মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মেধা পাচার করছে না

ড. মশিউর রহমান

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মেধা পাচার করছে না

করোনাকালীন পড়াশোনা, দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা, সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ, চলমান শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে উপাচার্য মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক আকতারুজ্জামান-

 

করোনাকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে চলছে?

উপাচার্য : কভিড-১৯ মহামারীর কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিশেষ করে সরাসরি পাঠদান আমরা করতে পারিনি। কিন্তু সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার বন্ধ ঘোষণা করার পর দেড় মাসের মধ্যেই করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করি। শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস শুরু করার পর  শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যথেষ্ট সাড়া জাগে। যদিও ডিভাইস না থাকা, ডাটা কিনতে খরচসহ নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা আমাদের জানিয়েছে, কলেজ বন্ধ থাকায় তাদের যাতায়াত খরচ কমে গেছে, টিফিনের খরচ বন্ধ হয়েছে, যানজট পোহাতে হচ্ছে না- সব মিলিয়ে অনলাইন কার্যক্রমে কিছুটা খরচ হলেও তা বোঝা হয়ে ওঠেনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলীয় এলাকায়, পার্বত্য এলাকায় মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীদের কিছুটা সমস্যা পোহাতে হয়েছে। এসব এলাকা ছাড়া অনলাইনের ক্লাসে সন্তোষজনক ছাত্রছাত্রী শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে না। এ প্রক্রিয়া সরাসরি পাঠদানের বিকল্প না হলেও অনেকটাই ফলপ্রসূ হচ্ছে।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে সারা দেশে প্রথম মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে। এ ব্যাপারে বলুন।

উপাচার্য : শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য উদগ্রীব হলে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শুরু করি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর করোনার সংক্রমণ বাড়লে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের। অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি মৌখিক পরীক্ষা থেকে অনলাইন পরীক্ষা আরও ফলপ্রসূ হয়েছে। কারণ সব মৌখিক পরীক্ষার রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

 

করোনার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘিœত হয়েছে। সেশনজট নিরসনে কী উদ্যোগ নেবেন?

উপাচার্য : ইতিমধ্যে ক্লাস শেষ করে বিভিন্ন বর্ষের সশরীরে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। করোনার মধ্যেই চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ¯œাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে, ডিগ্রির পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। শর্তসাপেক্ষে অনার্স প্রথম থেকে দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। সেশনজট কাটিয়ে উঠতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার করা হচ্ছে। এ ক্যালেন্ডার হিসাব করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে যেন তারা সেশনজটে পতিত না হয়। কোনো কারণে যদি করোনা পরিস্থিতির ফের অবনতিও ঘটে তবু আমরা সচেষ্ট থাকব তাদের শিক্ষা কার্যক্রম যথাসময়ে শেষ করে পরীক্ষা নিতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম আর বন্ধ করা হবে না। করোনার সংক্রমণ বন্ধ হলেও এ পাঠদান প্রক্রিয়া চলবে। আমরা যদি বেশির ভাগ ক্লাস অনলাইনে নিতে পারি, একই সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসে সশরীরে পরীক্ষাগুলো নিতে পারি তবে এ দুই প্রক্রিয়া মিলে ‘ব্লেন্ডিং’ এডুকেশন সিস্টেম চলমান রাখতে পারলে বিদ্যমান সেশনজট নিরসন করতে পারব। পূর্বের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম ফের প্রবর্তন করেও সেশনজট কমিয়ে আনার চিন্তা রয়েছে আমাদের।

 

প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন চলছে। এ ব্যাপারে বলুন।

উপাচার্য : সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলো প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলতি মাসে ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করবে। রাজধানীর কোনো একটি কলেজে সশরীরে এর আয়োজন করে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়ালে যুক্ত করার ভাবনা রয়েছে। এ ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেই নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার জানিয়ে দেব। আশা করি নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়তে হবে না। যথাসময়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হবে।

 

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার তারিখ ঘোষিত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে?

উপাচার্য : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তো বন্ধ নেই। অনলাইন ক্লাস, পরীক্ষা, ভর্তি প্রক্রিয়া সবই তো চলছে। শুধু সশরীরে ক্লাস বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে কিছু বর্ষের ক্লাস সশরীরে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ কমে এসেছে। আশা করি খুব শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে স্বল্পপরিসরে সশরীরে পাঠদান কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে। প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনের পাশাপাশি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস করানোর একটা ব্যবস্থা থাকবে।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকাদানের অগ্রগতি কত দূর?

উপাচার্য : বিশ্ববিদ্যালয় অধীন কলেজগুলোর ৮ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে। কিন্তু প্রায় ২১ বা ২২ লাখ শিক্ষার্থীর এনআইডি নেই। এসব শিক্ষার্থীকে গুরুত্ব দিয়েই এনআইডি না থাকা শিক্ষার্থীদের জন্মসনদের মাধ্যমে করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এভাবে তারা টিকাও পাবে, সনদও পাবে। এ প্রক্রিয়ায় রেজিস্ট্রেশনের পর শিক্ষার্থীরা করোনার টিকা নিতে পারছে। আশা করি খুব শিগগিরই টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত পাঠদান হয় না- এমন অভিযোগ কারও কারও। এ ব্যাপারে বলুন।

উপাচার্য : বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কথা বলতে হবে। এসব মন্তব্য অবান্তর- অযৌক্তিক। একজন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া বা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকার ও তার পরিবার যেভাবে অর্থ বিনিয়োগ করে সে তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পেছনে বরাদ্দের পরিমাণ অনেক কম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী নিজে টিউশনি করে, ছোটখাটো কাজ করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে তার জীবন অতিবাহিত করে। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবারের দায়িত্বও পালন করে। এটাই বাস্তবতা। যারা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত পড়াশোনা হয় না তারা না ভেবেই কথা বলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বিসিএস ক্যাডার হচ্ছে, সরকারি বিভিন্ন চাকরি পাচ্ছে। বেসরকারি সেক্টর ছাড়া নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবেও গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না হলে এগুলো সম্ভব হচ্ছে কীভাবে? আসলে আমাদের শিক্ষার্থীদের অন্যদের থেকে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যায় আমাদের শিক্ষার্থীরা। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরির বাজারে ভালো করতে পারে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যদের চেয়ে নৈতিকতার গুণাবলিসমৃদ্ধ মানুষ হচ্ছে। তারা দেশের জন্য কাজ করছে, মেধা পাচার করছে না।

 

চতুর্থ বর্ষে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিশেষ পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে বলুন।

উপাচার্য : ফল প্রকাশের পর অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীরা ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করলে আমরা সাধারণত ফল পুনর্নিরীক্ষা করি। কিন্তু তাদের দাবি ছিল ফেল করা শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিতে হবে। পাস করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তো উপাচার্যের নেই, বিশ্ববিদ্যালয়েরও নেই। একাডেমিক কাউন্সিলে বৈঠক করে ফেল শিক্ষার্থীদের আগামী নভেম্বরে বিশেষ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেহেতু অনেক শিক্ষার্থী ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করেছে। এ ছাড়া কভিডের কারণে অনেক পরিবার আর্থিক সংকটে রয়েছে। সেহেতু বিশেষ পরীক্ষার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কাছে কোনো ফি নেবে না। কিন্তু কলেজগুলো ফি নিলে তা-ও নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোয় শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে বলুন।

উপাচার্য : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সারা দেশে ২ হাজার ২৬০টি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর বিপরীতে উচ্চশিক্ষা স্তরে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। যদিও এদের মধ্যে বেশকিছু শিক্ষক এমপিওভুক্ত বা সরকারের বেতনভুক নন। বেতন-ভাতা না পেয়ে এ অংশের শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। শিক্ষক সংকট শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট তুলনামূলক বেশি। আর শিক্ষক তো এক দিনে তৈরি করা সম্ভব নয়। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও সময় লাগে। আশা করি এ সংকটাবস্থা কমে আসবে। সরকার এ ব্যাপারে কাজ করছে।

 

শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ ব্যাপারে বলুন।

উপাচার্য : আসলে প্রতিটি পেশায় যারা কাজ করেন তাদের সবার প্রশিক্ষণ রয়েছে। শিক্ষকতা একমাত্র পেশা যেখানে আজ যোগদান করে কালই তারা পড়াতে ক্লাসে যান। যোগদানের আগে শিক্ষকের প্রশিক্ষণের কোনো আয়োজন করা হয় না। আমাদের এ বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে যে একজন শিক্ষককে কটি প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছি। ভালো প্রশিক্ষণ ছাড়া তো ভালো ফল পাওয়ার কথা নয়। যে কোনো পেশার উৎকর্ষ সাধনের জন্য প্রশিক্ষণ, দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা অপরিহার্য। দেশের অনেক পেশার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অনেক ব্যবস্থা থাকে, অর্থায়ন থাকে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষকদের এ সুযোগ একেবারে কম বা নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি জনবল কাঠামোও বাড়ানো দরকার।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে কোথায় দেখতে চান?

উপাচার্য : উপাচার্য হিসেবে মেয়াদ চার বছর। নির্দিষ্ট এ সময়ে খুব বেশি কিছু করতে পারব, এমন বলব না। আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি শিক্ষার মান উন্নত করতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে কোনো না কোনো বর্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পড়াচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত প্রজন্ম তৈরি করছি, যে কালচার অন্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই বললেই চলে। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের প্রত্যাশা থাকে। তাই আমরা কিছু শর্ট কোর্স চালু করছি, যা শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারের যোগ্য করে তুলতে সহায়তা করবে। কোর্স চালুর ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রয়োজন হবে, শিক্ষকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সহায়তার প্রত্যাশা করছি। শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি যদি ই-লাইব্রেরির এক্সেস দিতে পারি, তবে শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ের জন্য করোনাকালে সাড়ে ৭ হাজার লেকচার ইউটিউবে আপলোড করেছি। এর প্রচার কম হয়েছে। আশা করি শিগগিরই সারা দেশের শিক্ষার্থীরা এর সুবিধা ভোগ করবে। উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য জ্ঞানভিত্তিক সমাজ সৃষ্টি। আমরা এ উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করতে চাই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অধিকতর মানসম্মত পাঠদানের স্থান হিসেবে পরিণত করতে চাই।

 

বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী?

উপাচার্য : প্রথমবারের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন কলেজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো কলেজ ৫ থেকে ৬ কোটি টাকাও বরাদ্দ পেয়েছে। এর আওতায় শিক্ষকরা বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করছেন, বিদেশের শিক্ষকরা আমাদের দেশে ক্লাস নিয়েছেন, যেটি করোনার কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এটি ফের অনলাইনে চালুর চিন্তা করছি। ১২২টি কলেজে এ প্রজেক্টের আওতায় ‘ইনস্টিটিউশনাল গ্রান্ট’ দিয়েছি। কলেজের অবস্থা অনুযায়ী এ অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে নিতে সরকার নানা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু সরকার আইন করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ নেওয়ার নিয়ম করেছে। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ৭০০ কোটি টাকা সরকারের ফান্ডে জমা দিয়েছি। আমার মনে হয় এ বিষয়টি আরও বিবেচনা করা উচিত। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী যে আমানত রয়েছে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। কোনো বন্দর বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে সরকারের টাকা নেওয়া আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে টাকা নেওয়া এক নয়। এটি নিয়ে সরকারের আরও ভাবা দরকার বলে মনে করি। এ ফান্ডের টাকা দিয়ে আমরা আরও সৃজনশীল কাজ করতে চাই। সরকার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে বলে মনে করি।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম কতটা যুগোপযোগী?

উপাচার্য : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় খুবই যুগোপযোগী। নিয়মিতই এ কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কারিকুলাম আপলোড করা হয়েছে। কেউ চাইলে দেখে নিতে পারেন। হতে পারে যে বিদ্যমান কারিকুলাম অনুযায়ী হয়তো সব শিক্ষক সমানভাবে পারদর্শী নন। কিন্তু কারিকুলাম নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

 

সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

উপাচার্য : বাংলাদেশ প্রতিদিন ও আপনাকে ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর