মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

জন্ম হোক নতুন নতুন গবেষণা ভাবনার

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

জন্ম হোক নতুন নতুন গবেষণা ভাবনার

মানুষ যদি বিজ্ঞানী বা গবেষক হতে চায় তবে তাকে প্রকৃতির কাছে যেতে হবে। প্রকৃতি মানুষকে যা দিতে পারে তা আর অন্য কিছু দিতে পারে না। প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে তার নিজের একটা পৃথিবী তৈরি করতে হবে, যা উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও বহুমাত্রিক চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কল্পনা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। এর বাইরে সময়েরও একটা প্রভাব রয়েছে। সময়ের এ প্রভাব মানুষকে অতীত থেকে টানতে টানতে বর্তমানে নিয়ে আসে। তারপর অদৃশ্য সুতোর ওপর ভর করে মানুষকে ভবিষ্যতে নিয়ে যায়। এমন বিষয়টিতে অনেকে বিস্মিত হতে পারেন। কারণ মানুষের গতানুগতিক ধারণা হচ্ছে গবেষণা করতে গেলে আধুনিক প্রযুক্তিগত ধারণা দ্বারা পুষ্ট বড় বড় মানের ল্যাবরেটরি দরকার। এমন ধারণা অবাস্তব নয়, গবেষণাকে বাস্তবে সফল করতে হলে ল্যাবরেটরির বিকল্প নেই। তবে গবেষণা করার আগে গবেষণার নতুন নতুন ধারণার জন্ম দেওয়াই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গবেষণা ধারণা থেকেই গবেষণার জন্ম হয়। যে ধারণা যতটা নতুন সে গবেষণা ততটা মৌলিক হয়। গবেষণাকে সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে নতুন নতুন ধারণা তৈরির সক্ষমতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন ও সৃজনশীল ধারণা তৈরির বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। তবে এ নতুন ধারণাগুলো যাতে চুরি হয়ে না যায় সে বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ ধারণা বা আইডিয়া তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার বাস্তবায়ন পর্যন্ত পৌঁছানো যাচ্ছে না। আবার সেগুলোকে পুরস্কৃত করা হলেও তার মালিকানাস্বত্ব যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই কোনো একটি নতুন ধারণা বা আইডিয়াকে পুরস্কৃত করার সঙ্গে সঙ্গে এর মালিকানাস্বত্বের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদানের চেয়ে মালিকানাস্বত্ব নিশ্চিত করাই অধিক বাস্তবসম্মত। মালিকানাস্বত্ব হচ্ছে এমন একটি আইনগত অধিকার যিনি নতুন ধারণা তৈরি করবেন তার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ এ নতুন ধারণাটি ব্যবহার করতে পারবে না।

গবেষণা চুরির ভয় নিউটনের মতো বড় বড় বিজ্ঞানীকেও প্রভাবিত করেছিল। মহাকর্ষ সূত্র চুরি হয়ে যেতে পারে বলে তা আবিষ্কারের পরও নিউটন তা বহুদিন গোপন রেখেছিলেন। ক্যালকুলাস আবিষ্কারের পরও চুরির ভয়ে তা অনেকদিন প্রকাশ করেননি নিউটন। তবে ক্যালকুলাস আবিষ্কার নিয়ে নিউটন ও বিখ্যাত গণিতবিদ লিবনিজের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। কারণ নিউটন ও লিবনিজ প্রায় একই সময়ে স্বতন্ত্রভাবে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন। নিউটন তাঁর ক্যালকুলাসের ধারণা লিবনিজ চুরি করে নিজের নাম চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আনলেন। অন্যদিকে লিবনিজ ক্যালকুলাসের তাঁর ধারণা নিউটন চুরি করেছেন বলে অভিযোগ আনলেন। গবেষণা চুরির ভয় থেকে দুজনের মধ্যে এমন আশঙ্কা তৈরি হলেও এর শেষটা ভালোই হয়েছে। লিবনিজ তাঁর মতো করে ক্যালকুলাস ধারণা প্রমাণ করলেন। ঠিক একইভাবে নিউটন তাঁর মতো করে ক্যালকুলাসের ধারণা প্রমাণ করলেন। শেষে প্রমাণিত হলো কেউ কারও ধারণা চুরি করেননি। বরং দুই মাথা থেকে একই সময়ে একই ধরনের ধারণার জন্ম হতে পারে এমন একটা অদ্ভুত তত্ত্ব আবিষ্কার হলো। হয়তো এমনটা মনস্তত্ত্ব গবেষণার একটা দৃষ্টান্ত, যেখান থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানকেও আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করলেও মার্কনি হয়ে যান এর আবিষ্কর্তা। এর রহস্য নিয়ে এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে বিতর্ক থেকে গেছে। এ নিয়ে গবেষণাও চলছে। সে যা-ই হোক, প্রকৃতি আমাদের গবেষক বানায়। একটা সবুজ বৃক্ষের সামনে দাঁড়ানো মানে বিজ্ঞান গবেষণার অসীম সম্ভাবনার সামনে দাঁড়ানো। সেটা তখনই ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে যখন মানুষ বৃক্ষের সঙ্গে তার নিবিড় বন্ধন গড়তে পারবে। বৃক্ষকে নিয়ে যখন মানুষ তার কল্পনার শাখা-প্রশাখা ছড়াতে পারবে। জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্বের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি তা প্রমাণও করেছেন। উদ্ভিদও যে তাপ, শীত, আলো, শব্দ ও অন্যান্য অনেক বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়া দিতে পারে, সেটি তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তার আবিষ্কৃত ক্রিস্কোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে বাহ্যিক প্রভাবকের প্রভাবে উদ্ভিদের উদ্দীপনাকে তিনি দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। উদ্ভিদ নিয়ে অন্য ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি আরেকজন গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। তার নাম লুথার বারব্যাঙ্ক। তিনি আমেরিকান উদ্ভিদবিদ, উদ্যানতত্ত্ববিদ এবং কৃষিবিজ্ঞানের পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি তাঁর ৫৫ বছরের কর্মজীবনে ৮০০-এর বেশি স্ট্রেন ও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের বিকাশ করেছেন। বারব্যাঙ্কের বিচিত্র সৃষ্টিতে ফল, ফুল, শস্য, ঘাস, শাকসবজিসহ নানা ধরনের উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাগলের মতো ভালোবাসতেন উদ্ভিদ। উদ্ভিদ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে তাঁকে ক্যাকটাস যেন প্রশ্নবিদ্ধ করল। খুব ভোরে বাগানে পায়চারি করার সময় তাঁর মনে প্রশ্ন জাগল ক্যাকটাসে কেন এত কাঁটা?

এর উত্তর তিনি মনে মনে খুঁজতে লাগলেন। ক্যাকটাস সাধারণত মরুভূমি এলাকায় বেশি হয়। মরুভূমির প্রতিকূল ও রুক্ষ পরিবেশে ক্যাকটাসকে টিকে থাকতে লড়াই করতে হয়। নিজের শরীরে কাঁটা থাকে বলে সে নিজের আত্মরক্ষার যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে পারে। বারব্যাঙ্ক যে বাগানে গবেষণা করতেন সেটা মরুভূমিতে ছিল না। অন্তর দিয়ে তিনি কাঁটা গজিয়ে ওঠার বিষয়টি বারবার ভাবতে লাগলেন। এমন একটা অনুকূল পরিবেশে কেন ক্যাকটাস ভয় পেয়ে তার শরীর কাঁটায় ভরিয়ে ফেলবে, তা তিনি কূলকিনারা করতে পারলেন না।

বাগানের অনেক ক্যাকটাসের মধ্য থেকে তিনি একটি ক্যাকটাস পৃথক করে ফেললেন। প্রতিদিন ভোরে ক্যাকটাসটির সান্নিধ্যে আসেন। হাতের আলতো ছোঁয়ায় সেটিকে স্পর্শ করে বলতে থাকেন : তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি খুব নিরাপদ একটা জায়গায় আছ, কেউ তোমাকে কখনো আঘাত করতে পারবে না। এ যেন মানুষের সঙ্গে উদ্ভিদের প্রেম; মনের টান। মানুষ ভাবে, লোকটা বোধহয় পাগল হয়ে গেছে; কিন্তু লুথার থেমে যাননি। প্রতিদিন তিনি ক্যাকটাসটিকে অভয় দেন, ভালোবাসার মন্ত্র শোনান, তাকে সাহস জোগান। অদ্ভুত আর অভূতপূর্ব এক ঘটনা ঘটল একদিন।

একদিন ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখলেন ক্যাকটাস থেকে নতুন পাতা বেরিয়ে এসেছে, সেই পাতায় কাঁটা থাকার কথা থাকলেও তা নেই। লুথার তার ডায়েরির পাতায় লিখলেন: ‘ভালোবাসা সবাইকে নাড়া দেয়। এ ভালোবাসার ডাকে উদ্ভিদও সাড়া দেয়।’ উদ্ভিদকে নিয়ে লুথার বারব্যাঙ্ক ও জগদীশচন্দ্র বসুর দৃষ্টিভঙ্গিতে মিলের মধ্যেও ভিন্নতা দেখা যায়। একজন উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধান দিয়েছেন, আরেকজন ভালোবাসা ও ভরসা যে উদ্ভিদকে বদলে দিতে পারে তা আমাদের শিখিয়েছেন। হরিপদ কাপালী না পড়েছেন বড় বড় লেখকের বই, না জানেন বিজ্ঞান। অথচ অক্ষরজ্ঞানহীন দরিদ্র এই মানুষটি ‘হরিধান’ নামে নতুন জাতের ধানের উদ্ভাবক। নতুন সৃষ্টির জন্য শিক্ষিত হওয়া লাগে না, একটার পর একটা কাগজ উল্টিয়ে বই পড়ার প্রয়োজন হয় না, খুব দামি ল্যাবরেটরির প্রয়োজন নেই, ইন্টারনেটের তথ্যভান্ডারেও মূল্য নেই যদি নিজের কাজের গভীরে ঢুকে অচেনাকে চেনার মতো একটা মন থাকে। সেই মনে হরিপদ কাপালীর মতো একজন সাধারণ মানুষ বাস করলেই চলে। প্রকৃতিতে বাস করা একটা তুচ্ছ প্রাণী টিকটিকি। মানুষের চোখে এর কীইবা দাম আছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকীর ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে- টিকটিকিও স্বপ্ন দেখে। ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা টিকটিকির মতো সরীসৃপ প্রাণীর হৃৎস্পন্দন, চোখের মণির নড়াচড়াসহ আচরণগত অন্য বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। টিকটিকির লেজ খসে যায়, আবার নতুন করে জন্ম নেয়। লেজের ভিতরের কোষগুলো বিশেষ এক রাসায়নিক উৎপাদন করার ফলেই এমনটা ঘটে। টিকটিকির ভাগ্য ভালো মানুষ তাকে নিয়ে গবেষণা করেছে। আর মানুষের ভাগ্য ভালো টিকটিকির মতো একটি প্রাণীর জন্ম হয়েছে, যেটি মানুষকে গবেষণার ধারণা দ্বারা সমৃদ্ধ করছে। টিকটিকি প্রাচীর বেয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন করে চলতে পারে। মানুষও তেমনটা পারবে যদি টিকটিকির পায়ের প্রযুক্তি মানুষের পায়ের মধ্যে কৃত্রিমভাবে যুক্ত করা যায়। এরই মধ্যে টিকটিকির আদলে মানুষ রোবট তৈরি করেছে। গবেষকরা ধারণা করছেন, রোবটিক টিকটিকি ভবিষ্যতে দুর্যোগ পর্যবেক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারবে। টিকটিকি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকরা জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করেছেন।

প্রকৃতির বুকে অনাদরে পড়ে থাকা একটা অসহায় প্রাণী মাকড়সা। এ মাকড়সাকে কেন্দ্র করে কাল্পনিক কমিক চরিত্রের জন্ম দিয়েছেন মার্ভেল কমিকসের প্রধান সম্পাদক, লেখক স্ট্যান লি ও কার্টুনিস্ট স্টিভ ডিটকো। একটা মাকড়সা এভাবে কোনো কোনো মানুষের সৃষ্টিশীল চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শিল্পের রূপ পেল। শিল্পও তো একটা কল্পনা, একটা কল্পনাকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা। শিল্পের কল্পনা ভাবাল বিজ্ঞানের গবেষণাকে। মাকড়সা এভাবে হয়ে গেল গবেষণার উপাদান। মাকড়সা জাল বোনে। এ জালের সুতা নিয়ে সারা পৃথিবীতে গবেষণা চলছে। এ জালের সুতা খুব শক্ত ও প্রসারণযোগ্য। গবেষকরা একে ইস্পাতের সঙ্গে তুলনা করে তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে বলছেন, এটি গাড়ির টায়ারে ব্যবহৃত সিনথেটিক ফাইবার কেভলারের চেয়ে শক্ত আর এর ঘনত্ব সুতি বা নাইলনের চেয়ে কম। খুব মৌলিক একটা ধারণা। যে ধারণা বলছে আগামী পৃথিবী বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে মাকড়সার জাল অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখবে। তবে মানুষ কি পারবে মাকড়সার মতো জাল বুনে বুনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সহজে যেতে। এমনটাই ধারণা, যা একদিন স্বপ্ন থাকে। তারপর স্বপ্নের অচলায়তন ভেঙে ভেঙে তা একদিন বাস্তবতা হয়ে ওঠে।

প্রকৃতি এমন করে মানুষের মধ্যে নতুন নতুন ধারণা তৈরি করে দেয়। প্রকৃতি ছাড়াও মানুষকে নতুন নতুন ধারণা তৈরি করতে আধুনিক প্রযুক্তিকে দেখতে হবে, জানতে হবে। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধসমূহ পড়তে হবে। দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করতে হবে। মানুষ যত ভ্রমণ করবে মানুষের মন তত সংবেদনশীল, উদার ও সৃষ্টিশীল হবে। তখন সে মন নতুন ধারণা তৈরিতে সক্ষম হয়ে উঠবে। সেটা যে বিজ্ঞানের হবে তা নয়, বিজ্ঞান ছাড়িয়ে তা অর্থনীতি, শিল্পকলা, সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, আত্মসমীক্ষণ যে কোনো বিষয়েই হতে পারে।

মানুষের চারপাশে অনেক জানালা থাকে। মানুষের চোখ সে খোলা জানালা অতিক্রম করে দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে উঠুক। প্রকৃতি, সময় আর প্রযুক্তির দৃষ্টিভঙ্গি বাড়তে বাড়তে আকাশকে অতিক্রম করুক। মাটির অতল তলকে অতিক্রম করুক। মানুষ সব নিয়ে ভাবুক, হোক তা ভালো, হোক তা মন্দ। ভাবতে ভাবতে মানুষ জীবনবোধের মন্ত্র দ্বারা তাড়িত হয়ে নতুন নতুন ধারণার জন্ম দিক। তারপর হোক গবেষণার মহাকালের মহাযাত্রা। যে যাত্রার শুরু আছে শেষ নেই।

লেখক :  ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।

Email : [email protected]

সর্বশেষ খবর