ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়। হয়তো বা তার বড় অংশই আলোচনার বাইরে ছিল। তবে যা কিছু প্রকাশ পেয়েছে তাতেই মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে বারবার। মাস্ক ছাড়া চলাচল ও জনসংযোগের দায়ে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জেইর বলসোনারোকে ১১০ মার্কিন ডলার সমতুল্য ৫৫৫ ব্রাজিলিয়ান রিয়াল জরিমানা করেছেন সে দেশেরই বামপন্থি মরানহাও রাজ্য কর্তৃপক্ষ। এ বছর ২১ মে মরানহাও রাজ্যের গভর্নর ফ্লেভিও ডিনো এ জরিমানার তথ্য প্রকাশ করেন এবং আইন সবার জন্য সমান বলে দাবি করেন। মরানহাও রাজ্যের রাজধানী সাও লুইস থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে রিওডি জেনেরিও অঞ্চলে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জেইর বলসোনারো রাজ্যপ্রণীত স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করে মাস্ক না পরে জনসমাবেশ, জনসংযোগ ও মোটরসাইকেল র‌্যালি করেন। এজন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রচলিত আইনে ৫৫৫ রিয়াল জরিমানা করেন। উল্লেখ্য, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি বরাবরই করোনা প্রতিরোধে উদাসীন ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে ব্রাজিলের অবস্থান দ্বিতীয় এবং আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয়। অভিযোগকারীদের মতে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি অবজ্ঞা করেছেন এবং ‘একদিন আমাদের সবাইকে মরতে হবে’ বলে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন। তার ওপর রাজ্য সরকার কর্তৃপক্ষ ঘোষিত ‘লকডাউন’ নিয়ে তিনি বিদ্রুপ করেন। এ জরিমানা ঘটনার আগেই বামপন্থি রাজ্যপ্রধান ফ্লেভিও ডিনোকে তাঁর রাজ্যে দীর্ঘদিন লকডাউন বলবৎ রাখায় তিরস্কার করেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্য সরকার সবকিছু খুলে না দিলে কেন্দ্রীয় সরকারই সব খুলে দেবে মর্মে সাংবাদিকদের জানান। অন্যদিকে শুরু থেকেই ব্যাপক করোনা সংক্রমণের বিপরীতে সীমিত চিকিৎসাব্যবস্থা এবং যথাযথ প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ঘরে-বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি। এমনকি দেশটির সংসদ (সিনেট) করোনা মেকাবিলায় রাষ্ট্রপতি ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং ব্যাপক প্রাণহানির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এ তদন্ত রিপোর্টের ওপর রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর চলতি মেয়াদের ভাগ্য এবং আগামী বছর অনুষ্ঠেয় পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন লাভ ও জয়-পরাজয় নির্ভর করবে বলে ধারণা ব্রাজিলবাসীর। (সূত্র : আলজাজিরা ডটকম ২২ মে ২০২১ এবং রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড ডটকম ২৪ মে ২০২১)।

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ছিল নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী মিসেস এরনা সোলবার্গের জন্মদিন উপলক্ষে নিতান্ত এক পারিবারিক মিলনমেলা। মাত্র ১৩ জন নিকটাত্মীয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এরনা তাঁর ৬০তম জন্মদিন পালন করেন। মূলত স্বামী সিন্ড্রে ফিনসের আয়োজনে এক পাহাড়ি রিসোর্টের রেস্তোরাঁয় এ অনাড়ম্বর জন্মদিন পালন করা হয়। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করে নরওয়ের রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেতার ও টেলিভিশন সংস্থা নরওয়ে ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (এনআরকে)। রাষ্ট্রমালিকানাধীন হলেও এনআরকে নরওয়ের সর্ববৃহৎ প্রচারমাধ্যম, যার রয়েছে ঈর্ষণীয় গ্রহণযোগ্যতা। বিষয়টিকে নিজের ভুল বলে স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেজন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে পুলিশ তাঁর পিছু ছাড়েনি। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মাসাধিককাল তদন্ত করে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত এবং ২০ হাজার ক্রাউন জরিমানা ধার্য করে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ টাকার সমান। ৯ এপ্রিল সরকারিভাবে পুলিশ এ জরিমানার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে। পুলিশের ভাষ্যমতে সরকারি আদেশ মোতাবেক ওই সময় একই স্থানে ১০ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এরনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ১৩ জন যোগ দেন যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জরিমানার কথা গণমাধ্যমকে জানান নরওয়ের পুলিশপ্রধান ওলে সাইভারউড। পুলিশপ্রধান বলেন, আইন সবার জন্য সমান এবং আইন ও বিচারের প্রতি জনগণের আস্থা বজায় রাখতে এ জরিমানা যৌক্তিক। তবে এ কথা সত্য, সাধারণ কোনো নাগরিকের জন্য হয়তো পুলিশ এতটা শক্ত অবস্থান নিত না। তবে পুলিশপ্রধান মনে করেন করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীই অগ্রণী ভূমিকা  পালন এবং আরোপিত বিধিনিষেধ পালনে ব্যক্তিগত উদাহরণ স্থাপন করবেন এমনটিই বাঞ্ছনীয়, যা প্রধানমন্ত্রী করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রধানমন্ত্রী এ শাস্তি মেনে নিয়ে জরিমানার অর্থ প্রদানের ঘোষণা দেন।

করোনার সংক্রমণ রোধে প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল অস্ট্রিয়া। ফলে ২০২০ সালের শুরুর দিকেই নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ ও লকডাউন ঘোষণা করা হয় দেশটিতে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয় এবং রেস্তোরাঁ, পার্ক, গ্রোসারি শপ প্রভৃতি কিছু শর্ত সাপেক্ষে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। রেস্তোরাঁ ও বারের ক্ষেত্রে শর্ত ছিল ১০ জনের বেশি একসঙ্গে বসতে পারবে না এবং রাত ১১টায় রেস্তোরাঁ ও বার বন্ধ করে দিতে হবে। ২৪ মে ২০২০, রবিবার ছুটির দিনে অস্ট্রিয়ার বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও ৭৬ বছর বয়সী বর্তমান রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভেন্ডার বেলেন তাঁর স্ত্রী ও অন্য দুই বন্ধুকে নিয়ে রাতের খাবার খেতে যান রাজধানী ভিয়েনার একটি ইতালীয় রেস্তোরাঁয়। লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর এটিই ছিল রাষ্ট্রপতির প্রথম ব্যক্তিগত আড্ডা বা আউটিংয়ের ঘটনা। আর পুরনো দিনের বন্ধুদের পেয়ে গল্প-আড্ডায় ঘড়ির দিকে দেখা হয়নি রাষ্ট্রপতির। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ রাত ১১টা বেজে গেলেও রাষ্ট্রপতিকে কিছু বলেননি, যেহেতু তিনি বন্ধুদের নিয়ে মূল রেস্তোরাঁর বাইরে বারান্দা বা টেরাসে বসে ছিলেন। তবে বিষয়টি চোখে পড়ে বেরসিক পুলিশের। ফলে উঠে যেতে হয় রাষ্ট্রপতিকে। তবে যেহেতু বিষয়টি পুলিশের চোখে আইন ভঙ্গের ঘটনা, সেহেতু তৎক্ষণাৎ ক্ষমাপ্রার্থনা করেন ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি। এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন- ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটা ছিল একটা ভুল। লকডাউন শুরুর পর এই প্রথম আমি আমার স্ত্রী ও দুই বন্ধু নিয়ে বের হই। গল্প করতে গিয়ে সময়ের দিকে খেয়াল রাখা হয়নি।’ অন্যদিকে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ বলেছেন, আইন মেনে রাত ১১টার পর তাঁরা আর কোনো খাবার বা পানীয় সরবরাহ করেননি। তবে যেহেতু তাঁরা মূল রেস্তোরাঁর বাইরে অর্থাৎ বারান্দা বা টেরাসে বসে ছিলেন তাই তাঁদের কিছু বলা হয়নি। তবে রেস্তোরাঁকে কোনো জরিমানা করা হলে রাষ্ট্রপতি নিজেই তা বহন করবেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। (সূত্র : বিবিসি ডট কম ২৪ মে ২০২০)।

বিশ্বের গণমাধ্যমে এ সময়ের আলোচিত ও সাড়া জাগানো খবর হলো- ৪২ বছর বয়সী ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মি. ম্যাট হ্যানককের পদত্যাগ। উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুততম সময়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য টিকার ব্যবস্থা এবং করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার টেনে ধরার মাধ্যমে বিশ্বের একজন সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাতারে নিজেকে দাঁড় করাতে পেরেছিলেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। কিন্তু বাগড়া দেয় ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য সান’। ২৫ জুন ২০২১ পত্রিকাটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তাঁরই অফিসের মহিলা সহকর্মী গিনা কোলাডানজিলোকে জড়িয়ে ধরে চুমো খাওয়ার ছবি প্রকাশ করে। অথচ সরকারি আইন মোতাবেক অফিস-আদালতে তখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ ছিল, যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভঙ্গ করেন। গণমাধ্যমের খবরমতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ‘স্মোক ডিটেকটরে’ গোপনে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরায় এ দৃশ্য উঠে আসে, যা গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রকাশ হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক গণমাধ্যমে প্রথমত, ‘অত্যন্ত দুঃখ’ প্রকাশ এবং পরে পদত্যাগ করেন।

দীর্ঘদিনের যুদ্ধের কারণে ইরাকের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এমনিতেই নাজুক অবস্থায় ছিল। এরই মধ্যে করোনার করাল ছোবল কোণঠাসা করে ফেলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানী বাগদাদের পূর্বাঞ্চলের ইবনে আল খাতিব হাসপাতালকে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ এবং কভিড-১৯ হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। ২৪ এপ্রিল ২০২১ এ হাসপাতালের একটি অক্সিজেন ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়। এতে হাসপাতালটিতে আগুন ধরে যায় এবং ৮০ জনের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পরপরই ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল কাজেমি তাঁর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল তামিমি এবং বাগদাদের গভর্নর মুহাম্মদ জাবেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরই সঙ্গে বরখাস্ত হন হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক পরিচালক। এ নিয়ে তদন্তও চলতে থাকে। ১০ দিনের মাথায় ইরাক সরকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল তামিমির সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে। তবে সেদিনই স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তামিমি।

ইরানের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রেজা মালিক জাদেহ পেশায় একজন চিকিৎসক। চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা ও পরিচালনার দায়িত্ব ছিল মালিকের কাঁধে। তবে মালিকের ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী অর্থাৎ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাইদ নামাকি ২০২০ সালের নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ইরানের ইসফাহান শহরে এক বক্তৃতায় করোনা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণা কাজে আসছে না বলে মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যের পরপরই পদত্যাগ করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রেজা মালিক জাদেহ, যিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। তবে যাওয়ার আগে তিনি এক হাত দেখে নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। মালিকের দাবি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সঠিকভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেননি। ফলে ইরানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মালিকের পথ অনুসরণ করে কভিড-১৯ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আলী নাবাখত হাজিজিও পদত্যাগ করেন।

১৫ মাস আগে (২ জুলাই-২০২০) পদত্যাগ করেন নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লার্ক। করোনা মোকাবিলায় তাঁর মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। বিশেষত বিদেশ থেকে নিউজিল্যান্ডে প্রত্যাবর্তনকারী ও বিদেশ থেকে আগত ভিনদেশি নাগরিকদের করোনা টেস্ট ও আইসোলেশনে রাখার ক্ষেত্রে ক্লার্ক ব্যর্থ হয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লার্ক এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আসলে ব্লুমফিল্ডের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। যদিও সে দায় তিনি পক্ষান্তরে বারবার তাঁর নিজের কাঁধেই তুলে নেন। তবে লকডাউনের সময় প্রথমত সপরিবারে সমুদ্রের পাড়ে বেড়ানো এবং দ্বিতীয়ত পাহাড়ের পাদদেশে মোটরসাইকেল ট্র্যাকিং করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মিসেস জাসিন্ডা আরডার্ন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ গ্রহণ করে বলেন, ডেভিড ক্লার্ক উপলব্ধি করেছেন যে তাঁর (স্বাস্থ্যমন্ত্রীর) উপস্থিতি সরকারের চলমান করোনাবিরোধী অভিযানে তেমন ভূমিকা রাখছে না। তাই তাঁর দেওয়া পদত্যাগপত্র তিনি গ্রহণ করেছেন।

যে নিয়ম অনুসরণ করে করোনা টিকা গ্রহণের কথা তা ভঙ্গ করেছিলেন আর্জেন্টিনারই অন্তত ১০ জন নামিদামি ব্যক্তি। তার মধ্যে একজন ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক। তবে নিয়ম ভঙ্গ করে টিকা গ্রহণের বিষয়টিই সংবাদ হয়ে যায় একাধিক সংবাদমাধ্যমে। এর ফলে কালবিলম্ব না করে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গিনেস গঞ্জালেস গার্সিয়া পদত্যাগের বার্তা প্রকাশ করেন এক টুইট বার্তায়। যদিও তিনি দাবি করেন, অফিসে তাঁর অনুপস্থিতিতে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে কিছু ব্যক্তি নিয়ম ভেঙে কভিড-১৯ টিকা গ্রহণে সক্ষম হন। তবে বলতে বাকি থাকে না যে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি আলবার্টো ফার্ন্দান্দেজ এ ঘটনা জানার পর তাঁর স্বাস্থ্যমন্ত্রী গিনেস গঞ্জালেসকে পদত্যাগের বার্তা পাঠান, যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ পালন করেন।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন রুডল্ফ অ্যানচোবার। ৬০ বছর বয়সে দিনরাত পরিশ্রম করে ভালোই সামাল দেন করোনা পরিস্থিতি। ১৫ মাসের দায়িত্বকে তাঁর মনে হয়েছে যেন ১৫ বছরের দায়িত্ব। তাই ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে দেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর মনে হয়েছে, এমন একজনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত যিনি শতভাগ ফিট। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ এ কাজের জন্য যে শতভাগ ফিট নন, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেন। ফলে ১৯ এপ্রিল ২০২১ নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন উল্ফগ্যাংগ মাকসস্টেইন।

                লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

সর্বশেষ খবর