মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

অসুস্থতা মুমিনের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়

আবদুল্লাহ আল-মামুন আশরাফী

সুস্থতা আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ নিয়ামতগুলোর অন্যতম। সুস্থ ব্যক্তি দীন-দুনিয়াবি সব কাজেই প্রশান্তি লাভ করে। সব কাজেই সে একাগ্রতা বজায় রাখতে পারে। তাই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় আল্লাহর কাছে সুস্থতার নিয়ামত চাইতেন। তিনি উম্মতকে সুস্থতার নিয়ামতের মূল্যায়ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা অসুস্থতা আসার আগেই সুস্থতার মূল্যায়ন কর।’ মুসতাদরাকে হাকেম।

অনাকাক্সিক্ষত হওয়া সত্ত্বেও আমরা মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমাদের চারপাশে কত মানুষ অসুস্থতায় ভোগে। সম্প্রতি ডেঙ্গু জ্বরসহ নানা অসুস্থতায় অনেকেই বিপর্যস্ত। অসুস্থতা কেবল গুনাহের পরিণতিতেই আসে এমন ধারণা অমূলক। অসুস্থতা আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টির প্রমাণ নয়। রসুল (সা.)-এর মতো পূত-পবিত্র মানুষও মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। অসুস্থতা মুমিনের জীবনে সমূহ কল্যাণ বয়ে আনে। অসুস্থতা মুমিনের জীবনকে ধুয়েমুছে আরও পবিত্র করে দেয়। অসুস্থতাসহ অনেক বিপদাপদ মুমিনের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার নিদর্শন বহন করে। হজরত মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যার ব্যাপারে কল্যাণ চান তাকে বিপদাপদ দান করেন।’ বুখারি।

অসুস্থতা বিপদাপদ মুমিনের গুনাহের কাফফারা। মুমিন অসুস্থ হলে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। মহানবী হজরত (সা.) বলেছেন, ‘সত্যের নিকটবর্তী থাক এবং সরল-সোজা পথ অবলম্বন কর। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোনো কাঁটা বেঁধে বা সে কোনো বিপদে পতিত হয় সবকিছুই তার গুনাহর কাফফারা হয়।’ তিরমিজি।

অসুস্থতা একজন মুমিনকে পাক-পবিত্র বানিয়ে দেয়। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হলে আল্লাহ তাকে (গুনাহ থেকে) এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করেন, যেমন হাপড় লোহাকে পরিচ্ছন্ন করে।’ আদাবুল মুফরাদ।

অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ থাকাকালে যেসব নেক আমল, ইবাদত-বন্দেগি করত, অসুস্থ হওয়ার পর আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে সুস্থকালীন ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব দান করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হলে সে অবস্থায় সে তার সুস্থাবস্থায় যেরূপ আমল করত সেরূপ সওয়াব তার জন্য লেখা হয়।’ মুসনাদে আহমাদ।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন; রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে কোনো মুসলমানকে আল্লাহ যখন দৈহিকভাবে পরীক্ষায় ফেলেন, তার সুস্থাবস্থায় সে যেরূপ আমল করত ঠিক তদ্রƒপ সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হতে থাকে, যতক্ষণ সে রোগাক্রান্ত থাকে। এরপর যদি তিনি তাকে রোগমুক্ত করেন তবে তাকে (গুনাহ থেকে) ধুয়ে (পরিচ্ছন্ন করে) দেন, আর যদি তাকে মৃত্যু দান করেন তবে তাকে ক্ষমা করে দেন।’ মুসনাদে আহমাদ।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মাণ হয়, অসুস্থতা সাধারণত কোনো আজাব-গজবের কারণ নয়। বরং অসুস্থতা মুমিনের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়।

 

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম, টঙ্গী, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর