শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বন্ধ হোক সুদের ব্যবসা

হাই কোর্টের নির্দেশ অভিনন্দনযোগ্য

সেই ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশের গরিব মানুষ বিশেষ করে কৃষকের বেশির ভাগ ছিল সুদ ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে বন্দী। ৯৫ শতাংশ মুসলিম কৃষক ছিল অসহায় অবস্থার শিকার। এ অবস্থার অবসানে তৎকালীন অখন্ড বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করেন। এ আইন বাংলার কৃষকসমাজকে সাইলকি প্রথা থেকে মুক্তি দেয়। ফসল না হওয়া সত্ত্বেও জমিদারদের খাজনা দিতে বাধ্য হতো কৃষক। ছেলেমেয়ের বিয়ের জন্যও তারা সুদি ব্যবসায়ীদের থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হতো। ঋণের বদলে নিরক্ষর কৃষকের টিপসই নিয়ে তাদের জমিজমা লিখে নেওয়ার ঘটনাও ঘটত অহরহ। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক যে ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করেন তা লাখ লাখ কৃষককে মানবেতর অবস্থা থেকে রক্ষা করে। স্বাধীনতার পর নতুন রূপে সুদি ব্যবসা শুরু হয় বিভিন্ন এনজিওর নামে। বর্তমানে শুধু কৃষক নয়, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ সুদি ব্যবসায়ী অনুমোদিত-অননুমোদিত এনজিওগুলোর কাছে জিম্মি। সেই ব্রিটিশ আমলে সুদ দিতে ব্যর্থ হলে জমির মালিকানা হারাত কৃষক। পাকিস্তান আমলে কাবুলিওয়ালা নামের সুদখোরেরা সুদ আদায়ে নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন চালাত। এমনকি ঋণ নিয়ে কেউ মারা গেলে তার কবরের ওপর লাঠি দিয়ে আঘাত করত কাবুলিওয়ালারা। বর্তমানে কেউ সুদ দিতে ব্যর্থ হলে নব্য কাবুলিওয়ালারা ঘরের জিনিসপত্র এমনকি টিন খুলে নিয়ে যায় এমন অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। এমনকি এনজিওর ঋণের সুদ দিতে না পেরে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন অনেকে। বুধবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনুমোদনহীন সুদ কারবারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। আমরা আশা করব এ নির্দেশ সুদ ব্যবসার লাগাম টেনে ধরতে অবদান রাখবে। বন্ধ হবে সুদের নামে গরিব মানুষকে শোষণ করার কারবার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর